Shebaru

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা সম্পর্কে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা সম্পর্কে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শিল্প-সাহি্ত্যে কিংবা ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দেশ ফ্রান্স। ফ্র্যান্সে পড়াশোনা করা বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।  প্রাচীন নিদর্শন কিংবা  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি খ্যাত এই দেশটির শিক্ষাব্যবস্থার মানও কিন্তু অনেক উন্নত। তাই তো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ফ্র্যান্স অন্যতম। ।

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা ডিগ্রীসমূহ

ফ্র্যান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, পিএইচডি সহ প্রায় সব ধরনের প্রোগ্রামেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্র্যান্সে পড়াশোনা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের চেয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সহজেই স্কলারশিপ কিংবা এসিস্টেন্টশিপ ইত্যাদি ম্যানেজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। এই সম্ভাবনা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই কম। যাই হোক, এবার আসি এই বিভিন্ন কোর্স বা প্রোগ্রাম কোনটিতে কত বছর সময় লাগে সে ব্যাপারে। এক্ষেত্রে ব্যাচেলর কোর্সের মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর হয়ে থাকে। আর মাস্টার্স কোর্সের মেয়াদ সাধারণত এক থেকে দুই বছর হয়ে থাকে। পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন থেকে ছয় বছর সময় লাগে। আর অন্যান্য প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বলতে গেলে তা বিভিন্ন মেয়াদে পরিচালিত হয়। 

আর ফ্রান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম সাধারণত ফ্রেঞ্চ ভাষায় পরিচালিত হয়। কেননা ফ্রেঞ্চ বিশ্বব্যাপী প্রায় ত্রিশ টিরও বেশি দেশের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতেও পাঠদান বা শিক্ষা কার্যক্রম থাকে। আপনি ফ্রেঞ্চ মাধ্যমে পড়াশোনা করবেন নাকি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফ্রেঞ্চ মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চাইলে ফ্রেঞ্চ ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। আর আপনি যদি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চান, তবে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘেটে ইংরেজিতে পরিচালিত কোর্স গুলো একটু কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে।

ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে আসলে কাজের সুবিধা ও স্থায়ী বসবাস

ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা কাজের অনুমতি পেয়ে থাকে। আর বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ ৯৬৪ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি পেয়ে থাকে। তবে বড় কোনো বন্ধ অর্থাৎ সামার ভ্যাকেশন বা এই টাইপ ছুটির ক্ষেত্রে আপনি ফুলটাইম কাজ করতে পারবেন।

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা অবস্থায় আপনি মাসে প্রায় এক হাজার ইউরোর কাছাকাছি উপার্জন করতে পারবেন বলে আশ্বস্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে ফ্রেঞ্চ ভাষা ভালভাবে রপ্ত থাকলে আপনার ভালো কাজ পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকবে, ফলে আয়ও বেশি থাকবে। আর ফ্রান্সে পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি এক বছর চাকুরী খোঁজার জন্য সেখানে থাকার অনুমতি পাবেন। 

এবার আমি আপনাদের জানাবো, Plurennial Residence Card (Passeport Talent) সম্পর্কে। কি একটূ কাঠখোট্টা ব্যাপার মনে হচ্ছে? জট পাকানোর দরকার নেই, আমি আপনাদের সংক্ষেপে এই Passeport Talent সম্পর্কে জানাচ্ছি।  মূলত এই কার্ড আপনাকে তখনই দেওয়া হবে, যখন ফ্র্যান্স সরকার আপনার ভিতর অনন্য কোনো প্রতিভা খুঁজে পাবে। অর্থাৎ মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফ্র্যান্সে ধরে রাখার জন্য এবং বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য এই কার্ড দেওয়া হয়। 

এটি মূলত আপনাকে দেওয়া হবে যদি আপনি কোনো ইনোভেটিভ বিজনেস দাড় করান কিংবা গবেষণায়, ডিজাইনে, আর্টে বা এই ধরনের কোনো ক্রিয়েটিভ ক্ষমতার অধিকারী হন তখন। এই কার্ড পাবার সুবিধা হচ্ছে, আপনার কাছে এই কার্ড থাকলে আপনি আপনার পরিবার সহ চার বছর ফ্র্যান্সে থাকার এবং চাকুরী করার সুযোগ পাবেন। আর আপনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বা পিআর এর জন্য আবেদন করতে পারবেন একটানা পাঁচ বছর বৈধভাবে ফ্র্যান্সে থাকার পর।

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ

মূলত EEA এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে আসা  শিক্ষার্থীদের খুব কম টিউশন ফি প্রদান করতে হয়। কিন্তু যেহেতু আমরা  EEA এর অন্তর্ভুক্ত দেশের নাহ, তাই আমাদের ক্ষেত্রে বেশ ভালো অঙ্কের টিউশন ফি প্রদান করা লাগে। ব্যাচেলর ডিগ্রীর ক্ষেত্রে টিউশন ফি সাধারণত পঁচিশ শত থেকে তিন হাজার ইউরো এর মতো হয়ে থাকে। মাস্টার্স ডিগ্রীর ক্ষেত্রে টিউশন ফি সাধারণত পয়ত্রিশ শত থেকে চার হাজার ইউরোর মতো হয়ে থাকে। আর ডক্টোরাল কোর্সের জন্য টিউশন ফি বাবদ প্রতিবছর প্রায় চারশত ইউরোর মতো প্রয়োজন হবে। 

