কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা ভালোমানের হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিন দিন কানাডার প্রতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়তে আসেন এবং এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সহজ নিয়ম নীতি, স্কলারশিপ ও ভিসা সহজ করে দেওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এখন বেশীরভাগ শিক্ষার্থী কানাডাকে বেছে নিচ্ছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কানাডায় মাস্টার্স প্রোগ্রাম এর প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।
বর্তমানে কানাডার সরকার তাদের দেশের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুবিধা, স্কলারশিপ পাওয়া ও ভিসা পাওয়াকে সহজ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে কানাডা। কানাডায় মাস্টার্স প্র্রোগ্রামে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা কি? কীভাবে আবেদন করবেন? এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়াস পাব।
কানাডায় মাস্টার্স
অন্যান্য দেশের থেকে কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা একটু ব্যয়বহুল। কানাডার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট নিচ্ছে এমন শিক্ষার্থীদের খরচ বেড়েছে প্রায় আগের চেয়ে ৭.৬% এবং এই সংখ্যাটা প্রতিবছর বাড়তি। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের বার্ষিক টিউশন ফি বাংলাদেশী টাকায় প্রায়ই ২৩ লাখ টাকা।
তবে যারা স্কলারশিপ নিয়ে কানাডায় পড়তে যাবেন তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কানাডার এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফুল ফ্রি স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। এই কারণে যারা স্কলারশিপে কানাডায় যাবেন তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন আপনাদের পড়াশোনার সকল খরচ কানাডা সরকার বা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন তারা চালাবে।
কানাডার স্কলারশিপের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণ
বিশ্বে প্রায় প্রতিটি দেশে কানাডার সার্টিফিকেটকে অন্যান্য সার্টিফিকেট এর চেয়ে অধিক মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সেই সাথে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনাসহ প্রায়ই সকল খরচ ফ্রি। আপনি যদি কানাডাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন তবে সেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আপনাকে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে সেই দেশে পার্মানেন্ট হওয়ার জন্য।
কানাডায় আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক কম এবং এদের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেশী। যার কারণে আপনি পড়ালেখা চলাকালীন পার্টটাইম জব করে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এবং পড়াশোনা শেষেও ভালো বেতনের চাকরির অফার দেওয়া হয়।
কানাডার স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
কানাডার অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যে প্রতিষ্ঠাগুলো কানাডায় মাস্টার্স স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট এর দিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্টটা ভালো হতে হবে এবং আইইএলটিএসে সর্বনিম্ন ৬.৫ রাখার চেষ্টা করুন। তাহলে কানাডায় স্কলারশিপ পাওয়াটা সহজ হবে।
কানাডার স্কলারশিপ গুলো
কানাডায় সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। কানাডা এর জনপ্রিয় কয়েকটি স্কলারশিপের নাম হচ্ছে- আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, মিলেনিয়াম স্কলারশিপ ফাউন্ডেশন ও ওন্টারিও গ্র্যাজুয়েট বৃত্তি প্রোগ্রাম।
তাছাড়া দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা স্কলারশিপ প্রদান করে। সে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম হচ্ছে-
1. University of Alberta Edmonton
2. University of ualberta
3. Dalhousie University, Halifax
4. University of Officer Columbia Vancouver
5. York University, Toronto
6. University of Saskatchewan, Saskatchewan
7. University of Toronto
ভাষাগত দক্ষতা
যেসব দেশের প্রধান ভাষা ইংরেজি সেসব দেশের শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস, টোফেল বা ইংরেজি দক্ষতার উপর কোন সার্টিফিকেট দিতে হবে না। কিন্তু যেসব দেশের প্রধান ভাষা ইংরেজি না সেসব দেশের শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএসে ৬.৫, পিটিই হলে ৬৩, টোয়েফেল হলে ৮৬, ডুয়োলিঙ্গ হলে ১১০ পেতে হবে। আবেদন করার জন্য ইংরেজি ভাষার উপর নূন্যতম এই যোগ্যতাগুলো লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন এবং অফার লেটার সংগ্রহ করুন
কানাডায় মাস্টার্স স্কলারশিপ এর জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে সেই দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আপনাকে অফার লেটার পেতে হবে। কেবলই তাহলে আপনি সেই দেশের ভিসা পাবেন। দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তা আগে ঠিক করুন। আমরা ইতিমধ্যে উপরে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়েছি।
যদি সিলেক্ট করা হয়ে থাকে তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। তারপর তাদের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করুন এবং আপনার যোগ্যতা থাকলে আপনি অফার লেটার পেয়ে যাবেন। কতক্ষণের মধ্যে অফার লেটার দেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
কানাডায় পড়া স্টুডেন্টদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া হয় না। তারা স্টুডেন্ট ভিসার বদলে স্টাডি পারমিট দিয়ে থাকে। উক্ত পারমিটের মেয়াদ নির্ভর করে আপনি কত বছরের জন্য কানাডায় পড়তে যাচ্ছেন। সেটি কি দুই বছর নাকি চার বছর। যদি দুই বছর হয়ে থাকে তাহলে আপনার পারমিট এর মেয়াদ দুই বছর। যদি চার বছর হয়ে থাকে আপনার পারমিট এর মেয়াদ ৪ বছর।
তবে স্টাডি শেষ হওয়ার সাথে সাথে পার্মিটের সময় শেষ হয়ে যায় না। অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়ে থাকে। প্রায়ই ৯০ দিনের মতো অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে আপনি ধীরে সুস্থে কানাডা ত্যাগ করতে পারেন।
কানাডায় ভ্রমণ বা বসবাসের জন্য বা বেশীদিন থাকতে চাইলে আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট অথবা ইটিএ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কানাডায় মাস্টার্স স্কলারশিপ নিয়ে বেশীদিন থাকতে চাইলে এই ভিসা করতে পারেন।
আপনি যদি শুধু ৬ মাস স্টাডি এর জন্য কানাডা যান তাহলে আপনাকে পারমিট দেওয়া হবে না। আপনাকে অন্য ভিসায় যেতে হবে। যদি কানাডায় আপনার পরিবারের কেউ অবস্থান করে তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না।
স্টাডি পার্মিটের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন
স্টাডি পার্মিটের জন্য দুভাবে আবেদন করা যায়। প্রথমত কানাডার সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আপনি তা না করতে চাইলে ঢাকাতে অবস্থিত কানাডিয়ান এম্বাসিতে সরাসরি যোগাযোগ করে স্টাডি পার্মিট নিতে পারবেন।
স্টাডি পার্মিট আবেদন করার জন্য যা যা কাগজপত্র লাগবে
স্টাডি পার্মিট পাওয়ার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে কিছু কাগজপত্র দিতে হবে। সে কাগজগুলো হচ্ছে-
১. কানাডা কতৃক কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে অফার লেটার
২. কানাডায় থাকাকালীন আপনার যা অর্থের প্রয়োজন হবে তার সবটুকু আপনার কাছে কি না তার কাগজপত্র
৩. কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত নেই আপনি তার কাগজ
৪. আপনি শারীরিক ও মানসিক দিকে দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ তার রিপোর্ট
৫. আপনি কানাডায় কোন প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবেন না তার অঙ্গিকারনামা
৬. ইংরেজি ভাষায় যে দক্ষ তার সার্টিফিকেট
কানাডায় থাকাকালীন আপনার খরচ নিজে চালাতে পারবেন তার প্রমাণপত্র হিসেবে যা যা সংযুক্ত করতে হবে
১. কানাডার ব্যাংকে একাউন্ট খুলুন
২. ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ড্রাফট
৩. এক বছরের থাকা ও পড়াশোনার খরচ পরিশোধ করার অগ্রিম কাগজ
৫. ফান্ডিং দেবে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রদানকৃত লেটার
৬. যদি স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন তার প্রমাণপত্র
এসব কিছু যোগার করে আপনার স্টাডি পার্মিট এর জন্য আবেদন করতে প্রায়ই ৯ হাজার টাকা খরচ হবে।
আবেদন করার পর যা করতে হবে
স্টাডি পার্মিটের জন্য আবেদন করার পরে ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে তারা আপনার আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে কি না। যদি আপনার বায়োমেট্রিক এর প্রয়োজন পড়ে তারা আপনাকে মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। বায়োমেট্রিকের জন্য কোন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার হতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে তাদের পাঠাতে হবে তার জন্য আলাদা করে ১৫/১৭ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
৩০ দিনের মধ্যে তারা আপনাকে জানিয়ে দেবে তারা আপনার আবেদন গ্রহণ করেছে কি না। আর যদি গ্রহণ না করে থাকে তাহলে ঠিক কি কি কারণে গ্রহণ করেনি তাও আপনাকে ৩০ দিনের মধ্যে জানানো হবে।
সবশেষে যা জানা দরকার
কানাডায় মাস্টার্স স্কলারশিপ পেলে পার্মিট এর আবেদন করার সময় আপনার থাকা ও খাওয়ার খরচের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আছে কি না তা জানার জন্য যা যা কাগজ দিতে বলা হয়েছে তার কোনটাই লাগবে না। যদি আপনি স্কলারশিপ না পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে তার প্রমাণপত্র দিতে হবে যে আপনি আপনার থাকা খাওয়ার সকল ব্যয় বহন করতে সক্ষম। তাহলেই হয়ে যাবে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ভিসা তথ্য সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।