ভ্রমণে কিছু রীতিনীতি রয়েছে। আর এ জন্য প্রয়োজন ভ্রমণ গাইড বা ভ্রমণ টিপস। ভ্রশণ টিপস অনুসরণ করলে ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক।
আসুন এবার দেখি দেশে- বিদেশে ভ্রমণ বিষয়ক গাইডলাইন কী কী জানার রয়েছে :
- বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি আন্তর্জাতিক বৈধ পাসপোর্ট। দেখে নেবেন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ঠিক আছে কিনা।
যখন ফর্ম আনতে যাবেন তখন ভিসা ফি লাগবে কিনা বা লাগলে কতটাকা প্রয়োজন তা অবশ্যই জেনে নেবেন। - পাসপোর্টের পেশা অনুযায়ী সেই পেশার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
- ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার এনডোর্সমেন্ট বা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট নেয়া।
- ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেয়া।
- যে দেশে ভ্রমণ করা হবে সেই দেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গাইড বই, রুট-ম্যাপ ইত্যাদি প্রথমেই সঙগ্রহ করা উচিত, তবে সেগুলো যেন সমসাময়িক হয়।
এ ব্যাপারে সে দেশের ট্যুরিস্ট বোর্ড, সে দেশের দূতাবাস এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। - ইউএস ডলারের চেয়ে ট্রাভেলার্স চেক ও ইউরো সঙ্গে নেয়া ভাল হবে অবশ্যই ট্রাভেলার্স চেকের ফটোকপি সঙ্গে নেয়া উচিত এবং আরেক কপি
পরিচবারের কাছে দেশে রেখে যাওয়া ভাল। - এয়ারপোর্টে ডলার বা ট্রাভেলার্স চেক (টিসি) বেশি পরিমাণে ভাঙাতে নেই। কারণ সেখানে রেট অনেক কম থাকে।
- আপনি যে এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক তাদের বিক্রয কেন্দ্র অথবা যে কোনও ট্রাভেল এজেন্ট থেকে টিকিট কিনতে পারেন।
বিমান ছাড়ার পর করণীয়
- বিমান ছাড়ার দু-ঘণ্টা আগে আপনাকে বিমানবন্দরে পৌঁছতে হবে। আপনার ব্যাগেজ সিকিউরিটি মেশিনের ভেতর দিয়ে পরীক্ষা করানো হলে কর্তব্যরত
ব্যক্তি আপনার ব্যাগেজে সিকিউরিটি ট্যাগ লাগিয়ে দেবেন। আপনি সরাসরি যে কাউন্টারে আসবেন সেখানে আপনার গন্তব্যস্থল এবং ফ্লাইট নম্বর দেওয়া
প্লেট লাগান হয়েছে। আপনি কোন ক্লাসে ভ্রমণ করবেন তাও ওই প্লেটে উল্লেখ থাকবে। আপনি যে ক্লাসের যাত্রী সে ক্লাসের কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ান।
মালামালের ওজন হলে আপনি বোর্ডিং কার্ড পাবেন। বোর্ডিং কার্ড পেলে আপনি এমবারকেশন ফর্ম নেবেন। সেটি পূরণ করে পাসপোর্টের সঙ্গে রাকবেন। - বিমানে ওঠার আগে কোন অসুখ থাকলে ডাক্তারকে বলুন দৈহিক ফিটনেস চেকআপের জন্য।
- উড়াল দেয়ার আগে ফিটনেস সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলে, এয়ারলাইন ডাক্তারকে পরীক্ষা করে দেখতে বলা উচিত।
- সঙ্গে বহন করুন ব্যক্তিগত আইডেনটিটি কার্ড। এতে থাকবে না, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, কোন অসুখ থাকলে (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ)
এর উল্লেখ, কোন এলার্জি থাকলে, কোন অসুখ থাকলে কি চিকিৎসা নিচ্ছেন, নিজের ডাক্তারের নাম, যোগাযোগের ফোন নম্বর এবং জরুরি অবস্থা হলে ঘনিষ্ঠ যে
ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তার নাম ও টেলিফোন নম্বর। - কোন ওষুধ গ্রহণ করে থাকলে তা পকেটে বা হ্যান্ড লাগেজে বহন করুন।
বিমান ভ্রমণে করণীয়
- সিট বেল্ট বাঁধা ও খোলার নির্দেশ কঠোরভাবে পালন করুন।
- ফ্লাইটে শরীর খারাপ হলে অবিলম্বে তা কেবিন ক্রুকে জানান।
- প্রতি ঘণ্টায় একবার প্লেনের ভেতর হাঁটুন।
- সবকিছুর সঙ্গে কমপ্রেসড বায়ুচাপ মিলে শারীরিক অবস্থা শোচনীয় করে তুলতে পারে। এজন্য ফ্লাইটে প্রচুর পানি ও পলের জুস পান করুন।
- যদি মোশন সিকনেস দেখা দেয়ার প্রবণতা কারও থাকে তা হলে ফ্লাইটে বোর্ড করার আধ ঘণ্টা আগে একটি এবোমিন বড়ি খাওয়া যেতে পারে।
- ফ্লাইটের অন্তত দু’ঘণ্টা আগে পেট পুরে খাবার না খাওয়া ভাল।