পোল্যান্ডের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্তর্জাতিক ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। তবে আপনি চাইলে বাইরে বাসা ভাড়া নিয়েও থাকতে পারেন। কিন্তু বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে গেলে আপনার খরচ একটু বেশিই পড়বে। এক্ষেত্রে ফ্রান্সে আপনার থাকা-খাওয়া বাবদ সাধারণত সবমিলিয়ে প্রায় চারশত থেকে ছয়শত ইউরোর মতো খরচ পড়বে। তবে শহরভেদে এই খরচের তারতম্য হয়ে থাকে।

ফ্র্যান্সে  বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স নির্বাচন

ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী অনেক বিখ্যাত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫০০ এরও বেশি সরকারী, বেসরকারী উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ফ্র্যান্সে। তম্মধ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৮০ টি। এছাড়াও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই। আর এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলো মানে সেরা। গ্লোবাল র‍্যাংকিংয়েও অনেক এগিয়ে।

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা তম্মধ্যে সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হলোঃ

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কিংবা গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ফ্র্যান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানাবিধ ফিল্ডে পড়াশোনা করার বহু কোর্স চালু রয়েছে। তম্মধ্যে জনপ্রিয় কিছু ফিল্ড হলো, Pure Sciences Courses, Pharmacology,Information Technology, Fashion Designing, Business Management, Art, Economics, Film Studies, Data Science ইত্যাদি। এই ফিল্ডগুলোর আন্ডারে বিভিন্ন স্পেশাল কোর্স রয়েছে। যেগুলো আন্তর্জাতিক চাকুরী বাজারে যথেষ্ট চাহিদা সম্পন্ন।

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা ও স্কলারশিপ ও ফান্ডিং

ফ্রান্সে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। এসব স্কলারশিপ আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোনো কোনো স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া, যাবতীয় পড়াশোনার খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচসহ প্রায় সব ধরনের খরচ মুক্ত থাকা যায়। অর্থাৎ আপনার কোনো ধরনের খরচেরই প্রয়োজন পড়বেনা। উলটো আপনি মাসিক ভাতাও পেতে পারেন। আবার কিছু কিছু স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আপনার টিউশন ফি ছাড় দেওয়া হবে। কোনোটিতে আবার টিউশন ফি এর কিছু অংশ ছাড় দেওয়া হয়।

ফ্রান্সের উল্লেখযোগ্য কিছু স্কলারশিপ হলোঃ

এছাড়াও আপনি রিসার্চ এসিস্টেন্ট কিংবা টিচার্স এসিস্টেন্ট হিসেবে এসিস্টেন্টশিপ ম্যানেজ করে ফান্ডিং বা গ্রান্ট নিয়েও আপনার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারেন। তবে এই এসিস্টেন্টশিপ কিংবা স্কলারশিপ সবকিছুতেই গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজ করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

আবেদনের সময়কাল 

ফ্র্যান্সে বছরে তিনটি করে সেমিস্টার হয়। এক্ষেত্রে প্রতি সেমিস্টার সাধারণত চার মাস করে হয়ে থাকে। আর ফ্র্যান্সে পড়াশোনা ও শিক্ষাবর্ষ  শুরু হয় সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে এবং শেষ হয় মে বা জুন মাসে। তাই প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে শুরু হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে এবং পরবর্তী সেমিস্টার শুরু হয় মে বা জুন মাসের দিকে।  এক্ষেত্রে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে সেশন শুরুর কমপক্ষে তিন মাস পূর্বেই আবেদন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও যোগ্যতা

ফ্র্যান্সে পড়াশোনা ভিসার জন্য আবেদনের নিয়মাবলী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ফ্রান্সে পড়াশোনার আদ্যপান্ত,

আশা করি, ফ্র্যান্সে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে আপনি পরিপূর্ণ ধারনা পেয়েছেন। এখন আপনার করণীয় হচ্ছে, ফ্র্যান্সের বিওশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট একটূ ঘাটাঘাটি করা। তাহলে আরো নানাবিধ খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনার মনে যদি আরো কোনো প্রশ্ন থাকে, কমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। আর বিদেশে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত আরো বিভিন্ন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনে-

যোগাযোগঃ সেবারু,২/৪ ব্লক-জি,লালমাটিয়া,ঢাকা-১২০৭,বাংলাদেশ।০১৭১১-৯৮১০৫১,০১৮৯৭৯৮৪৪২০,০১৮৯৭৯৮৪৪২১।

PLEASE SHARE THIS

আমাদেরকে আনুসরন করুন

SOCIAl MEDIA

নিউজলেটার

আমাদের বিভিন্ন প্যাকেজ আপডেট, অফার কিংবা নিউজ আপনার ইমেইলে সবার আগে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।

Scroll to Top
× How can we help you?