সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরনো গাড়ি ক্রয় করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল করা উচিত। আর তা না করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে!
যারা কম দামের গাড়ি কিনতে চান তাদের জন্যই মূলত আজকের লেখা। আসুন জানি পুরাতন গাড়ি ক্রয় করার সময় কি কি দেখবেন?
পুরাতন গাড়ি ক্রয় করার নিয়ম
গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বেশ কিছু নিয়ম আছে, এই নিয়ম গুলো মনে করেন আপনার বাজারের লিস্টের মত যদি কোনটা ভুলে যান
তবে সেটা আবার আনতে হবে; অনথ্যায় বাড়িতে ফিরে কিন্তু বিপদও হতে পারে!
সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি কিনতে যাচ্ছেন নিচের পয়েন্ট গুলো যথাযথভাবে ফলো করুন। বার বার পড়ুন অথবা দেখে দেখে সকল বিষয় ও টিপস
চেকলিস্টের মত করে নিচের নিয়ম গুলো ফলো করুন। ইনশাআল্লাহ একটি ভালো গাড়ি কিনতে পারবেন যেটিতে লাভ হবে।
গাড়ির বনেট তুলে কি কি দেখবেন?
গাড়ির বনেট তুলে চ্যাসিস মার খাওয়া কিনা সেটা দেখবেন। যদি চেসিস খুব বেশি আঘাত না লাগে তবে পরবর্তী স্তরগুলোতে যেতে পারেন।
আঘাত লাগলে গাড়ি কেনার ডিসিশন এখান থেকে বাদ দিন অথবা রিসেল ভ্যালু চিন্তা করে অনেক কম দামে কেনার প্রস্তাব দিন।
এছাড়াও টাইমিং বেল্ট চেক করাটা জরুরী। এটা ইঞ্জিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেল্ট। এবং এটা পরিবর্তন করতে গেলে অনেক বেশি খরচ হয়। সুতরাং সবদিক ভেবে মনোযোগের সাথে এই দিকগুলো খেয়াল করা উচিত।
এছাড়াও পাইপ এবং বেল্টগুলো চেক করে দেখা দরকার। এগুলোতে ক্র্যাক থাকা মানে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ। আর রেডিয়েটর হোস কোনভাবেই নরম হওয়া উচিত নয়। মূলত এগুলো দেখেই বোঝা যাবে, গাড়িটি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হয়েছিল কিনা।
যদি ইঞ্জিন ব্লকে বাদামি তেলের দাগ দেখেন তাহলে বুঝবেন যে, গাস্কেটে লিক আছে। আর তা ভবিষ্যতে রিপেয়ার করতে গেলে অনেক বেশি খরচ পড়বে।
ডিপস্টিক টেনে চেক করুন
ইঞ্জিনের অয়েল ফিলার ক্যাপ সরিয়ে ভেতরটা দেখতে চেষ্টা করুন। ভিতরে যদি ফোম জাতীয় কোন কিছু দেখা যায়। তাহলে সেই গাড়ি কেনাই ঠিক হবে না। এছাড়াও ডিপস্টিক টেনে চেক করে দেখুন। ভেতরের ফ্লুয়িড দেখতে অনেকটা পিংক বা লাল কালারের হওয়ার কথা। কিংবা পুরনো হলে তা হয়তো কালো হতে পারে। কিন্তু এটা যদি পোড়া বা পোড়া ঘ্রাণ যুক্ত হয়ে থাকে। তাহলে বুঝবেন এটাতে কোন ধরণের সমস্যা আছে।
ইঞ্জিন স্টার্ট করে যা দেখবেন?
ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর অয়েল গেজটি তুলুন , এক্সেলেরেটর প্যাডেলে চাপ দিন যদি সাদা ধোঁয়া বের হয় তাহলে ইঞ্জিন বদলাতে হবে।
ইঞ্জিন স্টার্ট করে স্টিয়ারিং সিটে বসুন এরপর হেড লাইট অন করুন। তারপর ব্যাক গিয়ারে দিন যদি ঝাঁকি দেয় তবে ধরে নিবেন গিয়ারবক্স খুব শীঘ্রই বদলাতে হবে অন্যথায় গিয়ারর্বক্স ভালো আছে। বাকি গিয়ার গুলো পরিবর্তন করে দেখুন , স্মুথলি শিফট হয় কিনা। যদি স্মর্টলি শিফট হয় তবে ভালো নতুবা ধরে নিন গিয়ার বক্স খুব শীঘ্রই বদলাতে হবে। (অনেক সময় গিয়ার বক্স বস করলে প্রবলেম এর সমাধান হয়ে যায় কিন্তু সমাধান না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই খরচটা হাতে ধরে নিবেন)
গাড়ির সামনে বা সামনে ডানে বামে মার খাওয়া কিনা তা বোঝার জন্য স্টিয়ারিং ফুল ডানে-বামে কাটুন এবং দেখুন ফেন্ডারের নিচে ঝালাই করা আছে কিনা। যদি ঝালাই থাকে তবে বুঝবেন মাইর খাওয়া।
ইঞ্জিন স্টার্ট করে এসি অন করে দেখুন পর্যাপ্ত ঠান্ডা হয় কি না?
ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে দেখুন কোনরকম কালো অথবা সাদা ধোয়া অনবরত বের হয় কিনা যদি হয় তাহলে ইঞ্জিনের কাজ করাতে হবে
সুযোগ পেলে গাড়ি সামনে ড্রাইভ করে দেখুন স্টিয়ারিং ডানে বামে মোড় নেওয়ার সময় বাজে আওয়াজ হয় কি না । জয়েন্ট বদলাতে খরচ ২৮০০-১০০০০ টাকা)
একটু ভাঙ্গা রাস্তায় চালিয়ে সাসপেনশন এর অবস্থা দেখে নিন ভাঙ্গা রাস্তা চালানোর সময় যদি ঢকঢক আওয়াজ করে তাহলে বুঝবেন সাসপেনশনের কাজ করতে হবে।
হার্ড ব্রেক করে ব্রেকগুলো পরীক্ষা করুন। ভালভাবে ব্রেকের কন্ট্রোল চেক করাটা অনেক জরুরি। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন গাড়িটি ৯০ ডিগ্রী টার্ন নেবার সময় কোনরূপ ধাতব বস্তুর ঝাকাঝাকি, কাঁপাকাঁপি কিংবা কোন ধরণের শব্দ করে কিনা। তবে এটা অবশ্য লো স্পিডে পরীক্ষা করে দেখতে পারলে ভাল হয়।
ফ্লুয়িড নির্গত হয় কি না দেখুন
এবার আপনি দেখুন গাড়িটি থেকে কোনো ধরনের ফ্লুয়িড নির্গত হয় কি না। যদি ফ্লুয়িড নির্গত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে গাড়িটি কেনা আপনার জন্য ঠিক হবে না। কারণ গাড়ি থেকে ফ্লুয়িড নির্গত হওয়া খুবই খারাপ লক্ষণ। কন্টেনার থেকে যে কোনো তরলই নির্গত হোক না কেন, আপনি চোখ বন্ধ করে গাড়িটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। তেল, গ্যাস যা-ই হোক গাড়ির জ্বালানি, তা মাটিতে পড়তে থাকলে তা যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
এক্সিডেন্ড হিসটরী আছে কিনা বুঝবেন কিভাবে?
পুরো গাড়ির অন্য কোথাও কোন মাইর আছে কিনা সেটা দেখেন। ভাড়ায় চালিত গাড়ি হলে অনেকাংশেই পিছনে মাইর খাওয়া থাকে দাম কম পেলে কিনতে পারেন অন্যথায় বাদ দিন।
গাড়ির সামনে পিছে নাম্বার প্লেট একদম স্টেট আছে কিনা সেটা মিলিয়ে নেবেন মাইর খাওয়া হলে একদম বাজে অবস্থায় চলে যাবে নতুবা ঠিক থাকবে।
বিক্রি করলে দাম কেমন হবে তা মাথায় রাখুন
গাড়ি কেনার সময় বিক্রির কথাও ভাবেন অনেক ক্রেতা। কয়েক বছর ব্যবহারের পরে বিক্রি করতে চাইলে কোন গাড়ির দাম কত পাওয়া যেতে পারে, তা চিন্তা করেও অনেক ক্রেতা কোন কোম্পানির গাড়ি কিনবেন, তা ঠিক করেন।
কার কাছ থেকে কিনছেন? সেটা একবার ভাবুন!
গাড়িটি কোথা থেকে কিনছেন, সেই উৎসও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনার কোনো বন্ধুর, কোনো অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখেও আগ্রহী হতে পারেন কিংবা বিক্রেতা হতে পারে পুরোনো গাড়ি বেচাকেনা করার কোনো তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ী। সাধারণত যত্নের সঙ্গে ব্যবহৃত একটি গাড়ি অনেক বেশি মাইল চললেও তা অযত্নে থাকা কম ব্যবহৃত গাড়ির থেকে ভালো সেবা দিয়ে থাকে। তাই গাড়ি কোন হাতে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা জানাও জরুরি।
গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা দেখে নিন?
ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখে নিন। চেসিস নাম্বার, ইঞ্জিন নাম্বার মিলিয়ে দেখুন কাগজের সাথে এক কিনা (এগুলো আপনি ফিটনেস পেপারে পাবেন)।
গাড়ির মালিক আপনাকে সাথে সাথে মালিকানা বদলি করে দিবে কিনা সেটা নিশ্চিত করুন।
সম্ভব হলে পেপারস এর এক কপি brta তে চেক করূন (গাড়ির মালিক দেখে সন্দেহ হলে করতে পারেন)। এবং কোন মামলা আছে কিনা তাও জেনে নিন অন্যথা কেনার পরে অহেতুক ঝামেলায় পড়তে পারেন।
গাড়ির পেপারস কতদিন আপডেট আছে সেটাও দেখে নিন চেষ্টা করবেন অন্তত ছয় মাস আপডেট থাকে এমন গাড়ি কিনতে।
গাড়ির টায়ার চেক করেছে কি?