- সম্ভব হলে এয়ারক্রাফটের মধ্যভাগে সিট নিলে ভাল।
- ফ্লাইটে নিজেকে স্বস্তিকর অবস্থানে রাখা উচিত। পেছনে একটু হেলে বসুন। মাথা বেশি নাড়াচাড়া করবেন না। ব্যাকরেস্টে মাথা ফেলে রাখুন।
- সিটের ওপর এয়ারভেন্ট খুলে রাখুন, যাতে ঠা-া বাতাস শরীর মন সতেজ করতে পারে।
- বমিভাব হলে এয়ারসিকনেস ব্যাগ ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না। সিট পকেটেই সে ব্যাগ থাকে।
- ফ্লাইটের আগে এবং উড়ার সময় মদ ও কার্বনেটেড পানীয় পরিহার করুন।
- আপনি যে দেশে যাবেন সেখানকার এয়ারপোর্টেই নাম ও টেলিফোন নম্বর এবং তা শহরের কেন্দ্রস্থল/আপনার হোটেল থেকে কতদূরে এবং সেখানে যাবার বাস,
ট্রেন, মেট্রো, ট্যাক্সি ইত্যাদি করে যাবার ভাড়া ও সময় জেনে নেবেন।
যে গুলো ভালোভাবে জেনে নেবেন
- এয়ারপোর্টের কোন টার্মিনাল থেকে বিমান ছাড়ে তা পূর্বেই জেনে এয়ারপোর্টে পৌঁছেই সেখানকার তথ্যকেন্দ্র বা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে আপনার ফ্লাইট নম্বর ও এয়ারলাইনের নাম দেখে সেই এয়ারলাইনের উদ্দেশ্যে গিয়ে চেক ইন করাবেন, বোর্ডিং পাশ সংগ্রহ করবেন এবং সেই আপনি আপনার মাইলেজ কার্ড (যদি থাকে তবে তাদের তা জানাবেন) তারা আপনার মাইলেজ যোগ করে দেবে। ইমিগ্রেশন পার হবার পর আপনাকে দেয়া এয়ারলাইনে বোর্ডিং পাস দেখে নির্দিষ্ট গেটে যাবেন। গেট নম্বর দেখে সে অনুযায়ী সেদিকে যাবেন এবং ফাইনার বোর্ডিংয়ের পর বিমানে উঠে আপনার সিট নম্বর অনুযায়ী সেখানে বসবেন।
- একটি নির্দিষ্ট স্থানে যাবার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইনের বিমান রয়েছে এবং তাদের ভাড়াও বিভিন্ন।
- টিকেট কাটার জন্য ৫/৬টি ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে টিকেটের মূল্য, টিকেটের মেয়াদ জেনে নিন। বিভিন্ন মেয়াদি টিকেট রয়েছে।
টিকেট রিফান্ড পলিসি সম্পর্কেও জেনে নিন। টিকেটের তারিখ পরিবর্তন করা যাবে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করুন। অনেক টিকেট রয়েছে যা নন রিফান্ডবেল ও
তারিখ পরিবর্তন করা যায় না। সুতরাং টিকেট কাটার পূর্বে এসব তথ্য জেনে নিয়ে টিকেট কাটবেন। টিকেট কাটার পর যদি আপনার সেই এয়ারলাইনের মাইলস কার্ড
না থাকে তবে সে এয়ারলাইনের অফিস থেকে বা অনলাইনে বা বোর্ডিং কার্ড নেবার সময় আবেদন করুন।
ভ্রমণে হোটেল ভাড়া ও করণীয়
- বাংলাদেশে বিভিন্ন দামের ও বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। আপনার সামর্থ অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করবেন। হোটেলে ডিসকাউন্টের জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফান্ড রয়েছে যা থাকলে কম খরচে থাকা যায়। তবে হোটেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন হোটেলটি যেন নিরাপদ জায়গায় এবং এমন অবস্থানে থাকে যেন সেখান থেকে সহজে বাস, ট্রেন, মেট্রো ইত্যাদি পাওয়া যায়। হোটেলের ভিজিটিং কার্ড সবসময় সঙ্গে নেবেন। হোটেলের ও টেলিফোন নম্বর মুখস্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
- ভ্রমণের সময় নিজের সঙ্গে সবসময় ভিজিটিং কার্ড, ডাইরি, অর্গানাইজার, কলম ও ক্যামেরা রাখা উচিত।
- ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রশংসাপত্র বা সার্টিফিকেট (ইংরেজি কপি) সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত (বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে)।
- স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং গন্তব্যস্থলে কোন মহামারী বা ছোঁয়াচে রোগ থাকলে প্রয়োজনীয় টিকা নিয়ে যাওয়া উচিত। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নেয়া উচিত।
- আপনার লাগেজ যথাসম্ভব হালকা হওয়া উচিত। লাগেজ যত ছোট হবে ভ্রমণ তত আনন্দদায়ক হবে।
