ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, মেশিন ও মেশিনের দাম জানার আগে জানতে হবে এটি কি? ও কিভাবে ব্যবহার করবেন। কারা ব্যবহার করতে পারবেন?
উত্তরে বলা যায়, এটি একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর সব কথা শুনে-বুঝে চিকিৎসা দেন।
এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর সঠিক রোগ, আঘাত বা অঙ্গ বিকৃতির ধরন নির্নয় করেন।
এ ধরণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল মেথড যেমন ম্যানুয়াল টেকনিক, তাপ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কি ও মেশিন কোথায় পাবেন?
ফিজিও (শারিরীক) এবং থেরাপি (চিকিৎসা) শব্দ দুটি মিলে ফিজিওথেরাপি বা শারিরীক চিকিৎসার সৃস্টি।
ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অন্যতম এবং একটি অপরিহার্য শাখা। শুধুমাত্র ঔষধ সব রোগের পরিপুর্ণ সুস্থতা দিতে পারে না।
বিশেষ করে বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা থেকে যে সব রোগের সৃষ্টি হয়, তার পরিপুর্ণ সুস্থতা লাভের উপায় ফিজিওথেরাপি।
ইলেক্ট্রো-হেল্থ বা ব্যথা নিরাময়ের সহজ ও উত্তম ডিভাইস:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাইবিটের গবেষকদের তৈরি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত Pulsed Electro-Magnetic Field (PEMF) পদ্ধতি ।
এটি প্রয়োগের যন্ত্রের নাম Electro-Health।। এটি ব্যবহার করে ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, কোমর এবং হাড়ের জয়েন্টের ব্যথার চিকিৎসা ঘরে বসেই করুন।
বাইবিট লিমিটেড এর \’ইলেক্ট্রো-হেল্থ\’ ডিভাইসটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মুক্ত PEMF (Pulsed Electro Magnetic Field) প্রযুক্তি ।
PEMF প্রযুক্তি ভিত্তিক ডিভাইস উন্নত দেশগুলোতে ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে ৬০ দশক ধরে।
বাংলাদেশে বাইবিট প্রথম এ প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যথা উপশমের ডিভাইস বাজারজাত করছে।
এন্টি-সোয়েট বা ঘাম প্রতিরোধক যন্ত্র:
বাইবিট লিমিটেডের আয়ন্টোফোরেসিস প্রযুক্তি ভিত্তিক \’এন্টি-সোয়েট\’ ডিভাইস; যা হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর।
বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে বাজারজাত হয়ে আসছে। দেশের বাইরে এ যন্ত্রের মূল্য অনেক বেশি হলেও আমাদের এ ডিভাইসটির মূল্য ৮০০০ টাকা।
যেটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটু বেশি মনে হতে পারে। ডিভাইসটি ব্যবহার করেছে এমন কাস্টমারদের ফিটব্যাক খুবই ভালো।
কেন এই ফিজিওথেরাপি নিবেন ?
আমরা যত আধুনিক প্রযুক্তি দিকে এগিয়ে চলছি তত বেশি পরিমান স্বাস্থ্যগত সমস্যাতে আক্রান্ত হচ্ছি।
দেখা গেছে শরীরের বিভিন্ন রোগ শুধুমাত্র ঔষধ দিয়ে নিরাময় করা সম্ভব হয় না।
বিশেষ করে যে সব রোগের উৎস বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা, সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম।
যেমন : বাত, কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথা, হাড় ক্ষয়জনিত রোগ, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক,
প্যারালাইসিস, মুখ বেঁকে যাওয়া, সেরিব্রাল পালসি, স্পোর্টস ইনজুুরি ইত্যাদি। তাহলে এসব রোগ থেকে পরিপুর্ণ সুস্থতা লাভের উপায় কী? এ ক্ষেত্রেই চলে আসে ফিজিওথেরাপির কথা। ফিজিওথেরাপি এই সব রোগ থেকে মানুষকে পুরু পুরি মুক্তি না দিতে পারলেও উপশম করে।
কখন ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়?
