শবে কদর এর শব শব্দটি ফারসি। ফারসি ভাষায় শব মানে রাত; আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। মোট কথা শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত অথবা ভাগ্যরজনী।
শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত, মর্যাদা পূর্ণ রাত। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর।
প্রথম আয়াতের কদর শব্দটিকেই এর নামরূপে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সূরার মূল বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর আলোকে এটি মাক্কী সূরা বলেই বেশি ধারণা পোষণ করা হয়।
এটি পবিত্র কোরআনের ৯৭তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা মাত্র ৫ টি। রুকু সংখ্যা-১। কুরআন মজীদের মর্যাদা, মূল্য ও গুরুত্ব বুঝানোই এই সূরাটির মূল বক্তব্য।
লাইলাতুল কদর এর অর্থ
মুফতি মোহাম্মদ শফি রহমাতুল্লাহ আলাইহির তাফসীর মা\’আরেফুল কোরআন এ বর্ণিত হয়েছে কদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদর্শ হয়ে থাকে। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয় এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স মৃত্যু বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমান নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয় এমনকি এ বছর হজ করবে তাকে এসব কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় তারা হলেন ইসরাফিল মেকাইল আজরাইল জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ
১ ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
২ ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।
৩ লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
৪ তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
৫ ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর।
সূরা কদর এর বাংলা অর্থ
১ আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।
২ শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
৩ শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
৪ এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
৫ এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
লাইলাতুল কদরের শানে নুযুল
মুফতি মোহাম্মদ শফি রহমাতুল্লাহ আলাইহির তাফসীর মা\’আরেফুল কোরআন এ বর্ণিত হয়েছে ইবনে আবি হাতেম রাদিয়াল্লাহু এর রাতে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বনি ইসরাইলের জনৈক মোজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জেহাদে মশগুল থাকে এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করে নি মুসলমানগন একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয় এতে উম্মতের জন্য শুধু একরাত্রি সে মুজাহিদের 1000 মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে ইবনে জারীর রাহমাতুল্লাহে ভাবে উল্লেখ করেছেন যে বনি ইসরাইলের জনৈক ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি এবাদতে মশগুল থাকতো ও সকাল হতেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জেহাদে লিপ্ত থাকতে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয় এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা সূরা কদর নাজিল করে উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন এ থেকে আরো প্রতীয়মান হয় যে শবে কদর উম্মতে মোহাম্মদী বৈশিষ্ট্য।
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যা:
ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর। আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।
মুফতি মোহাম্মদ তাকী উসমানী তার তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে উল্লেখ করেছেন, এর একটি অর্থ হল, এ রাতে সমস্ত কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়। তারপর হযরত জিবরাঈল আঃ সেখান থেকে অল্প-অল্প করে নবী সাঃ এর কাছে তেইশ বছরে নিয়ে আসেন।
দ্বিতীয় অর্থ হল, নবী সাঃ এর উপর কুরআন নাযিলের সূচনা হয় শবে কদরে। শবে কদর রমযানের শেষ দশকের যে-কোন বেজোড় রাতে হতে পারে, অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখের রাত।
তৃতীতীয় আয়াতে ব্যাখ্যা
লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। অর্থ, শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ ১০০০ রাত ইবাদত করলে যেসব হতে পারে এই এক রাতে ইবাদতের তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।- তাওযীহুল কুরআন
চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যা
তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর। অর্থ, এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
এড়াতে ফেরেশতাদের পৃথিবীতে নেমে আসার দুইটি উদ্দেশ্য থাকে ১. এ রাতে যারা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে ফেরেশতাগণ তাদের জন্য দোয়া করে যেন আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন ২. দ্বিতীয় দৃশ্য এ আয়াতে বলা হয়েছে যে সারা বছরে যা কিছু ঘটবে বলে তাকদিরে ফয়সালা হয়ে আছে আল্লাহ তাআলা এড়াতে তা ফেরেশতাদের উপর ন্যস্ত করে যাতে তারা যথাসময়ে তা কার্যকর করেন প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হওয়া এর ব্যাখ্যা করেছেন। -তাওযীহুল কুরআন
শবে কদর কোন রাত্রি:
শবে কদরে কেন আমল করবেন?
এছাড়া বলা হয়েছে যে এই রাতে ফেরেশতাগণ এবং পৃথিবীতে নেমে আসে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অনুমতিক্রমে শান্তি বজায় থাকে সকাল পর্যন্ত।
হজরত আয়েশা রা. রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজা, সহিহ-আলবানি)
হজরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাদিসে উদ্বৃত হয়েছে, নবী করীম সা: বলেছেন- কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রাতে রয়েছে।
যে ব্যক্তি উহার শুভফল লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ তার আগের পিছনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।-মুসনাদে আহমেদ
রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ ও বরকত হতে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না।- মিশকাত শরিফ
শবে কদরে কি কি আমল করবেন?
- নফল নামাজ
- কোরআন শরিফ
- দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;
- তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা;
- দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা;
- কবর জিয়ারত করা;
- নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।
শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে কদরের নামাজ দুই রাকআত করে চার রাকআত পড়া যেতে পারে। অবশ্য কেউ চাইলে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়।
লাইলাতুল কদরের নামাজের প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখ্লাস পড়া যেতে পারে। সূরা কদর না জানা থাকলে যে কোন সূরা দিয়ে পড়া যাবে।
ট্যাগ: শবে কদর, লাইলাতুল কদর, শবে কদরের দোয়া, কদরের নামাজের নিয়ত, শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের ফজিলত, শবে কদরের নামাজ, কদর নামাজের নিয়ত, শবে কদরের হাদিস, লাইলাতুল কদরের নামাজ সুন্নত না নফল, লাইলাতুল কদর কি, শবে কদরের ইতিহাস