- কোন দেশের জাতীয় বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিক বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কিছু করা ঠিক হবে না।
- যেখানে যাবেন সেখানকার ভাষা, সামাজিক নিয়মকানুন ইত্যাদি মেনে চলুন। বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন। বিদেশী ভাব পরিহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশার আগ্রহ থাকলে দেখবেন তারা আপনাকে আপন ভাবছে, বন্ধু মানছে।
ভ্রমণের সময় গভীর রাতে কখনও একা বের হওয়া উচিত নয়।
ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে আরও কিছু দরকারী তথ্য
১. টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, নেইলকাটার, ব্লেড।
২. রেজার, শেভিংফোম, আফটার শেভ (পুরুষদের ক্ষেত্রে)
৩. চিরুনি, ব্রাশ, শ্যাম্পু, তেল, হেয়ার ড্রায়ার (যদি লাগে)
৪. সাবান, ফেসওয়াশ, লোশন, সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার, তোয়ালে, ছোট আয়না ও অন্যান্য প্রসাধনী (যদি ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে)
৫. চশমা ব্যবহার করলে একসেট চশমা, সানগ্লাস।
৬. যদি হয় শুধুই ঘোরাঘুরি তাহলে বাড়তি কাপড় না নেয়াই ভাল। রাতে শোয়ার জন্য নরম সুতির পোশাক, সব সময় ব্যবহারের জন্য দুটি জিনস আর সুতির দুতিনটা শার্ট। মেয়েদের জন্য ফতুয়া, কামিজ, ওড়না বা স্কার্ফ। অন্তর্বাস কমপক্ষে দু-তিন সেট। শীতের দিন হলে অবশ্যই গরম পোশাক-স্যুয়েটার, মাফলার, জ্যাকেট, হাত মোজা, পা মোজা।
আর ঘোরাঘুরির সঙ্গে যদি কাজও কিছু থাকে তাহলে দু-এক প্রস্থ ভাল পোশাক নেয়া উচিত।
ভ্রমণের আরও কিছু দরকারী টিপস
৭. পানির বোতল, শুকনো প্যাকেটজাত খাবার।
৮. টাকা রাখার জন্য বেল্ট বা লুকানো পার্স বা পকেট। যেখানে টাকা রাখলে হারানোর বা চুরি যাওয়ার ভয় থাকে না।
৯. ছোট টর্চ, বাড়তি ব্যাটারি, কলম-পেন্সিল নোটবই, সুই-সুতা, বোতাম, প্রয়োজনীয় ফোন নাম্বর ঠিকানা লেখা নোটবুক।
১০. ঠা-া-জ্বর-মাথাব্যথার ওষুধ, স্যাভলন ক্রিম, ব্যান্ডজ মোট কথা ফার্স্টএইড বক্স। জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (যদি লাগে)।
১১. দেশের বাইরে গেলে সম্ভব হলে ল্যাপটপ কম্পিউটার এবং রোমিং মোবাইল ফোন।
১২. পাসপোর্ট ভিসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি।
১৩. নিতে পারেন ক্যামেরা ছোট রেডিও, ছোট অ্যালার্ম দেয়া ঘড়ি, হালকা ধরনের বই বর্ষা হলে ফোল্ডিং ছাতা, রেইন কোর্ট, ছুরি, চামচ ক্যাপ অ্যালাইন প্যাকেটসহ প্রয়োজনীয়।
১৪. ভ্রমণে যাবার আগে বাড়ির গ্রাসের চুলা, পানির কল, বিদ্যুতের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করবেন।
ভ্রমণ টিপস
ভ্রমণে কিছু রীতিনীতি রয়েছে। এ ব্যাপারে যে যত বেশি জানবেন এবং নিয়ম মেনেচলবেন, তার ভ্রমণ হবে তত নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। আসুন একবার দেখি কী কী জানার রয়েছে :
বিজ্ঞাপন:
বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসা, মেডিকেল ভিসা ও জব ভিসা সংক্রান্ত ১২ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছে ট্রাস্ট গ্লোবাল স্টাডি লিঃ ও অ্যামেজিং গ্লোবাল
ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস । ঠিকানা: হেড অফিস- R H Home Centre, Room 511 (5th Floor, 74/B/1 Green Rd, Dhaka 1215, Bangladesh.
মোবাইল: ০১৭৯০৫৫০০০০, টেলিফোন: ০২৪৪৮১৫২৮১
সংকলনে: আবু জাফর রাজু, ভিসা কনসালটেন্ট ( ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর)।
লেখাটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বিজ্ঞপ্তি: লেখাটি হুবহু কপি না করার জন্য অনুরোধ করছি। সাহায্যের জন্য বা রেফারেন্স হিসেবে অংশ বিশেষ ব্যবহার করতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে এই পোস্টের লিংক প্রদানের অনুরোধ করছি। লেখকের কষ্টের মূল্য প্রদানে আপনার বিবেকের প্রতি আরজি রইল।