Shebaru

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ

উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে যাওয়া আমাদের দেশের প্রায় বেশিরভাগ তরুণ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন। আর সে দেশটি যদি হয় দুই হাজার মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট প্রায় চার হাজার চারশটিরও বেশি পাহাড় সমৃদ্ধ, পনেরশতেরও বেশি হ্রদ দিয়ে ঘেরা পৃথিবীর স্বর্গভূমি খ্যাত সুইজারল্যান্ড, তবে কেমন হয় বলুন তো? শুধুই কি প্রাকৃতিক সৈন্দর্য্যেই সেরা? জীবনযাত্রার মান, শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষনা, উদ্ভাবন সব কিছুতেই এগিয়ে রয়েছে দেশটি। আরেকটি মজার ব্যাপার কি জানেন, সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী প্রায় পঁচিশ ভাগ শিক্ষার্থীই বিদেশী। তার মানে বুঝতেই পারছেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা সুযোগ সুবিধাদি দিয়ে থাকে দেশটি। তাই আপনিও যদি এই পঁচিশ ভাগ শিক্ষার্থীদের একজন হতে চান, তবে আমাদের সাথেই থাকুন। এই ভিডিও তে আমরা সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপ সহ পড়ার জন্য কি কি যোগ্যতা দরকার, ভিসা বা আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস দরকার, টিউশন ফি কিরকম, আবেদনের সময়কাল কখন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। 

সুইস ডিগ্রী সমূহ

মূলত সুইস বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তিন ধরনের ডিগ্রীতে বেশি স্কলারশিপ ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। আর এই ডিগ্রী গুলো সম্পর্কে আমরা বেশ ভালোভাবেই অবগত। ডিগ্রী গুলো হল, ব্যাচেলর ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রী। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের এমবিএ এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম বিশ্বব্যাপী অনেক সমাদৃত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ডিগ্রী বা কোর্স গুলোর মেয়াদকাল কত? 

এক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলার্স ডিগ্রী তিন থেকে চার বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সময়সীমা চার বছর হয়। আর মাস্টার্স প্রোগ্রাম মূলত দেড় থেকে দুই বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষ তা ছয় থেকে সাত বছরও হয়ে থাকে। আর এই ব্যাচেলর ডিগ্রী কে মূলত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম হিসেবে ধরা হয়। আর মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম মূলত গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর অন্তর্গত। 

এখন আসা যাক, এই তিন ধরনের ডিগ্রী অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রী এর ক্ষেত্রে টিউশন ফি কিরকম পড়তে পারে সে ব্যাপারে। 

সুইজারল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা বা পড়ালেখার খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি। বেসরকারি বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করতে একজন নন সুইচ শিক্ষার্থীর সাধারণত প্রতি বছর ৯০০ থেকে ৪০০০ ইউরো বা তার বেশি খরচ পরে থাকে। এছাড়া আনুসাঙ্গিক কিছু এককালীন ফি ও সেমিস্টার ফি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই খরচ এই হিসাবের চেয়ে অনেক গুণ বেশিও হয়ে থাকে, আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা কমও হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খরচ কিরকম হবে তা অনেকংশে নির্ভর করবে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বিষয়ে পড়বেন তার উপর। এছাড়াও খাবার খরচ, থাকার খরচ, যানবাহন খরচ সহ বেশ ভাল পরিমাণের খরচই পরে। 

আমরা ইতোমধ্যেই জানলাম যে, সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ মোটামুটি বেশিই বলা চলে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতীক্রম হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সুইস পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি আবার মোটামুটি কমই বলা চলে। এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়ালেখা করতে সাধারণত প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৩৭০০ ইউরোর মতো খরচ পরে থাকে। আর পিএইচডির ক্ষেত্রে এই খরচ অনেকাংশেই কম হয়ে থাকে। পিএইচডির ক্ষেত্রে সাধারণত এই খরচ প্রতি বছরে ১০০ থেকে ৯০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

এখন এতসব খরচের ভারে কি তবে আপনার স্বপ্ন মাটি চাপা পড়ে যাবে? অবশ্যই না। সুইজারল্যান্ডে কিন্তু বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের বিরাট সুযোগ রয়েছে। এখন ব্যাস আপনার যোগ্যতা এবং পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করতে হবে। 

তাহলে আগে জেনে নেওয়া যাক, সুইস স্কলারশিপ গুলো সম্পর্কে।

সুইস বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিভিন্ন নামকরা স্কলারশিপ, গ্রান্ট বা ফিলোশিপ চালু রয়েছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ডে সরকারি ও বেসরকারি এই দুই ধরনের স্কলারশিপ চালু রয়েছে। 

মূলত Federal Commission for Scholarships for Foreign Students (FCS) থেকে সুইজারল্যান্ডের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশ গুলোতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট আর রিসার্চারদের জন্য কিছু স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। তম্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কলারশিপ হলোঃ  Swiss Government Excellence Scholarships for Foreign Students। 

এছাড়াও সুইজারল্যান্ডে  ETH Zurich Excellence Master’s Scholarships, University of Lausanne Masters Grants for Foreign Students, University of Geneva Excellence Masters Fellowships, EPFL Excellence Fellowships for Master’s students, University of Zurich Scholarships for Phd. candidates, Geneva Academy of International Humanitarian Law and Human Rights Scholarships, IMD MBA Scholarships, Nestle MBA Scholarships for Women, Alfred Werner Masters Scholarships  সহ আরো অনেক স্কলারশিপ চালু রয়েছে যারা টিউশন ফি, ওয়েভার ফি সহ আপনার যাবতীয় সব ব্যায়ভার বহন করবে। 

মুলত ব্যাচেলর প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের খুব একটা স্কলারশিপ দেওয়া হয় নাহ এবং রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবেও কাজ করার তেমন একটা সুযোগ নেই। তাই অন্যান্য দেশগুলোর মতো সুইজারল্যান্ডেও ব্যাচেলর ডিগ্রীর ক্ষেত্রে ফান্ডিং সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাদি তুলনামূলক অনেক কম। পক্ষান্তরে মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে প্রচুর স্কলারশিপ কিংবা ফিলোশিপ দেওয়া হয়। আবার এসিস্টেন্টশিপ অর্থাৎ রিসার্চ এসিস্টেন্টশিপ বা টিচার্স এসিস্টেন্টশিপ এর মাধ্যমে ফান্ডিং পেয়েও পড়ার সুযোগ থাকে। 

স্কলারশিপ গুলো সম্পর্কে না হয় জানলেন, এবার তো সুইজারল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোন গুলো তা ও তো একটু জানা দরকার। ETH Zurich – Swiss Federal Institute of Technology, Swiss Federal Institute of Technology in Lausanne, University of Zurich, University of Bern, University of Basel, University of Lausanne, University of Geneva, Università della Svizzera italiana (USI), এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুইজারল্যান্ডের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও সুইজারল্যান্ডে আরো বেশ ভাল ভাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যারা গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনেক অনেক এগিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় , স্কলারশিপ সবই তো জানলেন। কিন্তু কি কি বিষয়ে পড়তে পারবেন, তা কি জানেন? বেশ, চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। প্রায় সব বিষয়েই পড়ার সুযোগ সুইজারল্যান্ডে আছে। তাই আপনার যে বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা সে বিষয়েই পড়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে আপনি ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট ফাইনান্স, হোটেল  ম্যানেজমেন্ট, ইত্যাদি কোর্স বা বিষয়গুলো গুলো বাছাই করতে পারেন। কারণ, আগেই বলেছিলাম সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমবিএ প্রোগ্রাম অনেক খ্যাতনাম। এছাড়াও অন্যান্য কোর্স যেমন, একাউন্টিং, ইকোনমিকস, ল’, সোস্যাল ওয়ার্ক, ব্যাংকিং, ক্রিমিনোলজি, আর্কিটেকচার, সংস্কৃতি, ভাষাতত্ত্ব, হেলথ্ কেয়ার, ম্যাথমেটিক্স, মিডিয়া বিজনেস, থিওলজি, ফিলোসফি, জার্নালিজম, সাইকোলজি সহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়তে পারেন। এসব বিষয়গুলোর জন্যও সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অত্যন্ত উপযোগী। 

