প্রত্যেক দেশের তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুযায়ী কিছু দিবস পালিত হয়। যা তাদের নিজের দেশকে ফুটিয়ে তুলে
ভিন্ন আঙ্গিকে। তেমনি ভাবে বাংলাদেশের পালিত দিবস সমূহ আলাদা। আর এই দিবসগুলো নির্ধারন করি আমরা নিজে।
আমাদের ভৌগলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ইতিহাস, আর পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনায় কিছু দিবস প্রতি
বছর পালিত হয়। আর সেই দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনে। আজ আমরা
জানব বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ নিয়ে।
আজকে কি দিবস?
আমাদের প্রায় সব মাসে কিছু বিশেষ দিন থাকে। আর তাই প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন জাগে আজকে কি দিবস। কারন এই সকল
দিনে পালিত হয় নানা অনুষ্ঠান ও আয়োজন করা হয়, সভা, সেমিনার, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই এই দিবস আমাদের
জীবনে নানা প্রভাব ফেলে। আর তাই সবারই নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ দিবস গুলো জানা প্রয়োজন। এতে দেশের প্রতি
তার আবেদ ও অনুভূতি আরো বেগবান ও সংবেদশীল হয়। আর এদের মধ্যে কিছু কিছু দিবস আন্তর্জাতিকভাবেও বর্তমানে
পালিত হয়। যা আমাদের দেশকে অন্যান্য দেশে নিজের পরিচয়, ইতিহাস, ও ঐতিহ্য তুলে ধরে।
১. জানুয়ারি মাসে কি কি গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালিত হয়?
বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি। আর বাংগালীর জীবনে জানুয়ারি মাসের গুরুত্ব অনেক। এর সাথে জড়িত আমাদের ইতিহাস।
আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসের অনেক দিবসের সাক্ষী এই জানুয়ারি মাস।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ ই জানুয়ারি
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তার জীবন দিয়ে এই দেশ এর সেবা করে গেছেন। তার ঘটনাবহুল জীবনের
একটি অন্যন্য দিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন। এই ১০ ই জানুযারি দীর্ঘ ১০ মাস কারাভোগের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থ্যাৎ নিজ
দেশে তিনি ফিরে আসেন আর তার এই ফিরে আসা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত্য শুভ দিবস ছিল। কারন তাতে রাষ্ট্র হিসেবে
আজ আমরা এই স্বাধীনতা ভোগ করছি।
জাতীয় শিক্ষক দিবস ১৯ জানুয়ারি
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক তার কান্ডারি। আর তাই ২০০৩ সালে ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার শিক্ষকদের অধিকার,
মর্যাদা ও মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য এই দিনকে জাতীয় শিক্ষক দিবস রুপে পালন করে। যদিও আন্তর্জাতিক ভাবে ৫ অক্টোবর
শিক্ষক দিবস। তবে আমাদের দেশে এই দিন্টি ১৯ জানুয়ারি অনেক আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়।
শহীদ আসাদ দিবস ২০ জানুয়ারি
বাংলার রক্ত ঝরা ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। ১৯৬৯ সালের এই দিনে অর্থ্যাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শাসকের পতনের আন্দোলনের
ডাকে সারা দিয়ে রাজপথে নামে আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান যাকে আসাদ নাকে ডাকা হয়। আর এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে
নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে শাসক গোষ্ঠি। আর তাতে প্রাণ যায় শহীদ আসাদের। আর তাই এই দিন শহীদ আসাদ দিবস রুপে
পালিত হয়।
গণ অভ্যুত্থান দিবস ২৪ জানুয়ারি
১৯৬৯ সালের সরকার পতনের ডাকে বাংলার সব দামাল ছেলেরা নেমে পড়ে রাস্তায়। তাদের এই তীব্র প্রতিবাদ দেখে ভয়ে
সরকারের নির্দেশে গুলি চালানো হয় আমাদের দেশের ছাত্রদের উপর। আর তাতে শহীদ হন মতিউর, রুস্তম। আর তাদের এই
ত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি পালিত হয় গণ অভ্যুত্থান দিবস।
২. ফেব্রুয়ারি মাসের দিবস সমূহ
ফেব্রুয়ারি মাস বাংলা ভাষা ভাষি জনগনের জন্য খুবই ঘটনা বহুল এক মাস। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারি
