শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির দিক দিয়ে জার্মানি অনেক এগিয়ে আছে। জার্মানি শুধু শিক্ষাব্যবস্থা নয়, গবেষণা ও প্রযুক্তির দিক দিয়েও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক এগিয়ে আছে। জার্মানিকে বলা হয় আইডিয়ার শহর। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ সুযোগ দেয়ার ফলে জার্মানি শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা অর্জনের তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে।
দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এমনও রয়েছে যেখানে তারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়ে থাকে। তাছাড়া আরও অনেক স্কলাপশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। যার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মাঝে জার্মানিতে স্কলারশিপ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জার্মান সরকার কয়েক ধরনের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। তার মধ্যে বেশীরভাগ স্কলারশিপেই পড়াশোনার সকল খরচ জার্মান সরকার বহন করে। তবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ হচ্ছে ডাড স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপ যারা অর্জন করে তাদের সকল ব্যয়ভার যেমন- হাতখরচ, স্বাস্থ্য-বিমা, যাতায়াত খরচ, পড়াশোনার খরচ এক কথায় যাকে বলা চলে প্রায়ই সকল খরচই জার্মান সরকার বহন করে। যারা স্কলারশিপ পেতে চান তাদের জন্য এটি সুবর্ণ একটি সুযোগ।
জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আগে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য সেই যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী আবেদন ও সকল কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে যেকোন বয়সের ও যেকোন দেশের শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে। মাস্টার্স স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যা যা যোগ্যতা পূরণ করতে হবে-
- স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি অবশ্যই থাকা লাগবে
- যে বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি আছে সেই বিষয়ে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা
- স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার ৬ বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে
- আইইএলটিএসে নূন্যতম ৬ থাকা লাগবে।
- ইংরেজিতে না পড়ে জার্মান ভাষায় পড়ালেখা করতে চাইলে সে ভাষায় বি১ পর্যায়ের দক্ষ হতে হবে।
স্কলারশিপের সুযোগ সুবিধা
জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ এর উপর ভিত্তি করে সুযোগ সুবিধা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কিছু স্কলারশিপ রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র পড়াশোনার খরচ দেওয়া হয়। কিছু স্কলারশিপ রয়েছে যেখানে সব ধরনের খরচ দেওয়া হয়ে থাকে। জার্মান স্কলারশিপগুলোর মধ্যে ডাড স্কলারশিপ সবচেয়ে বেশী সুবিধা দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জার্মান সরকার স্কলারশিপে কি কি সুবিধা দিয়ে থাকে-
- টিউশন ফি
- পরীক্ষার ফি
- মাসিক ভাতা
- উড়োজাহাজের টিকিটি
- স্বাস্থ্যবিমা
- বাড়ি ভাড়া
- প্রতি মাসে হাত খরচের টাকা
- বিশ্ববিদ্যালয় ডমে থাকার সুযোগ
- ফ্রি জার্মান ভাষা শেখার কোর্স
যেসব বিষয়ে স্কলারশিপ দেওয়া হয়
প্রায়ই সকল বিষয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে যে বিষয়গুলোকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সে বিষয়গুলো হচ্ছে-
- গণস্বাস্থ্য
- পরিবেশবিদ্যা
- ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিলেটেড সায়েন্স
- ইকোনমিকস
- ইনফরমেটিকস
- ম্যাথমেটিকস
- অ্যাগ্রিকালচার
- কৃষি ও বনবিজ্ঞান
- সামাজিক বিজ্ঞান
- জিওগ্রাফি
- এডুকেশন সায়েন্স
- ডেভেলপমেন্ট রিলেটেড সায়েন্স
আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
শুধুমাত্র যোগ্যতাগুলো পূরণ করলেই হবে না। সেই সাথে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো যোগার করতে হবে। এগুলোর উপরে স্কলারশিপ পাওয়া না পাওয়া অনেকখানি নির্ভর করে। যেসব কাগজপত্র যোগার করতে হবে তা হচ্ছে-
- সিভি
- অ্যাপ্লিকেশন ফরম
- স্নাতক ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট
- স্নাতক ডিগ্রির সার্টিফিকেট
- স্টাডি প্ল্যান