এ দেশে বাত-ব্যাথা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায় না। ফলে এ সংক্রান্ত সমস্যা বেড়েই চলছে। এ কারনে দেশের একটা বড়
সংখ্যক লোক উৎপাদন কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন। বাত-ব্যাথা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে প্রয়োজন রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে
যথাযথ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিশেষ করে বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীদের সমস্যা ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
এবার জেনে নেওয়া যাক কাদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
স্ট্রোক, আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় অনেকে স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। এ ধরনের সমস্যা আক্রান্ত রোগীর অনেক সময় শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। ফলে তাকে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায় । রোগীর শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা
এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা তখন চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে একমাত্র ফিজিওথেরাপী মুক্তি দিতে পারে।
মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা
অনেক সময় দেখা যায় ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করে না বা কাজ করতে বেশ সময় নেয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন পড়ে । এ ছাড়া নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস;
অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় এই চিকিৎসা বেশ কাজে দেয় । পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি ডেইয়া হয়।
পোড়া রোগীদের জন্য
বাংলাদেশে প্রচুর অগ্নিকান্ড ঘটে ফলে পোড়া রোগীর সংখ্যাটা নেহায়েত ছোট নয়। পোড়া রোগীর দীর্ঘ দিন ধরে মাংসপেশি সংকোচিত হয়ে থাকে।
এ অবস্থায় অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণে আশংকায় থাকেন। যদি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয় তাহলে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণে ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়।
শিশুরোগের ক্ষেত্রে
দেশে বা বিশ্বের নানা দেশে কিছু শিশু জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়।
এ সকল শিশুদের ফেজিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়াও দেখা যায় অনেক শিশুর ড়, হাত, পা বেঁকে যায়।
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেও ফিজিও থেরাপির বিকল্প নেই।
হৃদ্রোগ ও ফুসফুসের সমস্যায়
বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ফিজিওথেরপির প্রয়োজন পড়ে।
তাছাড়াও হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।
হাটু ব্যথার
হাটু ব্যথা অনেক কারণে হয়, তবে সবচেয়ে বেশি অস্টিওআর্থাইটিস জনিত হাটু ব্যথা।
অস্টিওআর্থাইটিস জনিত হাটু ব্যথা নিয়ে বেশির ভাগ প্রশ্নই এমন, অনেক দিন ধরে আমাদের বাবা মা, নিকট আত্নীয় হাটু ব্যথায় ভুগতেছে
বা আমরা নিজেরাই হাঁটু ব্যথায় ভুগতেছি কিন্ত ভাল হচ্ছে না ।
চলাফেরায় সমস্যা, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা সমস্যা, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সমস্যা।
অনেকেই বিছানায় বন্দি । এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক থেরাপি।
শল্যচিকিৎসায়
শল্য চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়।
তাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি ভাল কাজ দেয়।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা
বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও মাংসপেশিতে ক্ষয়ের কারণে শেষ বয়সে অনেকে চলাচল করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
বার্ধক্যজনিত মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
এ ধরণের চিকিৎসা হারবাল চিকিৎসার মতই নিরাপদ। আজকাল এ বিষয়ে মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। অবশ্য অনেই এখনও ঝাড়-ফুক নির্ভর।
তবে কোনআনিক দুআ হলে ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে তা জায়েজ আছে। আল্লাহ চাইলে যে কোন রোগ তো মুহুর্তেই ভালো করেন।
যেহেতু চিকিৎগ্রহণ করা সুন্নত। তাই দুআর পাশা পাশি ফিজিও থেরাপিও মত আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে।
লেখক: আবু জাফর রাজু, ভিসা কনসালটেন্ট ( ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর)।
লেখাটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে: ৩০-০১-২০২১
বিজ্ঞপ্তি: লেখাটি হুবহু কপি না করার জন্য অনুরোধ করছি। সাহায্যের জন্য বা রেফারেন্স হিসেবে অংশ বিশেষ ব্যবহার করতে পারেন।
তবে এই পোস্টের লিংক প্রদান করলে তা জায়েজ হবে। লেখকের কষ্টের মূল্য প্রদানে আপনার বিবেকের প্রতি আরজি রইল।