মাস অন্যতম। ভাষার মাস রুপে পরিচিত এই মাসের ভূমিকা আমদের কাজে অমলিন।
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ৫ ফেব্রুয়ারি
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর মন্ত্রীসভার বৈঠকে ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষনা
করেন। আর তারই ফলস্রুতিতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। এই দিন পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল
জনগনকে পাঠ দানের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। আর একই সাথে পাঠের অভ্যাস বৃদ্ধি করে মননশীল জাতি গঠনে ভূমিকা রাখা।
সুন্দরবন দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি
সবাই জানে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি হল ভেলেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তবে বাংলাদেশের ভালোবাসার জায়গা বিখ্যাত
সুন্দরবন। যাকে ঘিরে আমাদের অনেকের জীবিকা নির্ভর করে। এছাড়া আমাদের পরিবেশের অনবদ্য এক অংশ এই সুন্দরবন।
আর তাই ২০০১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালইয়ের প্রায় ৭০ টি পরিবেশবাদী সংঘটন এর উদ্যোগে ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন
দিবস রুপে ঘোষণা করা হয়। আর তা পর প্রতি বছর নানা আয়োজনে পালিত হয় এই দিবস। যাতে কোন প্রতিপাদ্য নির্ধারণ
করা হয়। সুন্দরবন সুরক্ষায় আমাদের এই পথ চলা অতি দীর্ঘ।
শহীদ দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সব শ্রেণির লোক রাস্তায় নেমে পড়ে। তাতে
ছাত্র ও যুবকের সংখ্যা ছিল বেশি। তাদের এই আন্দোলনে তখনকার শাসক শ্রেণি নির্বিচারে গুলির নির্দেশ দেয়। আর তাতে
প্রাণ যায় সালাম, রফিক, বরকতঁ, জব্বার সহ অনেকের। আর তাদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই দিনটি শহীদ দিবস বা
মাতৃভাষা দিবস রুপে পালন করা হত। তবে তা এখন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত প্রাপ্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে
বর্তমানে পালন হয় সারা বিশ্বে।
জাতীয় ডায়াবেটিস দিবস
১৯৫৬ সালে ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি গঠন করেন। আর ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সচেতনতা
আর প্রতিরোধে জনগনকে উৎসাহী করতে এই দিবসের প্রচলন শুরু। আর প্রতি বছর কোন একটি প্রতিপাদ্যের উপর ভিত্তি
করে আয়োজিত হয় নানা সভা, সেমিনার ও র্যালী। তবে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ১৮ ই নভেম্বরে অনিষ্ঠিত হয়।
৩. মার্চ মাসে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সবচেয়ে ঘটনা সম্বলিত মাস হল মার্চ মাস। এই মাসেই শুরু হয় জাতি হিসেবে আমাদের রক্ত
ক্ষয়ী সংগ্রাম ও সংঘর্ষ। আর তাই এই মাসের প্রভাব ব্যক্তি ও জাতীয় ভাবে অনেক।
জাতীয় পাট দিবস ৬ ই মার্চ
বাংলার সোনালী আঁশ বলা হয় পাটকে। পা্ট চাষের জন্য বিশ্বে অন্যতম। পাটের জিনোম সিক্যুয়েন্স আবিষ্কার করে বাংলাকে
বিশ্ব দরবারে আরো উঁচুতে উঠিয়েছে এই পাঠ শিল্প। আমদের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারি এই পাটের গুরুত্ব তুলে
ধরার জন্যই এই দিবসের প্রচন শুরু হয়।
ঐতিহাসিক দিবস ৭ ই মার্চ
১৯৭১ সালের রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আর যার
ফলে আমাদের আজ এই বাংলাদেশের সূচনা। আর তাই এই দিনকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর তার
এই ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিশু দিবস ১৭ ই মার্চ
২০১১ সাল থেকে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গ্বন্ধুর জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমাদের এই বাংলাদেশ
স্বাধীনে তার ভুমিকার কথা অস্বীকার করা যায় না। আর তাই নানা উদ্যোগে তার সাথে জড়িত দিবস গুলো আমাদের জন্য
জানা জরুরী। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশু দিবস ঘোষণা করেছেন
স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবস ২৬ শে মার্চ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। ১৯৭১ এর ২৬ শে মার্চ বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমে তার