গাড়ির টায়ার ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখুন যে, কোন সমস্যা আছে কিনা। টায়ারগুলো সব একই রকম ভাবে ব্যবহার হওয়ার কথা। ব্যাড এলাইনমেন্ট কিংবা কোন রকম ড্যামেজ হয়ে আছে কিনা তা দেখা দরকার। টায়ার গুলো দেখুন নতুন আছে কিনা মধ্যম মানের থাকলেও ভালো অন্য তা আবার বিষ হাজার টাকা খরচ।
ফ্রেম ড্যামেজ আছে কিনা পরীক্ষা করুন
কখনোই কোন ফ্রেম ড্যামেজ কার কিনবেন না। গাড়ির নীচ-দিকটা পরীক্ষা করে দেখুন যে, কোথাও কোন মরিচা ধরেছে কিনা। কোনরূপ ছিদ্র আছে কিনা তাও খেয়াল করুন। এছাড়া গাড়ির নিষ্কাশন ব্যবস্থাও পরীক্ষা করা উচিত। এক্ষেত্রে গাড়ি চালিয়ে দেখুন সাদা বাষ্প বের হয় কিনা। শীতকাল বাদে এই বাষ্প বের হলে তা খারাপ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। আর এর ফলে গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনাটাও কিন্তু বেড়ে যায়!
গাড়ির ইন্টেরিয়র ঠিক আছে তো
পুরাতন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ছোটখাটো বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করাটা জরুরী। মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন গাড়ির ইন্টেরিয়র ঠিকঠাক আছে কিনা। ভালভাবে ভিতরের সবকিছু খেয়াল করে দেখুন। ভিতরকার সিটগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করুন। দেখুন কোথাও কোনও কাটা-ছেঁড়া কিংবা দাগ আছে কিনা। এছাড়াও এয়ারকন্ডিশনও অন করে চেক করে দেখুন। সবকিছু ঠিকভাবে চলে কিনা তা জানা দরকার।
গাড়িতে কোন রংয়ের কাজ আছে কিনা দেখে নিন। ব্যবহৃত গাড়ি হলে রংয়ের কাজ থাকবেই এটাই স্বাভাবিক |
গাড়িতে সিএনজি করা থাকলে সিলিন্ডারের মেয়াদ কত দিন আছে সেটা দেখে নিন।
মিরর, হেডলাইট, উইপার ঠিকঠাক আছে কিনা
গাড়ির মিরর, হেডলাইট, উইপার ইত্যাদি ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখা দরকার। অস্বচ্ছ মিরর, ভাঙ্গা হেডলাইট, অকেজো উইপার আপনার কোন কাজে আসবে না। কার কেনার সময় এগুলো ভালভাবে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য বিষয়গুলো যেগুলো গাড়ি স্থির অবস্থায় ব্যবহার করা হয় তাও পরীক্ষা করুন। যেমন-সেন্সরস যেগুলো গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ব্যাক পার্কিং ক্যামেরা, সিডি, রেডিও ইত্যাদিও পরীক্ষা করে দেখুন।
গাড়ির সার্ভিসিং হিস্টোরি জানুন
মালিকের কাছে থেকে গাড়ির সার্ভিসিং হিস্টোরি সম্পর্কে তথ্য জানুন। বিশেষ করে এটার পারফরমেন্স, রিপেয়ার ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হোন।
আর কারের যেসব পার্টে সমস্যা আছে কিংবা যা রিপ্লেস করতে হতে পারে। তা একটি নোটবুকে লিস্ট করে লিখে রাখুন।
এবং এই পার্টসগুলো ঠিক বা পরিবর্তন করতে কতটা খরচ হবে, তার একটা অনুমান থাকলে ভাল হয়।
সেক্ষেত্রে কোন পরিচিত অটোপার্টসের দোকানে ফোন করে তা জেনে নিতে পারেন। পরবর্তীতে খুব সহজেই সেই অনুযায়ী গাড়ির দাম নির্ধারণ করতে পারবেন।
ডুপ্লিকেট চাবি
যখন গাড়ি কিনবেন; তখন দুই সেট চাবি পাবেন। যদিও ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সেট চাবি না-ও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় গাড়ির দাম একটু বেশি আলোচনা করুন।
প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কাউকে সাথে রাখুন
গাড়ি সম্পর্কে ভালো আইডিয়া আছে, এমন কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিন। গাড়ি কেনার সময় তাকে সাথে রাখুন। মূলত একটা পুরাতন গাড়ি বুঝেশুনে সমঝোতা করে কেনাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পরিশেষে আপনার বাজেটের মধ্যেই দামাদামি করে গাড়িটি কিনে ফেলতে চেষ্টা করুন।
আপনার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতার মাধ্যমে পুরাতন গাড়ি কিনেও যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন।