কাক ডাকা ভোরে মা তার শিশু সন্তানকে শেকলে বেঁধে রেখে কাজে চলে যান। আবার বিকেলে বা সন্ধ্যার কোনো এক সময় শেকল খুলে শিশুটিকে নিয়ে যান।ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে। এটি শুধু একদিনের নয়, ববং প্রতিদিনকার চিত্র।
ক্ষুধায় কাতর হলেও কিছুক্ষণ কান্নার পর থেমে যায় সে। কখনও প্রখর রোদ , কখনও বৃষ্টি আবার কখনও কনকনে ঠান্ডা। যেন ভাগ্যের নির্মমতার কাছে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে নাম না জানা শিশুটি। শেকলে বাঁধা তার ছোট্ট নিষ্পাপ জীবন। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় নদী বন্দর (টার্মিনাল) এর চলাচলের জেটির পাশে শেকল দিয়ে বাঁধা ঐ ছোট্ট শিশুকে প্রতিনিয়তই নদীপথে মুন্সিগঞ্জ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষরা দেখেন। বুধবার এমন একটি ছবি পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে ছবির সত্যতাও পাওয়া যায় ।
পাশের অস্থায়ী কয়েকজন দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সে জন্য মা এ কাজ করেন। শিশুটির নাম, মায়ের নাম বা ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ভাই আমরা ছোটখাটো হকার, লঞ্চঘাটে ফলমূল বেইচ্চা খাই। কে রেখে গেছে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার সময় কই আমাদের’।
নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাটের অস্থায়ী আচার বিক্রেতা রবিউল আলম জানান, এ রকম দৃশ্য তিনি মাঝে-মাঝেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই বাঁধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সঙ্গে করে বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে পারেন না বলে, এখানে বেঁধে রেখে তারপর কাজে যান। আবার কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যান। তবে কখন বাঁধেন, আর কখন খোলেন সেটি অনেক সময় দেখেন না কেউ।
জয়নাল নামে একজন জানান, মধ্যবয়স্ক এক নারী প্রায় সময় সকালে শিশুটিকে এখানে শেকলে বেঁধে রেখে যান। সন্ধ্যায় বা রাতে এসে তালা খুলে নিয়ে যান বাচ্চাটিকে। তার বাচ্চাই হবে এমনটাই জানান জয়নাল।জানা গেছে, অনেকে শিশুটিকে খাবার কিনে দেন। আবার অনেকে রোদ-বৃষ্টিতে তাকে ছাতা কিংবা পানি কিনে দেন। তবে শিশুটিকে এমন বন্দী অবস্থায় দেখে মায়া হলেও কর্মব্যস্ত এ জীবনে কেউ বেশি সময় নিয়ে দেখার সুযোগ পায়না।এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির মো. বাদল বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে ঘটনাটি খুব হৃদয়বিদারক। এটি মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে হয়তো তাদের এভাবে সড়কে শিকলে বাঁধা থাকতে হতো না। অথবা যদি সবার কাজের স্থানেই শিশুদের রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকত তাহলেও সমস্যা হতো না।
শিশুটির ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি আমাদের জানা ছিল না। আমি এখনই লঞ্চ টার্মিনালে অফিসার পাঠাচ্ছি। এ ধরনের অমানবিক কাজ যে বা যারাই করেছে এটা অপরাধ। এ বিষয়ে আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ কি বলতে পারবেন, কি ছিল এ শিশুটির অপরাধ অথবা তার মায়ের জানতে চান সমাজ বিবেকবান প্রতিটি মানুষ।
সূত্র: ঢাকা সময়।