হয়ে স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়। আর তার ফলেই দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিনতি আজকের এই মুক্ত বাংলাদেশ। আর
তাই এই দিন কে স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবস রূপে পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠান, র্যালী, সভা, সেমিনার দিয়ে ঘটা করে
দিবসের উৎযাপন হয়।
জাতীয় দূর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ৩১ শে মার্চ
আমদের দেশ ভৌগলিক দিক বিবেচনায় নানা দূর্যোগপূর্ণ এক দেশ। যেখানে প্রতি বছর বন্যা, জলোচ্ছাস সহ নানা দূর্যোগে
পতিত হয়। আর তাই এই নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩১ শে মার্চ জাতীয় দূর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে পালিত হয়।
আর এতে প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে প্রস্তুতি নিয়ে আর সচেতনতা নিয়ে।
৪. এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের দিবস সমূহ
এপ্রিল মাস বাংলা মাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলা মাস মানেই বাঙালীর নানা দিবস আর উৎসবের মাস। তাই এই মাস
ঘিরে শুরু হয় নানা আয়োজন মাসের প্রথম দিন থেকেই।
জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২ রা এপ্রিল
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও অটিজম বা প্রতিবন্ধী সমস্যা একটি বিরাট সমস্যা। কারন তাদের সঠিকভাবে শিক্ষা
ও বেড়ে উঠার জন্য চাই একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি। আর চাই সবার সচেতনতা। তাই আমাদের দেশে এই নিয়ে সচেতনতা
বাড়ানোর জন্য চালু হয় জাতীয় প্রতিবন্ধী দিসব। নানা আয়োজন, সিমিনার ও র্যালির মাধ্যমে উৎযাপিত হয় এই দিবসটি।
বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস ৮ ই এপ্রিল
স্কাউটস শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্যদের একটি সুষ্ঠ জীবন শিক্ষা দেয়। এর ফলে জীবন ও কর্মে আসে শৃংখলা। আর তারই
ধারাবাহিকতায় চালু হয় বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস। নানা রকম অনুষ্ঠানের মধ্যে পালিত হয় এই দিনটি। যাতে মানুষের ভিতর
স্কাউটস নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
বৈসাবি বা চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব ১ ই এপ্রিল
বাংলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির উৎসব এই বৈসাবি বা চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব তিন দিন ধরে পালিত হয়। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের
শুরুর আহ্বানে পালন হয় এই দিনটি। এটি তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আর বর্তমানে তা অন্যান্যদের কাছেও বেশ লোকপ্রিয়
হয়ে উঠেছে। যাতে থাকে নানা ধর্মীয় নিয়ম চারণও।
পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ১৪ ই এপ্রিল
বাঙালীর প্রাণের উৎসব বাংলা মাসের প্রথম দিন। নাচ, গান, আনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিন বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। সবাই
এই দিনে পান্তা ইলিশ খায়। এছাড়া গ্রামে নানা পিঠা পুলির আয়োজন করে দিবসটি পালন করে লোকজন। ব্যবসায়ীরা হালখাতার
আয়োজনে নতুন বছরের শুরু করে। মিষ্টি ও ফলমূল দিয়ে তারা গ্রাহকদের আপ্যায়ন করে।
মুজিবনগর দিবস ১৭ ই এপ্রিল
বাংলাসেশ সরকারের মুজিব সরকার ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে বর্তমানের মেহের পুরে শপথ গ্রহন করেন। নির্বাচনে
জিতে গঠিত প্রথম বাংলার সরকার হল শেখ মজিবুর রহমানের এই সরকার। আর তাই এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এই
দিবস উৎযাপন করা হয়।
৫. মে মাসে উৎযাপিত দিবস গুলো
শ্রমিক ও সাধারন জনগনের অধিকার আদায়ে মে মাসে নানা দিবস পালন করা হয়। এছাড়া এই মাসে নানা জ্ঞাণী গুণির
জন্মদিন থাকায়, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
১ লা মে মে দিবস
শ্রমজীবিদের অধিকার আদায় ও সুরক্ষার জন্য এই দিবসটি। নানা রকম র্যালির মাধ্যমে শ্রমিকদের তাদের অধিকার নিয়ে
সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। আর এই দিনে সব শ্রমিকদের সাধারন ছুটি দেয়া হয়। ৮ ঘন্টা কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে
প্রান দেয় অনেক শ্রমিক। আর তাই অধিকার আদায়ে যেন শ্রমিকরা সচেষ্ট থাকে তাই দিবটি প্রচলন করা হয়েছে।
রবীন্দ্র জয়ন্তী ৯ মে
বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের জন্ম ২৫ শে বৈশাখ, ৯ ই মে। আর তা ঘিরে গান, স্মরণ সভা সহ
নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয় এই দিবস। তার অবিনশ্বর কৃর্তী সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই দিন ঘিরে নানা
কর্মসূচী করা হয়। যাতে সবাই তার সম্পর্কে জানতে পারে।
ফারাক্কা দিবস বা ফারাক্কা লং মার্চ দিবস ১৬ ই মে
বাংলার জনগনের বন্ধু মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশে প্রবাহিত ভারতের গঙ্গার ন্যায্য পানি বন্টনের অধিকার
আদায়ের জন্য ১৬ ই মে এক ঐতিহাসিক লং মার্চে অংশ গ্রহন করেছিলেন। আর তারই ফলস্রুতিতে ফারাক্কা বাঁধ ও ন্যায্য
পানির সুবিধা অর্জিত হয়। আর তাই এই দিন ফারাক্কা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
জাতীয় নৌ নিরাপত্তা দিবস ২৩ মে
নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তাই প্রতি নিয়তই পড়তে হচ্ছে
নানা দূর্ঘটনার কবলে। আর তা থেকে জনগনকে নিরাপদ ও সুরক্ষা প্রদান করতে ২০১৬ সালে তথ্য মন্ত্রী ইনু ও অন্যান্য
সভাসদ মিলে ২৩ শে মে কে জাতীয় নৌ নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নজরুল জয়ন্তী ২৪ শে মে
জাতীয় কবি ও সংগ্রামী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বার্ষিকি ঘিরে পালিত হয় এই দিবস। নাচে, গানে, স্মরণ সভার
মাধ্যমে অনিষ্ঠিত হয় এই দিন।
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস ২৮ শে মে
স্বল্প উন্নত দেশ হিসেবে আগে আমাদের মাতৃত্ব কালীণ নানা সমস্যায় প্রায় মা ও গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু ঘটত। আর তাই
সচেতনতা বাড়াতে ও নিরাপদে নারীর মাতৃকালীন বিপদ সমূহ মোকাবিলা করতে এই দিবসের সূচনা।
৬. জুন মাসের উল্লেখ্যযোগ্য দিবস
জুন মাসে তেমন বেশি দিবস উৎযাপন করা হয় না। তবে যে দিবস গুলো এই মাসে আছে তা আমাদের অর্থনৈতিক ও
রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
চা দিবস ৪ জুন
বাংলাদেশ চা উৎপাদনে বিশ্বে দশম অবস্থান লাভ করেছে ২০২১ সালে। চা উৎপাদনে আমাদের দেশের এই উত্তরন কারন
আমরা চা এর বাগান , মাটি, ও গুণগত মান নিয়ে অনেক বেশি যত্নশীল। চা কে ঘিরে গড়ে উঠেছে আমাদের বিরাট
অর্থনৈতিক অঞ্চল। আর তাই আমদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিবসের প্রচলন শুরু হয়।
ছয় দফা দিবস ৭ ই জুন
বাংলার অধিকার সুরক্ষায় ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ৬ দফা দাবির আন্দোলন করেন। আর এই আন্দোলনের
পক্ষে মিছিল করতে গিয়ে সেই দিন প্রাণ হারায় ১১ জন নিরাপরাধ মানুষ। আর তার ই ফলস্রুতিতে এই দিবস চালু হয়েছে।
পলাশী দিবস : ২৩ জুন
৭. জুলাই মাসের বাংলাদেশের দিবস সমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস : ১ জুলাই
১৯২১ সালের এই দিনে নবাব সলিমুল্লাহর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৮. আগস্ট মাসের দিবস গুলো
জাতীয় জ্বালানী নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয় ৯ ই আগস্ট। আমাদের দেশে জ্বালানী হিসেবে গ্যাস বেশ প্রচলিত। কারন
আমাদের আছে অনেকগুলো গ্যাস খনি। এছাড়া কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই দিবসটি পালিত হয়।
যাতে মানুষ জ্বালানী সম্পর্কে সচেতন হয়। আর এর সুরক্ষায় এগিয়ে আসে।
জাতীয় শোক দিবস হল ১৫ ই আগস্ট। এই দিনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে
নৃশংস ভাবে হত্যা করা করা হয়। যা ইতিহাসে কালো দিন রুপে সবাই মনে রাখবে। আর তাই এই দিনে ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমে
জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
ফেসবুক স্ট্যাটাস:
