বনসাই গাছ কি? বনসাই কাকে বলে? এ গাছ চাষ করার পদ্ধতিই বা কেমন? এ রকম নানা প্রশ্ন নতুনদের মধ্যে। এক কথায় বনসাই গাছ হল- বড় গাছের ক্ষুদ্র রুপ।
একটু বড় করে বল্লে- বন অর্থ অগভীর পাএ এবং সাই অর্থ গাছ। দুই মিলে বনসাই গাছ। যেহেতু একটি বনসাই গাছের ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত । তাই খুব সহজেই
এ গাছ বিক্রি করে লাখপতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেই বনসাই এর আদ্যপান্ত।
বনসাই গাছ নির্বাচন এর সঠিক নিয়ম
যে সমস্ত গাছের বাকল মোটা এ রকম গাছই বনসাইর জন্য উত্তম।যে গাছ জীবনকাল দীর্ঘ, অনেক দিন বাচেঁ।
বিরুপ পরিবেেশে ঠিকে থাকে এবং কষ্ট, সহিঞ্চু।
বট, পাকুড়, তেঁতুল, ছাতিম, কামিনি, রঙ্গন, অশ্বথ, অর্জুন, চায়নাবট, জেডপ্লান্ট, ফাইকাস বেঞ্জামিনা, শেওড়া, তারামনি, ফুকেন টি ট্রি, বারবাডোসচেরী, প্রেমনা প্রভৃতি গাছপালা বনসাই এর উপযুক্ত। তবে বট গাছের বনসাই সবচেয়ে উপযোগী। কারণ টবের ছোট্ট গাছে এর লতা নামলে চমৎকার লাগে এবং একই সাথে গাছটির প্রাচীনত্ব প্রকাশ পায়।
বনসাইয়ের চারা সংগ্রহ পদ্ধতি
বনসাই তৈরীর প্রাথমিক কাজ চারা সংগ্রহ করা। পুরাতন অট্টালিকা, ভাঙ্গা প্রাচীর, পাথুরে জমি, পাহাড়ের খাদে বিরুপ পরিবেশে জন্মানো সংগ্রাম করে টিকে থাকা কষ্ট, সহিঞ্চু গাছ, যাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে অথচ তেমন বড় হয়নি এমন ধরনের চারা বনসাই করার জন্য বেশী উপযুক্ত হয়।
কিছু কিছু প্রজাতির গাছে গুটি কলম বা কাটিং করে চারা করা যায়। সরকারী বা বেসরকারী বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠত নার্সারী থেকে মোটা-গুড়ি, ঝোপালো, বেশি শাখা প্রশাখাযুক্ত, অপেক্ষাকৃত পরিণত, কম উচ্চতা বিশিষ্ট, গাছকে বনসাইয়ের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। বছরব্যাপি চারা সংগ্রহ করা যায়, তবে বর্ষাকাল উত্তম সময়।
বনসাই গাছের মাটি তৈরি ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
দোআঁশ মাটি+ভার্মি কম্পোস্ট /জৈবসার + হাড়েরগুড়া+ইটেরগুড়া+মোটাবালি =৪৫%+৪০%+১০%+৫% । এর পর টবের মাটি গাছের জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সংরক্ষণ করবে এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিস্কাশিত হবে।বছরে একবার টবের মাটি ৩০ থেকে ৬০ ভাগ পরিবর্তন করতে হবে।
প্রতি মাসে (উচ্চতা ×প্রস্থ=১০×১৫ সেঃমিঃ) পটের মাটিতে ডিএপি+এমওপি+জিপসাম+বোরন+জিংক+খৈল=৩+২+১+০.৫+০.৫+১০ গ্রাম ভিজে রেখে তরল আকারে প্রয়োগ করা উত্তম। বছরে একবার টবের মাটিতে ৩ থেকে ৫ গ্রাম ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন পদ্ধতি
গাছ শিকড় ও মূলরোমের মাধ্যমে মাটি থেকে তরল আকারে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে।
মাটিতে গাছের প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে গাছ খাদ্য গ্রহন করতে পারেনা ফলে বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
আবার অতিরিক্ত পানি মাটিতে গাছের প্রয়োজনীয় বায়ু/অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ফলে গাছ মারা যেতে পারে।
গাছে নিয়মিত প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে।
১মরার পানি দেওয়ার পর মাটি না শুকানো পর্যন্ত দ্বিতীয়বার পানি দিবেন না।
গাছে সাধারণত সকালে বা বিকালে প্রচন্ড সুর্যের তাপ পরিহার করে পানি দেয়া উত্তম।
বনসাই পট অগভীর হওয়ায় গ্রীষ্মে দিনে দুই থেকে তিনবার পানি দেওয়া লাগতে পারে।
সপ্তাহে অনন্ত একবার সমস্ত গাছে পানি স্প্রে করলে
পাতা সজীব থাকে পোকা ও রোগের প্রাদূর্ভাব কম হয়।
অতিরিক্ত বর্ষায় টবে পানি জমতে দেয়া যাবে না, অতিরিক্ত পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বনসাই প্রুনিং ও পাতা ছোট করণ
