মহররমের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ১০ মহরম এর ইতিহাস ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি খুব শোকাবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা।
এদিনেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতি ইমাম হোসেন কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ হন।
এদিনটিকে পবিত্র আশুরা বলা হয়। এছাড়াও এ দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাই সাল্লাম কে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এ দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মতামত আছে।
মহররমের ইতিহাস
মহররম বা মহরম বা মুহররম এর আরবি: محرم ।মহররম হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। আরবী চারটি পবিত্রতম মাসের মধ্যে এটি একটি।
মহররম যার অর্থ পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মহররম মাস পবিত্র হিসাবে বিবেচিত। মহররমের ১০ তারিখ আশুরা বলা হয়ে থাকে।
প্রচলিত আছে আশুরার দিনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
- এই দিনে হযরত মূসা আঃ ও তার সাথীরা ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার পান।
- আদম-কে এদিনেই জান্নাতে স্থান দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে এই দিনেই পৃথিবীতে পাঠিয়ে নবী করা হয়।
- হযরত নূহ-এর সময়ে এই দিনে মহাপ্লাবন হয়।
- হযরত ইব্রাহীম আ. জন্ম নেন।
- মুসা আঃ এর শুত্রূ ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে আল্লাহ তায়ালা এই দিনে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারেন।
- হযরত ইউনুছ আঃ মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এই দিনে।
- হযরত আইয়ূব আঃ রোগ মুক্তি পান এই দিনে।
- ঈসা আঃ এই দিনে জন্ম নেন এবং পরবর্তিতে তাকে সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে এই দিনে উঠিয়ে নেয়া হয়।
- নবী মুহাম্মদ সা: এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন এই দিন কারবালার ময়দানে ইয়েজিদের সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: শুক্রবারের আমল ও জুমআর দিনের ফজিলত
পবিত্র আশুরা ৯ আগস্ট ২০২২
৯ আগস্ট সারা দেশে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। হিজরি মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরায় বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে।
এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুসার বিজয়ের স্মরণে আশুরার সাওম বা রোজা পালন করত। তবে শিয়া আশুরার পূর্ব ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে।
এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।
মহরমের রোজা কয়টি?
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ; যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।
মহা নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ। আর এর মাধ্যমে ইয়াহুদিদের বিরোধিতা কর, আশুরার ১দিন আগে কিংবা ১দিন পরে রোজা রাখ।’ (ইবনে খুজায়মা)
অর্থাৎ সে হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর আশুরা। যারা ৯ মুহররম রোজা রেখেছে তারা ১০ মুহররম রোজা রাখার মাধ্যমে ২টি রোজা পূরণ করবেন। যারা ৯ মুহররম রোজা রাখেনি, তারা ১০ মুহররম ও ১১ মুহররম রোজা রেখে হাদিসের ওপর আমল করবেন।
আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে নবীজি (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের এই দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলেন। জানতে পারলেন—এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের জেলখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।
মহানবী (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। এরপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম মিলিয়ে ২টি রোজা রাখতে বললেন। কারণ, ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যেন সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)।
আশুরার রোজা রাখার চারটি নিয়ম রয়েছে
প্রথম থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১০টি রোজা রাখা। তা সম্ভবপর না হলে ৯, ১০ ও ১১ তারিখ মোট ৩টি রোজা রাখা।
তাও সম্ভব না হলে ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ মিলিয়ে ২টি রোজা রাখা। এটাও সম্ভব না হলে শুধু ১০ তারিখে ১টি রোজাও রাখা যাবে। যদি কেউ শুধু ১০ তারিখে রোজা রাখেন এবং ৯ বা ১১ তারিখ রাখতে না পারেন; তবে এই ১টি রোজার জোড়া মেলানোর জন্য অন্য দিন রোজা রাখার প্রয়োজন হবে না।
আরও পড়ুন: রোগ থেকে মুক্তির দোয়া : কোরআন ও হাদিস থেকে
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ১০ মুহররম আশুরার রোজা রাখার তাওফিক দিন। আমিন।প্রবন্ধটি শেয়ার করুন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।