৯. সেপ্টেম্বর মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিবস
ততকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার শিক্ষার সংকোচন নীতি মালা তৈরি করে। আর তা চাপিয়ে দেয় জনগনের উপর। আর
তাই এর প্রতিবাদে ও গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর জন্য এক প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হয়েছিল। আর তাতে ১৯৬২ সালে
সরকারের নির্দেশে নিরাপরাধ জনগনের উপর নির্বিচারে গুলিতে মারা যায় অনেক মানুষ। আর এই দিনের স্মরণে তাই পালিত
হয় ১৭ ই সেপ্টেম্বরে মহান শিক্ষা দিবস।
১৯৩২ সালে ২৩ শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আত্মহুতি দেন দেশের স্বাধীনতার জন্য।
তার এই আত্মহুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানতে এই দিনটি প্রীতিলতা আত্মহুতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। তার ঐতিহাসিক সংগ্রামের
কাহিনী আজও সবাইকে দেশ সুরক্ষায় উৎসাহি করে তুলে।
১০.অক্টোবরে পালিত দিবস সমূহ
৬ ই অক্টোবর বাংলাদেশে পালিত হয় জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস। স্বাধীনতার পরবর্তিতে বাংলাদেশের মানুষের
জন্ম ও মৃত্যু হার চেক করতে চালু করা হয় এই দিনটি। যেন সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় লোক সংখ্যা গণনায়। কারন
সঠিক ভাবে হিসাব না থাকলে সম্পদ ও অন্যান্য সুবিধার সুষ্ঠ বন্টন অসম্ভব।
আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানুষ স্বীকার হয় সড়ক দূর্ঘটনায়। আর তা প্রতিরোধে ও সড়ক আইন সুনিশ্চিত করতে চালু
হয় ২২ শে অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস। পথ যাত্রীর সুবিধা, অসুবিধা, আর অধিকার নিশ্চিত করনে এই দিবসের
ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১১. নভেম্বরে উৎযাপিত দিবস গুলো
নানা ঘটনাবহুল দিবসে পরিপূর্ণ নভেম্বর মাস। জাতীয় জীবনে এই মাসের গুরুত্ব অনেক। নানা ভাব গাম্ভীর্যে পালন হয়
এই মাসের অনেকগুলো দিন। আর তাদের মধ্যে কিছু দিবস হলঃ
জাতীয় যুব দিবস ১ নভেম্বর
‘প্রশিক্ষিত যুব উন্নত দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’-
এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশব্যাপী ১ নভেম্বর দিবসটি উদযাপন করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় যুব দিবস উদযাপিত হয়।
বিঃদ্রঃ যুব দিবস উপলক্ষে তরুণ যুবকদের সেবামূলক কাজে ভোলান্টিয়ার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে Shebaru Helpline
জাতীয় সমবায় দিবস
নভেম্বরে প্রথম শনিবার প্রতি বছর নানা আড়ম্বরে উৎযাপিত হয় জাতীয় সমবায় দিবসটি। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ।
তাই কৃষি নির্ভর এই দেশে সমবায় প্রথা চালুর মাধ্যমে কাজের সুষম বন্টন সুনিশ্চিত হয়। আর কাজের গতি বাড়ে ও সফলতা
তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে। আর সেজন্য সমবায় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে এই দিনের সূচণা হয়।
জেল হত্যা দিবস ৩ নভেম্বর
স্বাধীনতার পরবর্তিতে ১৯৭৫ সালে জাতীয় চার নেতাকে জেল হজতে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। আর তাদের এই আত্মত্যাগ
এর কথা স্মরণ করে রাখতে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস পালন করা হয়। এই দিনে তাদের অবদান ও দেশ প্রেমের কথা
স্মরণ করা হয় , যাতে এখনকার যুব সমাজ তা জানতে ও শিখতে পারে। যা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ এর একটি।
সংবিধান দিবস ৪ নভেম্বর
আমাদের দেশ স্বাধীন হবার পরে আমাদের নিজস্ব সংবিধান রচনা করেন আমাদের বুদ্ধিজীবি, আইন প্রণেতা, রাজনৈতিক বৃন্দ,
ও অন্যান্যরা সবাই মিলে। আর তা সংসদে পাস হয় ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। তাই স্বাধীন বাংলার এই অমর কীর্তি স্মরণ এর
লক্ষ্যে এই দিনকে সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষ্ণা করা হইয়েছে। এটিও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ এর অন্যতম।
নূর হোসেন দিবস বা স্বৈরাচার বিরোধী দিবস ১০ নভেম্বর
