Shebaru

মহাবিশ্ব কত বড়? ও এর সৃষ্টি রহস্য কি?: প্রথম পর্ব

মহাবিশ্ব কত বড়

মহাবিশ্ব কত বড়? ও এর সৃষ্টি রহস্য কি?: প্রথম পর্ব

এই তো জুলাই মাসের (২০২২) মাঝামাঝি পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অবহিত হই যে, অত্যাধুনিক শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কর্তৃক
তোলা ১ হাজার ৩৫০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের বিরল রঙিন ছবি প্রকাশ করে বিশ্বে হইচই ফেলেছে। যাতে দেখানো হয়েছে মহাবিশ্ব কত বড়
আরও নাকি ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগের ছবি সহসা প্রকাশ করবে, যা মহাবিশ্বের সৃষ্টির আদি বিন্দুর কাছাকাছি।

\"\"

শুধু তাই নয়, এগুলোর গবেষনালবদ্ধ নিয়ামকের ফলশ্রুতিতে নাকি অতীতের গোড়ার সবকিছু দেখা সম্ভব হবে; যেমন প্রথম মানব মানবী (আদম হাওয়া),
শ্রীকৃষ্ণ, সক্রেটিস, এরিস্টেটল, গৌতববুদ্ধ, নবী করীম (সঃ) প্রমুখসহ আদিম সকল জীব ও বস্তুতাদি। তখন বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও লেখক হিসেবে উৎসুক
মনে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র, ইন্টারনেট থেকে তথ্যাদি ও বই জোগাড় করে লিখতে সচেষ্ট হই। বস্তুতঃ এই অবনিতে মনুষ্যজীবের ঊষালগ্ন থেকেই সৃষ্টিকে ঘিরে
চিন্তা ভাবনার শেষ নেই। বলতে গেলে দিবানিশির সর্বসময় উদ্ভুত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদ সুরজ, গ্রহ নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহিরিকা, ইত্যাদি সম্বলিত
আকাশের দিকে চেয়ে সৃষ্টির আদি রহস্য জানার প্রয়াস চলে আসছে। এদিকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো শত প্রশ্নের আড়ালে জানার অদম্য ইচ্ছা।
শুধু তাই নয়, এই ইচ্ছা প্রশমিত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টার এতটুকু কমতি নেই। আর আদি থেকেই জ্ঞানী গুণীরা বিশ্বাস করতো যে খালি চোখে আকাশে
যতখানি চোখে দেখা যায়, তার চেয়ে অনেক কিছু আছে, যা রহস্যবৃত্ত। এ প্রেক্ষাপটে যাঁর কথা উঠে আসে, তিনি হলেন হ্যান্স লিপাশে।

তিনিই প্রথমে দূর আকাশে পর্যবেক্ষণের জন্যে ১৬০৮ সালে একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করেন। কিন্তু এটি তেমন কার্যকরী ছিল না।
এরপর যাঁর কথা বিজ্ঞান জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, তিনি হলেন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোর্তিবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলেই,
যিনি ১৬০৯ সালে আকাশে দূরবর্তী তারকারাজি ও গ্রহ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কার্যকরী দূরবীন তৈরি করেন। অবশ্য তিনি এই যন্ত্রের ধারণা লাভ করেন
এক চশমা নির্মাতার কাছ থেকে। আর গ্যালিলিও তাঁর এই দূরবীনের মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ ও শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেন।
ঠিক এর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার এমন একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন, যা অনেকটা জ্যোর্তিবৈজ্ঞানিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ন্যায় ছিল।
যাহোক, কালের ব্যবধানে দূর আকাশে পর্যবেক্ষণের নিমিত্ত অধিকতর কার্যকারিতাসহ দূরবীক্ষণ যন্ত্র একের পর এক আবিস্কার হতে থাকে।
আর দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ধারাবাহিকতার বিষয়টি পুরোপুরি আলোকপাত করার আগে সংগত কারণেই সবার বোধগম্যতার জন্য দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে কিছুটা বলা আব্যশক বলে মনে করি। আসলে দূরে দেখা বা বীক্ষণের জন্য এই যন্ত্র বিধায় এটিকে দূরবীক্ষণ বলা হয়ে থাকে। এখানে ঞবষব মানে দূর এর অর্থ হলো পর্যবেক্ষণের পরিসর বা ব্যপ্তি।
মূলত এটি দূরবর্তী বস্তু দর্শনের জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দূরবর্তী বস্তু থেকে নির্গত বিকিরণ সংগ্রহ, পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করার কাজে ব্যবহৃত।
আর সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করা হয় লেন্স এবং দর্পণের মাধ্যমে। এতে দূরের বস্তু আরও উজ্জ্বলভাবে এবং স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায়।
অবশ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলতে এমন কৌশলকে (উবারপব) বুঝায়, যার সাহায্য সীমিত দিক থেকে আগত তড়িচ্চুম্বক
বিকিরণ বা কণা বিকিরণ হিসেবে আগত সকল বিকিরণ সংগ্রহপূর্বক অবলোকন করা যায়।

আরও পড়ুন: আল্লাহর সৃষ্টি কত সুন্দর মানবদেহ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ

এবার আসুন আবার আগের কথায় ফিরে যাই। এর মধ্যে প্রায় সোয়া শত বছর পার হয়ে যায়। ১৭৩৩ সালে জেমস গ্রেগরি একটি অ্যাক্রোমেটিক
ডাবলেট অবজেক্টিভ তৈরি করেন, যার মাধ্যমে প্রতিসরণ দূরবীনের প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়। এদিকে তিনিই প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন।
অবশ্য নিউটনও একটি প্রতিফলন দূরবীন তৈরি করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে নিউটন উল্লেখ করেন যে, প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রে, যেখানে
অবজেক্টিভের স্থানে লেন্স ব্যবহার করা হয়, সেখানেই দর্পণ ব্যবহার করা সম্ভব। কারণ দর্পণে ঠিক একইভাবে সকল বর্ণের আলো প্রতিফলিত হয়।
যাহোক, দূরবীন বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র সাধারণত দু’প্রকারের যেমন- ১) মহাকাশ দেখার জন্যে দূরবীক্ষণ এবং ২) ভূমিতে ব্যবহার্য দু’চোখে লাগাবার দুনলা ছোট দূরবীন, তথা বাইনোকুলার। এক্ষেত্রে অত্র প্রবন্ধের অন্যতম পরিসর হলো মহাকাশ দেখার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। বর্তমানে আমরা দু’হাজার বাইশ সালে এসে দাঁড়িয়ে আছি।
এর মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় অত্যাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অবদান ভুলবার নয়। কেননা মহাকাশে সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটনে এর মাধ্যমে এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছে যে,
সাধরণ মানুষ তো দূরে থাকে, ঝানু ঝানু বিজ্ঞানীরাই হতবাক হয়ে পড়েছেন। যে মহাবিশ্ব কত বড়?

চলবে…

লেখক: মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব
বিশিষ্ট গবেষক, অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।
Email: abdulbaki85@yahoo.com, 01813333335, 01670451475, 02-48119024

PLEASE SHARE THIS

আমাদেরকে আনুসরন করুন

SOCIAl MEDIA

নিউজলেটার

আমাদের বিভিন্ন প্যাকেজ আপডেট, অফার কিংবা নিউজ আপনার ইমেইলে সবার আগে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।

Scroll to Top