প্রধানত দুইটি কারণে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রথমত, আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ব্যবসাকে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। কোন মুসলমান একথা জানার পর তাঁর পক্ষে সুদভিত্তিক লেনদেনে জড়িত থাকা ঈমানের পরিপন্থী। মিথ্যা বলা যেমন হারাম, শূকরের গোস্ত যেমন হারাম, বিনা অপরাধে খুন করা যেমন হারাম, সুদ তার চেয়েও কঠিন হারাম। সুদভিত্তিক লেনদেনের বিকল্প হিসেবে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সুদ-ভিত্তিক ব্যাংকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। সুদ নির্ভর প্রতিষ্ঠান সুদের মাধ্যমে সমাজের মানুষকে শোষণ করে। সুদের কারণে ব্যবসায়ীর নৈতিকতা নষ্ট হয়। পণ্যের উপর সুদের বাড়তি মূল্য যোগ হওয়ার কারণে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমে যায়। সর্বোপরি সুদ ব্যবসায়ীকে কেবল বস্তুগত নগদ লাভের দিকেই তাড়া করে।
ইসলামী ব্যাংক সব ধরনের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম ছাড়াও গরীব-দুঃস্থ, অসহায় ও নিঃসম্বল মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সেলাই প্রশিক্ষণ প্রকল্প, দুগ্ধবতী গাভী পালন প্রকল্প, রিকশা প্রকল্প, আতœ-কর্মসংস্থান প্রকল্প, পোল্ট্রি প্রকল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রকল্প, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী প্রকল্প, ক্ষুদ্র শিল্প প্রকল্পসহ আয়বর্ধক কর্মসূচি, মডেল ফোরকানিয়া মক্তব, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান ও এককালীন অনুদান, দুঃস্থদের জন্য স্কুল পরিচালনা ও সাহায্য দানসহ শিক্ষা কর্মসূচি মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, দাতব্য চিকিৎসালয়ে অনুদান, চিকিৎসার জন্য এককালীন অনুদান, নলকুপ স্থাপন, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে তাঁর কন্যা পাত্রস্থ করার জন্য অনুদান, ঋণগ্রস্ত ও ভ্রমণপথে বিপদগ্রস্ত লোকদের অনুদানসহ মানবিক সাহায্য কর্মসূচি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি, এবং ইসলামী দাওয়াহ কর্মসূচি। উপকূলবাসীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ‘সার্ভিস সেন্টার’, দরিদ্র মহিলাদের দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র ‘মনোরম’ ইসলামী ব্যাংক ক্রাফ্টস এণ্ড ফ্যাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়াও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন দরিদ্র ও সম্বলহীন বিধবা, সামাজিকভাবে নির্যাতিতা মহিলা ও অভিভাবকহীন ইয়াতিম মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য ‘দুঃস্থ মহিলা পুনর্বাসন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে কৃষি। বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভশীল। আর এ কৃষির উৎপাদন পল্লীতেই হয়ে থাকে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই পল্লী এলাকার জনগণই বেশি দারিদ্র সীমার নীচে বাস করছে। প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা এবং জীবন যাপনের নূন্যতম চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পদের অভাবে গ্রামের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়ছে। ফলে বন্যার পানির মতো অভাব তাদের জীবনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বিপদের দিকে। পরিণামে কর্মহীনতা ও দারিদ্র পল্লীবাসীর জীবনের সাথে সর্বদা জড়িয়ে যায়। এ সকল গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রতার করালগ্রাস থেকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংক পল্লী অঞ্চলের গরীব মানুষের জন্য জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে।