রোমানিয়া কাজের ভিসা পাওয়া বর্তমানে বাংলাদেশীদের জন্য স্বপ্নের মত। কারণ ইউরোপের এ দেশটি খুব শিঘ্রই সেনজেনভুক্ত হতে চলেছে। এবং রোমানিয়া থেকে অন্যান্য সেনজেনভুক্ত দেশে যাওয়া খুব সহজ। সাধারণত আমরা যে প্রশ্নগুলো বেশি পাই তা হল,
কি কি ক্যাটাগরি তে কর্মী নিবে। কি কি ডকুমেন্টস লাগবে। কত বেতন পাবেন। কাজ কত ঘন্টা করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিসার মেয়াদ কত বছর। সপ্তাহে ছুটি কয়দিন। ওয়ার্ক পারমিট হতে কতদিন সময় লাগবে। নিচে রোমানিয়ার ভিসা সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরছি। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।
রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের কাজের ভিসা নিয়ে যাওয়া শুরু হয়ে অল্প কিছু দিন থেকে৷ যারা ইতোমধ্যে সেখানে গিয়েছে তারা প্রায় সকলে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন৷ মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে নতুন লোক নেয়া বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীরা রোমানিয়ার দিকে ঝুকেছেন।
২০২২ বাংলাদেশ রোমানিয়া ভিসা
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রোমানিয়ার জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (জিআইআই)’র বরাত দিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছে, বিগত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যাঘাত ঘটলেও এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ৪৭১ টি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে৷ যেটি ২০২০ সালে ছিল ৩৬৫৷
আইওএম হেডকোয়ার্টার জেনেভার গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র পল ডিলিয়ন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, “উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকদের কাজের ভিসা প্রদান নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ৷ এর মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলো যেমন শ্রমিক সংকট দূর করতে পারবে তেমনি শ্রমিকরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ভেঙে পড়া অর্থনীতি চাঙা করতে ভূমিকা রাখবে৷”
রোমানিয়া দেশ টি কেমন?
রোমানিয়া (Romania) একটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। রাজধানীর নাম বুখারেস্ট। রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সপ্তম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ । রোমানিয়ার উত্তর-পূর্বে ইউক্রেন ও মলদোভা, পশ্চিমে হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়া, দক্ষিণে বুলগেরিয়া ও দানিউব নদী রয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে এটি উসমানীয় সাম্রাজ্য অংশ ছিল । ২০০৪ সাল হতে ন্যাটোর সদস্য, এবং খুব দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে যাচ্ছে রোমানিয়া। আয়াতন হল ২৩৮.৪০০ বর্গ কিলোমিটার (৯২,০০০ বর্গ মাইল) । রোমানিয়ার জনসংখ্যার ১ কোটি নব্বই লাখের বেশি। এই হল সংক্ষেপে রোমানিয়া দেশ সম্পর্কে সংক্ষেপ বর্ণনা।
ভিসার খরচ কত?
৮ লাখ থেকে ৯লাখ টাকা মোট খরচ পড়তে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা দেওয়া হল। এর চেয়ে কম বা বেশিও হতে পারে।
কারণ এটা কাস্টমারের সাথে চুক্তির ধরণ অনুযায়ী ও অন্যান্য খরচের উপর ভিত্তি করে সময় সময় পরিবর্তন হয়।
এর মধ্যে থাকছে, ওয়ার্ক পার্মিট, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ও এয়ার টিকেট। কাস্টমারকে ইন্ডিয়া যেতে হবে না।
সময় কত দিন লাগবে?
রোমানিয়ার জব ভিসা পেতে সর্বসাকুল্যে ৩ মাস থেকে ৪ মাস লাগতে পারে।
ভিসা অনলাইনে চেক করা যাবে?
হাঁ, আপনি চাইলে আপনার পার্মিট টি রোমানিয়া সরকারের নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে ভিসার পারমিট টি চেক করে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বর্তমানে যে সকল দেশের জব ভিসা পাওয়া যায়
টাকা কি আগে না ভিসার পরে দেবেন?
দুরকম সিস্টাম আছে। একটি হল যখন যে পরিমাণ টাকা লাগবে সেটি সময় সময় দেওয়া। অন্যটি হচ্ছে, কন্টাক বেসিস।
এ পদ্ধতিতে টাকা ভিসা হাতে পাওয়ার পর দিতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ একটিু বেশি পড়ে।
বয়স কত লাগে?
রোমানিয়ায় সাধারণত ২২ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বয়স হলে জব ভিসার আবেদন করা যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে কিছু কম হলেও চলে।
কাজের ধরন, যোগ্যতা ও বেতন?
২০২১ সালে রোমানিয়াতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি প্রবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত নির্মাণখাতে ব্যাপকভাবে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে৷ তাছাড়াও অনেকে বিভিন্ন কারাখানাতে শ্রমিক হিসেবে এবং কাঠমিস্ত্রী হিসেবেও কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মালিক ও কোম্পানির সাথে ভালো যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ পাওয়া যায়।
দেশে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যাওয়া খুব সহজ। তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য যেসব বৈধ পথ আছে সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা অর্থাৎ নিজের যোগ্যতা তৈরি করা৷ তাহলে বেতন বাংলাদেশী টাকায় ৩০০০০ হাজার টাকা থেকে ৫০০০০০ লক্ষ টাকা হতে পারে।
বিদেশে হোটেল জব ভিসার প্রচুর চাহিদা!
বিদেশে রন্ধনশিল্পীদের কাজের অপার সম্ভবনা রয়েছে। অর্থাৎ যারা বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে খাবার রান্না করে তাদের চাকরির সুযোগ বেশি।এ পেশার লোককে শেফ বলা হয়।
মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে এমন কি মালদ্বীপ, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে একজন প্রফেশনাল শেফের মাসিক বেতন বাংলাদেশী টাকায় কমপক্ষে ষাট থেকে সত্তর হাজার টাকা।
এ পেশার লোকদের ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা সংক্রান্ত জটিলতাও অনেকাংশে কমে হয়। তবে যারা রন্ধন শিল্পটাকে ভালোবাসে তাদের জন্য এটা খুব ভালো।
এ পেশায় জব ভিসা নিতে চাইলে আগে পুষ্টিকর ভালো ভালো রান্নার রেসিপি জানতে হবে।
বিদেশে ফাইভস্টার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, কফিশপ, ইত্যাদিতে চাকরির জন্য বা ট্রেনিং এর জন্য আমাদের ইউটিউব ও ফেসকুকের সাথেই থাকুন।
রোমানিয়া কাজের ভিসা পেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা নানা রকম ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাদের মূল্যবান সময়, অর্থ এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় চাকরির মিথ্যা চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ার আগে বেশ কিছু জিনিস জেনে নেওয়া দরকার।
রোমানিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা
সত্যিকার অর্থে আলবেনিয়া, বসনিয়া, রোমানিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন প্রভৃতি দেশগুলি ইউরোপ মহাদেশের হলেও এসব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ইউররোপের ধনী দেশগুলোর মতো তেমন উন্নত না ।
রোমানিয়া থেকে অন্যদেশ যাওয়া কি সহজ?
অনেকেই মনে করেন কোনরকমে রোমানিয়ায় যেয়ে রোমানিয়ায় থেকে অন্য সেন্জেন কান্ট্রিতে পারি জমাতে চায়। আসলে বর্তমানে ইউরোপে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে চলছে ব্যাপক অভিযান। এর মধ্যেই গ্রিস, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ কঠিন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় অনেকগুলো অবৈধ অভিবাসনের রুট এখন পুরপুরি বন্ধ রয়েছে।
আবার যেকোন দেশে ধরা পড়লে সে দেশের পুলিশ আঙুলের ছাপ নিয়ে থাকে। ফলে একজন অভিবাসী চাইলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারে না। এর কারণ ডাবলিন বিধিমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তির প্রথম আঙুলের ছাপ যেখানে সে দেশেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দিতে হয়। পূর্বে ডাবলিন বিধিমালা অতটা শক্তভাবে প্রয়োগ হতো না। ফলে যে কেউ চাইলেই ভ্রমণ ভিসায় এসে আশ্রয় আবেদন করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে সেই সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন:
প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের রোমানিয়া কাজের ভিসা বিষয়ক লেখাটি আপনার কজে আসবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।