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা 

সুইজারল্যান্ডে সরকারি, বেসরকারি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বায়ত্ত্বশাসিত। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজেদের মতো ভর্তির মানদন্ড দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে যেভাবেই ভর্তির জন্য মানদন্ড ঠিক করুক না কেন, কিছু বিষয় বা নিয়মাবলী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই হয়ে থাকে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি একেবারে নির্ভুল এবং যথার্থ তথ্য পেতে চান, তবে যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে চান সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবপেজটি ঘুরে আসুন। ওয়েবপেইজে গেলেই আপনি খুব সুশৃংখল অবস্থায় আপনার কাংখিত তথ্যটি পেয়ে যাবেন। অনেক তথ্যই তো জানলেন, তবে এখন দেখে নেওয়া যাক, সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে বা আবেদন করতে হলে সাধারণত কি কি ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা থাকা দরকারঃ 

  • আপনি যদি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে বা ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তি হতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেকেন্ডারী লেভেল অর্থাৎ এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় সফলতার সাথে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। এবং মাস্টার্সের প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে আপনার যে কোন একটি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। আর ডক্টরাল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রেও আপনাকে যে কোন একটি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাশ হতে হবে। 
  • সুইস অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আবেদন যোগ্যতার ক্ষেত্রে গ্রেড বেশ ভালই চায়। আর স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাল গ্রেড বা ফলাফল থাকা আবশ্যক। কারণ, ভালো গ্রেড আপনার ভালো সাব্জেক্টে ভালো ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাবার পথকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে।  অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষই রিকোয়ারমেন্ট বেইস লাইন হিসেবে সার্কুলারে একটা নির্দিষ্ট সিজিপিএ উল্লেখ করে দেন।। অর্থাৎ নুন্যতম কতটুকু সিজিপিএ থাকলে কোনো শিক্ষার্থী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে সেটি উল্লেখ করা থাকে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই নুন্যতম সিজিপিএ ৩.০০ উল্লেখ করে দেয়। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রোগ্রামে আবার ৩.৫০ ও উল্লেখ করা থাকে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বেইসলাইন দেওয়াও থাকেনা। 
  • সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূলত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইংরেজী, জার্মানি, ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায়। এক্ষেত্রে মূলত ইংরেজী এবং জার্মান ভাষায়ই বেশি প্রচলিত। তাই আপনার এটি জানতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন প্রোগ্রামে কোন ভাষায় পড়ানো হয়। সেই অনুযায়ী ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইংরেজি ল্যাংগুয়েজ টেস্ট এর ক্ষেত্রে আপনি  IELTS বা TOEFL যে কোনো এক্সাম দিতে পারেন। দুটোই গ্রহণযোগ্য। IELTS-এ মূলত আপনার 6.5 থেকে 7.00 এর মধ্যে পেলেই হবে। আর TOEFL এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৯০ পেতে হয়। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আবার GRE/ GMAT ও চাইতে পারে।
  • এছাড়াও আবেদনের জন্য আরো যেসব জিনিষের দরকার হবে তা হলো, Essay বা Personal Statement, Letter of Recommendation, সিভি বা রিজিউমি, ব্যাংক সল্ভেন্সি ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট, হেলথ সার্টিফিকেট, শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যদি। ক্ষেত্রবিশেষ আরো কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজনও হতে পারে। 

আবেদনের সময়কাল 

সুইজারল্যান্ডে মূলত বছরে দুই বার আবেদন এর সময়কাল থাকে। এক্ষেত্রে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত সামার সেশন (Summer Session) এবং মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময় থেকে জুন বা জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত উইন্টার সেশন (Winter Session) এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন পত্র নিয়ে থাকে। মূলত সুইস বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ভর্তি নেওয়ার ৬-৮ মাস আগেই আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাই বুঝতেই পারছেন, ভর্তির জন্য হাতে কিছুটা সময় নিয়ে আপনাকে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণটাই অনলাইনে হয়ে থাকে। 

ভিসার জন্য আবেদনের নিয়মাবলী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিসার জন্য আবেদনের কথা শুনলেই  প্রথমেই যে প্রশ্নটি আপনাদের মাথায় চলে আসবে যে, এই ভিসার জন্য আবেদন কোথায় করতে হবে? বেশ, এক্ষেত্রে একটা আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে ঢাকাতে সুইস এম্ব্যাসি আছে , তাই আপনি সেখান থেকেই আবেদন করতে পারবেন। এখন আনন্দের সংবাদ কেন বললাম? কারণ, বাংলাদেশ ইইউ অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই যদি সুইস এম্ব্যাসি বাংলাদেশে না থাকত তবে আপনাক ভারতের সুইস এম্ব্যাসি তে যেয়ে আবেদন করতে হতো। বেশ, আবেদন কোথায় থেকে করবেন তা তো জেনেই ফেললেন। তবে এখন জেনে নেওয়া যাক, ভিসার জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র ও নিয়মাবলী পালন করা দরকার। 

  • ভিসা আবেদন ফর্মঃ এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার ভিসা আবেদন ফর্ম টি সঠিক তথ্য দিয়ে সুন্দরভাবে পূরণ করতে হবে।
  • একাডেমিক কাগজপত্রঃ আপনার একাডেমিক সকল কাগজপত্র যেমন, সার্টিফিকেট, মার্কশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদির দরকার হবে। এক্ষেত্রে আপনার সার্টিফিকেট, মার্কশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট সব কিছু ইংরেজী ভাষায় হতে হবে। আর যদি ইংরেজী ভাষায় নাও হয়ে থাকে, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এগুলো আপনি নোরারী পাবলিক করে ইংরেজীতে অনুবাদ করিয়ে নিতে পারেন।
  • ছবিঃ ভিসা আবেদন ফর্মের সাথে তো ছবি দিবেনই। এছাড়াও অতিরিক্ত একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে ছবির বিষয়ে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখবেন যে, আপনার ছবিটি যেন সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা হয় এবং এটি যেন স্পষ্ট ও ছয় মাসের অধিক পুরাতন না হয়। 
  • পাসপোর্টঃ প্রতিটি আবেদনের জন্যই বর্তমান পাসপোর্ট এর ফটোকপি দরকার হবে। এছাড়াও পুরাতন পাসপোর্ট ও কাছে থাকলে জমা দেওয়া লাগতে পারে। 
  • অফার লেটারঃ আপনাকে সুইস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সত্যায়িত অফার লেটার টি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
  • ঘোষণা পত্রঃ আপনি পিএইচডি, মাস্টার্স বা অনার্স যে প্রোগ্রামেই যাচ্ছেন না কেন, সেটি শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসবেন, এমন একটি ঘোষণা পত্র আপনাকে দিতে হবে। 
  • স্পন্সর কর্তৃক হলফনামাঃ স্পন্সর কর্তৃক হলফনামা কে মুলত এফিড্যাভিট বলা হয়। মূলত এই এফিড্যাভিট এ লেখা থাকবে যে,  আপনার সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনাকালীন সকল খরচ স্পন্সর  বহন করবেন।
  • আয়ের উৎস সম্পর্কিত নিশ্চিত পত্রঃ এক্ষেত্রে আয়ের উৎস হিসেবে এক বছরের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট, ইনকাম ট্যাক্স পেপার, ফিক্সড জামানত ইত্যাদি দেখাতে হবে। আর যদি ব্যাংক লোন হয়, সেক্ষেত্রেক ব্যাংককে তা প্রমাণের জন্য নিশ্চিত পত্র ইস্যু করতে হবে। 
  • আর্থিক সচ্ছলতাঃ এক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে ২১০০০ সুইস ফ্রাংক এর সম পরিমাণ টাকা দেখাতে হবে। এবং এই টাকা যে কোনো ব্যাংকে থাকলেই চলবে নাহ। এটি এমন ব্যাংকে রাখতে হবে যার শাখা সুইজারল্যান্ডে আছে কিংবা বাংলাদেশে অবস্থিত সুইস ব্যাংকের যে কোনো শাখায়। 
  • ল্যাংগুয়েজ টেস্টঃ এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক আইইএলটিএস পরিক্ষার সনদ অথবা ল্যাংগুয়েজ টেস্ট এর জন্য যেই এক্সাম দিয়েছেন সেটির পাশের নিশ্চিত পত্র দিতে হবে। 
  • এছাড়াও আপনার সংযুক্ত করতে হবে সিভি ও মোটিভেশন লেটার। বিশেষ প্রয়োজনে এম্ব্যাসি হয়তো অতিরিক্ত কাগজপত্র ও চাইতে পারে। 