প্রুনিং গাছের প্রাজাতি ভেদে চারা রোপনের ১ম বছরেরে পর থেকে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পরপর আবার বৎসরে ১ থেকে ২ বার প্রয়োজন হতে পারে। শীতকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রুনিং না করা ভালো।
প্রি-বনাই বা বনসাই (৩-৫) বৎসর হলে প্রুনিংয়ের নিয়ম মেনে গাছে কিছু কুড়ি রেখে সমস্ত পাতা ২ থেকে ৪ বার কেটে ফেলুন পাতা ছোট হয়ে আসবে।
ডাল ও শিকড় কাটিং করা
Wheel Branch : কোন কোন সময় গাছের গোড়া বা কান্ড থেকে অনেকগুলো ডাল বের হয়। বনসাই স্টাইল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডালটি রেখে বাকি ডাল গুলো কাটিং করতে হবে। Bar Branch : মুল কান্ডের দুই দিকেই সমান্তরাল ভাবে থাকে যে ডাল।
Parallel Branch : মুল কান্ডের একদিকে পরপর সমান্তরাল ভাবে দুইটি ডাল।
Upright Branch :খাঁড়াভাবে বা সোজা হয়ে ওঠে যাই এমন ডাল।
Down ward Branch : খাঁড়াভাবে নিচের দিকে নেমে গেছে এমন ডাল।
Swindling Branch : গাছের যে ডালটি জোরে সোরে এবং সোজা হয়ে বাড়ছে ঐধরণের ডাল প্রয়োজন হলে কাটং করে ছোট করতে হবে। যদি প্রয়োজন না থাকে তা হলে গোড়া থেকে ডালটি সম্পূর্ণ কাটিং করতে হবে।
Crossing branch: আড়াআড়ি ডাল যা একটি অপরটিকে Cross করে ঐসমস্ত ডাল।
Crossing and Overlapping Root : আড়াআড়ি শিকড় যা একটি অপরটিকে Cross করে, মুল কান্ডকে পেঁচিয়ে থাকে এবং একটির উপর দিয়ে আর একটি অতিক্রম করে যে শিকড় ঐসমস্ত গুলি।
Front Crossing Branch and Root : সামনের দিকে সোজাসুজি বা আড়াআড়ি ভাবে যে ডাল এবং শিকড় গুলো থাকে।
Recurve Branch and Root : যে সমস্ত ডাল এবং শিকড় যা পিছন থেকে সামনে এবং সামনে থেকে পিছনে ঘুরে গেছে ঐসব ডাল এবং শিকড়।
Front Branch and Root : গোড়ার দিক থেকে যে ডাল বা শিকড় সরাসরি সামনের দিকে সোজাসুজি থাকে ঐসব ডাল এবং শিকড়।
বনসাই গাছের জন্য টব নির্বাচন
উচ্চতা ১০ সেঃ মিঃ দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ ১৫ সেঃ মিঃ। তবে গাছের আকার আকৃতিতে টবের আকার আকৃতি পরিবর্তনশীল।
টবের তলায় ১ সেঃমিঃ ব্যাসের ১ থেকে ৩ টি প্রয়োজন অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র থাকতে হবে। টবের নিচে খুড়া বা স্টান্ড থাকা ভালো।
টব হতেপারে পোড়া মাটির, চিনামাটির, সিরামিকের, সিমেন্ট +বালির, পিতলের, প্লাস্টিকের।
পোড়ামাটি, সিমেন্ট +বালির টবে মাটিতে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের কারনে মাটির অনুজীবীয় কার্যক্রম ঠিক থাকে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
বনসাইর স্টাইল সমূহ
বনসাই গাছ তৈরি শুরু করার আগে অবশ্যই বনসাই এর বিভিন্ন স্টাইল সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে।
লক্ষ্য ঠিক না থাকলে যেমন, কোনো কাজ সফল ভাবে সম্পূর্ণ করা যায় না। তেমন বনসাই গাছের স্টাইল জানা না থাকলে
সঠিক ভাবে কম সময়ে ভালো বনসাই তৈরি করা যায় না। নিচে বনসাই এর কিছু স্টাইল দেওয়া হল-
- Formal Upright Style
- Informal Upright Style
- Cascade Style
- Sami-Cascade Style
- Broom Style
- Slanting Style
- Literity Style
- Exposed Root Style
- Root Over Rock Style
- Wind_Swept Style
- Weeping Style
- Twin Trunk Style
- Clump Style
- Group Planting Style
- Landscape Style.
- Multi Trunk Style
- Wield Fig Style
ট্যাগ: বনসাই গাছ, বনসাই গাছের দাম, বনসাই করার পদ্ধতি, বট গাছের বনসাই।
পরিশেষে বলা যায় বনসাই গাছ খুব লাভ জনক আবার বনসাই প্রেমিদের জন্য মন ভালো থাকার উপান। তাই যারা এ দুই ধরনের উদ্দেশ্যের সাথে আছেন আশা করি
উপরের আলোচনাটি তাদের জন্য বেশ উপকারি হবে।
বিঃদ্রঃ ভালো মানের বট গাছের বনসাই পেতে যোগাযোগ করুন।