- রিসার্চ প্রপোজাল
- এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের সার্টিফিকেট
- আইইএলটিএস এর সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার লিখিত কাগজ
- রিকমেন্ডেশন লেটার
স্কলারশিপ আবেদন পদ্ধতি ও সময়সীমা
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যেভাবে আবেদন করবেন চলুন সেগুলো ক্রমান্বয়ে জেনে নেওয়া যাক-
১. প্রথমে জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ ওয়েবসাইটে যেতে হবে অনলাইনে আবেদন করার জন্য
২. অ্যাপ্লিকেশন ফরম অনলাইনে কিংবা বের করে পূরণ করতে হবে
৩. কোর্স সিলেক্ট করতে হবে
৪. বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করতে হবে
৫. সর্বোচ্চ তিনটি কোর্সে আবেদন করা যাবে
৬. আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো আপলোড করতে হবে
৭. আবেদন সফলভাবে জমা হলে আবেদনকারী তার ফোনে কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন
৮. প্রাথমিক পর্যায়ে বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের তিন মাসের মধ্যে কনফার্মেশন মেসেজ দেওয়া হবে
৯. প্রাথমিক পর্যায়ে বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ যেভাবে করবেন
প্রথমে জার্মান এর একাডেমিক স্কলারশিপ ওয়েবসাইট এ যেতে হবে। তারপর বামপাশের ঘরে নিজের পছন্দমতো একটা সাবজেক্টের নাম লিখে দিলে সেই সাবজেক্ট এর উপর অনেকগুলো কনটেন্ট পাওয়া যাবে। সেই কনটেন্টগুলো থেকে জানতে পারবেন আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আপনি কোন কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে সেখানে থাকা মেইল আইডিতে মেইল করে জানাতে পারেন।
ভাষাগত যোগ্যতা | জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ
জার্মানিতে মূলত জার্মান ও ইংরেজি এই দুই ভাষায় পাঠদান হয়ে থাকে। বাইরের দেশ থেকে যে কেউ এলে এই দুই ভাষার যে কোন এক ভাষাতে পাঠদান করতে পারবে। তবে যদি জার্মান ভাষায় মাস্টার্স করতে চান তো জার্মান বেসিক১ ভাষা কোর্স শেষ করা বাধ্যতামূলক। এই কোর্সটি করার জন্য দেশের মধ্যে অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কেউ যদি ইংরেজিতে পড়তে চান তো আইইএলটিএসে নূন্যতম ৬ পেতে হবে।
কোর্স কীভাবে সিলেক্ট করবেন
আপনারা চাইলে জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য সে দেশের যে কোন একটা কোর্স সিলেক্ট করতে পারেন। তবে, আপনি যে বিষয়ে স্নাতক পাশ করেছেন সেই বিষয়ের সাথে মিল রেখে কোন সাবজেক্ট চয়েসে করাটা ভালো হবে। তবে আপনার চাইলে আবেদন করার আগে সেই কোর্সের কোঅর্ডিনেটরকে ইমেইল করে সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত ধারণা নিতে পারেন।
মেইলে আপনি জানাতে পারেন যে, আপনি কি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এবং আপনার সিজিপিএ কত তা জানিয়ে বলতে পারেন যে আমি কোন কোন কোর্স করতে পারি এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা সাধারণত দুই দিনের মধ্যে ইমেইলের রিপ্লে দিয়ে থাকে
জার্মান ভিসা পাওয়ার জন্য যা যা করতে হবে
প্রথমে জার্মান ব্যাংকে নিজের একাউন্ট খুলে সেখানে ১১,২০৮ ইউরো জমা করতে হবে। তারপর ঢাকার কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে ইন্সুরেন্স করতে হবে। সবশেষ কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান এমব্যাসি এর ওয়েবসাইট ভিজিট করা। সেখান থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে সেই মোতাবেক কাজ কর। তাদের নিয়মকানুন প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হতে থাকে। সেজন্য সর্বশেষ আপডেট ফর্মটি ডাউনলোড করে সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
সবশেষে যা জানা দরকার
জার্মানিতে মাস্টার্স স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা ও কীভাবে কি করতে হবে তার সবটাই আপনাদের জানানো হলো। জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া, স্কলারশিপ নেওয়ার পদ্ধতি ও আবেদনপত্র করার সময় যে কাগজগুলো প্রয়োজন সবকিছুই প্রায়ই পরিবর্তন হতেই থাকে। তার জন্য আপনি যখনই স্কলারশিপ নেওয়ার জন্য আবেদন করুন না কেন সবসময় জার্মানি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে এমন ওয়েবসাইটগুলো থেকে আপডেট তথ্য চেক করে কাজ শুরু করবেন। এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ভিসা তথ্য সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।