আরো কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। যে সকল কাগজপত্র আপনি দিচ্ছেন সব গুলোই যেন অরিজিনাল হয়। এক্ষেত্রে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুলো এম্ব্যাসি যাচাই শেষে ফেরত দিয়ে দিবে। এক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার, গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র গুলোর ফটোকপি সেট দিলেই হবে। আর খেয়াল রাখবেন কাগজগুলো যেন ক্লিপ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়। অর্থাৎ স্ট্যাপল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এখন আপনাদের মনে আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, এই ভিসা প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় নিতে পারে? 

বেশ, এক্ষেত্রে আপনি যখন এম্ব্যাসি কে কাগজপত্র গুলো দিচ্ছেন, তার পরপরই তারা এগুলো সুইজারল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। এবং সব কিছু ঠিক থাকলে সেখান থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এক্ষেত্রে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে।

এক্ষেত্রে আপনাদের মনে আরো কিছু প্রশ্ন হয়ত উকিঝুকি দিতে পারে, আর তাঁর মধ্যে একেবারেই কমন কিছু প্রশ্ন হলো, 

বিদেশী শিক্ষার্থীরা কয় ঘণ্টা কাজের অনুমতি পেয়ে থাকে?

উত্তরটি হলো পনেরো ঘণ্টা। তবে সামারে বিদেশী শিক্ষার্থীরা ফুল টাইম কাজ করতে পারে। 

এখন আবার মনে হতে পারে, আমি যাওয়ার সাথে সাথেই কি কাজ করতে পারব?

উত্তরটি অবশ্যই নাহ। প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত কোনো কাজ করা যাবে নাহ। এক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডে অবস্থানের পর কাজের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রথমে আবেদন করতে হবে। এবং অতঃপর তাঁরা ছয় মাস পর অনুমতি প্রদান করবে কাজ করার। 

এছাড়াও আপনাদের মনে হয়তো আরো নানাবিধ প্রশ্নের উদয় হতে পারে। সেই প্রশ্ন গুলো কমেন্ট বক্সে লিখে ফেলুন। 

পরিশেষে,

আশাকরি ইতোমধ্যেই আপনারা সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে ফেলেছেন। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, সুইজারল্যান্ড সেঞ্জেনভুক্ত দেশ। আর তাই, এর ভিসা দিয়ে আপনি যে কোন সেঞ্জেনভুক্ত দেশে যেতে পারবেন এবং সেখানে প্রায় তিন মাস অবস্থান করতে পারবেন। ৯০ দিন থাকতে পারবেন। তাই এতসব সুযোগ সুবিধা হাত ছাড়া করতে না চাইলে, অধ্যবসায় করুন, পরিশ্রম দিয়ে আপনার সুইজারল্যান্ডের ভিসাটি যোগাড় করুন। আর এ সংক্রান্ত খুটিনাটি নানাবিধ বিষয় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনে-

যোগাযোগঃ সেবারু,২/৪ ব্লক-জি,লালমাটিয়া,ঢাকা-১২০৭,বাংলাদেশ।০১৭১১-৯৮১০৫১,০১৮৯৭৯৮৪৪২০,০১৮৯৭৯৮৪৪২১।

PLEASE SHARE THIS

আমাদেরকে আনুসরন করুন

SOCIAl MEDIA

নিউজলেটার

আমাদের বিভিন্ন প্যাকেজ আপডেট, অফার কিংবা নিউজ আপনার ইমেইলে সবার আগে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।

Scroll to Top
× How can we help you?