বাংলাদেশ মুক্ত হবার পরে নানা সরকার এসেছে। তার মধ্যে এরশাদ সরকার পতনে বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে যায়।
যার ফলে স্বৈরাচার শাসক এরশাদ তার ক্ষমতা ধরে রাখতে মিছিলে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। যাতে মারা যার
নূর হোসেন। তার এই আত্মত্যাগ এর কথা তুলে ধরতে এই দিবস পালন করা হয় নানা আয়োজনে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২১ নভেম্বর
আমাদের সংগ্রাম ও দেশ সুরক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। আর তাই তাদের অবদান এর জন্য ২১ শে নভেম্বরকে
সশস্ত্রে বাহিনী দিবস ঘোষণা করা হয়। নানা আয়োজন ও সভার মাধ্যমে এই দিনকে স্মরণ করা হয়।
জাতীয় আয়কর দিবস ৩০ শে নভেম্বর
আমাদের দেশে কর আয় করা আগে খুব কঠিন ছিল। তবে জাতীয় আয়কর দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষ অনেক সচেতন
হয়েছে। আর তাই মহাধুম করে প্রতি বছর ৩০ শে নভেম্বর পালিত হয় এই জাতীয় আয়কর দিবস। যাতে জনগণ উৎসব
মুখর পরিবেশে কর প্রদান করে আর তা সম্পর্কে ধারনা পায়।
১২. ডিসেম্বরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ
আজকের এই যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা বসবাস করছি তার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আর ডিসেম্বর
মাসে আমাদের সেই কাংক্ষিত সফলতা আসে। আর তাই জাতি হিসেবে এই মাস আমাদের কাছে অনেক বেশি স্মরণীয়।
জাতীয় বস্ত্র দিবস ৪ ডিসেম্বর
বস্ত্র শিল্পে আমাদের দেশ অনেক উন্নত। আর তার উপর আমদের অর্থনীতিতে এর অবদান অনেক। আর তাই বস্ত্র নিয়ে
আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও আলোচনা গতিশীল রাখতে প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বর পালিত হয় জাতীয় বস্ত্র সিবস।
বেগম রোকেয়া দিবস ৯ ই ডিসেম্বর
নারি শিক্ষায় বেগম রোকেয়া অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার উদ্যোগে নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ এই পর্যায়ে আসতে
পেরেছে। আর তাই ৯ ডিসেম্বর তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাকে স্মরণের মাধ্যমে তার অবদানের কথা সবার মাঝে ছড়িয়ে
দেয়া হয়। যাতে শিক্ষায় তারা তাকে অনুপ্রেরণা রুপে নিতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ১২ ডিসেম্বর
বর্তমান বিশ্ব হল ডিজিটাল নির্ভর। আর তাই আমদের সরকার দেশকে বিশ্ব মঞ্চে আরো শক্তিশালী করতে ডিজিটাল যুগে
নিজেকে গড়ে তুলছে। আর ডিজিটাল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলার লক্ষে সরকারের এই উদ্যোগকে আরো বেগবান করতে
পালিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস।
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস ১৪ ই ডিসেম্বর
আমদের স্বাধীনতার ইতিহাতে অন্যতম কালো দিন ১৪ ই ডিসেম্বর। কারন এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে
নিরাপরাধ বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। আর পংগু করে দিতে চেয়েছিল আমাদের পুরো জাতিকে। আর তাদের এই আত্মত্যাগ
এর ফলে মুক্ত স্বাধীন বাংলার স্বাদ নিতে পারছে আপামর জনগন। আর তাই এই দিন শহীদ বুদ্ধিজীবিদের স্মরণে স্মরণসভার
আয়োজন করা হয়।
বিজয় দিবস ১৬ ই ডিসেম্বর
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে অর্জিত হয় আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ। আর বাংলার ইতিহাসে বাংলাদেশের
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস হল ১৬ ই ডিসেম্বর। যা বিজয় দিবস রুপে পালিত হয়। এটি আমাদের গৌরবের দিন। যার জন্য
আমরা আজ মুক্ত।
উপরের এই দিবস বাংলাদেশে পালিত দিবস সমূহের মধ্যে অন্যতম।এছাড়াও আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালন করা হয়।
আর এই প্রত্যেকটি দিবস নানা তাৎপর্য বহন করে আমাদের জীবনে। তাই এই দিবস সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
তাতে আমারা জাতি ওব্যক্তিহিসেবে আরো সমৃদ্ধ হব। আশাকরি আপনি এই দিবসগুলো সম্পর্কে জেনে নিবেন। আর পালনও করবেন।
সৌজন্য : চারুলতা ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্ম