অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা জন্য বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়া ভিসা পছন্দের তালিকায় অন্যতম শীর্ষ একটি দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ ও বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ আছে। তাই বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী। সেখানে পড়ালেখার সুযোগ ও স্কলারশিপ নিয়ে আমারা আজকে জানব।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা, উদ্ভাবন, জীবনযাত্রার মান ও বসবাসের দিক থেকে অন্য দেশের তুলনায় আলাদা। বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবেও বিবেচিত হয় অস্ট্রেলিয়া। তাই তো প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাত থেকে আট লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়াতে। অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও স্কলারশিপ নিয়ে এই দ্বীপ দেশটিতে যেতে পারেন আপনিও। তাই অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ, অস্ট্রেলিয়া ভিসা খরচ সম্পর্কে জানা যাবে এখানে।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও ডিগ্রি সম্পর্কে
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সহ প্রায় সকল ধরণের প্রোগ্রামেই যাবার অস্ট্রেলিয়া ভিসা সুযোগ রয়েছে। ব্যাচেলর ডিগ্রীর ক্ষেত্রে সময় লাগে তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স ডিগ্রীর ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন থেকে ছয় বছর সময় লাগে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় যায়। এর কারণ বেশিরভাগ স্কলারশিপই মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য দেয়া হয়। ব্যাচেলর পর্যায়ে খুব একটা স্কলারশিপ পাওয়া যায় নাহ। আবার কোর্স ভিত্তিক মাস্টার্স প্রোগ্রামেও খুব একটা স্কলারশিপ পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে থিসিস ভিত্তিক মাস্টার্স প্রোগ্রামে ফান্ড বা স্কলারশিপ পাবার সুযোগ বেশি। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে, অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স কোর্স মূলত কোর্স ভিত্তিক ও থিসিস ভিত্তিক এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেহেতু কোর্স ভিত্তিক প্রোগ্রামে স্কলারশিপের সুযোগ তুলনামূলক কম, তাই রিসার্চ বা থিসিস ভিত্তিক প্রোগ্রামের দিকে যাওয়াটাই ভালো। এক্ষেত্রে আবার প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। ব্যাপারটা কঠিন মনে হচ্ছে তাই না?
তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগের আদ্যোপান্ত নিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ একটি ভিডিও রয়েছে। ভিডিও এর লিংক আমি ডিসক্রিপশন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি।
টিউশন ফি
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ তুলনামূলক ব্যায়বহুলই বটে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর ডিগ্রি করতে চাইলে সাধারণত বছরে ২০ হাজার থেকে ৩২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার টিউশন ফি বাবদ দিতে হয়। মাস্টার্স ডিগ্রির ক্ষেত্রে টিউশন ফি এবং কোর্সের ব্যয় বছরে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩৭ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার হয়ে থাকে আর ডক্টরাল ডিগ্রি বা পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ১৪ হাজার থেকে ৩৭ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ হয় প্রতিবছরে। এই টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ সহ আনুসাংগিক যাবতীয় খরচ বহন করে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তবে আশার বিষয় হচ্ছে যে, অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
স্কলারশিপ
বৃত্তির সুযোগ কেমন আছে?
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। মাস্টার্স ও পিএইচডিতে স্কলারশিপের অনেক সুযোগ আছে। স্নাতক ও মাস্টার্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফির ওপর ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত স্কলারশিপ পাওয়া যায়। ভর্তি ও স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ও প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ দেয় অস্ট্রেলিয়া সরকার। এ স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থী আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া, পড়াশোনার যাবতীয় খরচ, থাকা-খাওয়া, গবেষণা ও বইপত্রের জন্য অর্থ দেয়া হয়। এছাড়াও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপসহ বিভিন্ন সরকারি বৃত্তির মাধ্যমেও অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় উচ্চশিক্ষায় ফেলোশিপ দেয়ার জন্য আবেদন আহ্বান করে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে : pmfellowship.pmo.gov.bd সাইটেও ভিজিট করতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়া ভিসা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা
আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, প্রথমে আপনাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফি জমা দেওয়া সহ আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফি জমা দেওয়ার পরই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আবেদন করতে কোন ধরনের ফি এর প্রয়োজন পড়ে না। এখন যদি যোগ্যতা বা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর কথা বলি তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজেদের মতো ভর্তির মানদন্ড দিয়ে থাকে। তবে কিছু বিষয় বা নিয়মাবলী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই হয়ে থাকে। আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে বা আবেদন করতে হলে সাধারণত কি কি ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা থাকা দরকারঃ
- আপনি যদি ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হন, তবে আপনাকে সেকেন্ডারী এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ভাল গ্রেড নিয়ে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। এবং মাস্টার্সের প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে আপনার স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে আর পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে আপনার থাকতে হবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এক্ষেত্রে আপনার পূর্ববর্তী একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০% নম্বরের প্রয়োজন পড়বে।
- অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা পড়াশোনা করতে গেলে আপনার GRE বা GMAT পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে বর্তমানে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে GRE বা GMAT পরীক্ষা দেওয়ার ও প্রয়োজনও পড়ছে। এক্ষেত্রে আপনার IELTS বা TOEFLকিংবা PTE যে কোনো একটিতে পর্যাপ্ত স্কোর বা মার্ক্স থাকলেই চলবে। IELTS এর ক্ষেত্রে স্কোর ৬.৫ বা ৭.০ এর মধ্যে হলেই চলবে। আর PTE এর ক্ষেত্রে ৫৫ থেকে ৬০ মার্ক্স পেলেই হবে। আর TOEFL এর ক্ষেত্রে ২৩৫ থেকে ২৪০ মার্ক্স পেলেই হয়।
- এছাড়াও আপনার পূর্ববর্তী নিকটতম শিক্ষক কতৃক প্রদত্ত Letter of Recommendation (LOR), আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা গুলোযথাসম্ভব গুছানো এবং চমৎকার ভাবে রচনা আকারে উপস্থাপিত একটি Statement of Purpose (SOP), সিভি বা রিজিউমি, ব্যাংক সল্ভেন্সি ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট, হেলথ সার্টিফিকেট, শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যদি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হতে পারে।
- Bonus Tips: অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষাবৃত্তি প্রদানকারী সংস্থার ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস বা সামাজিক কর্মকান্ডগুলো অনেক গুরুত্ব বহন করে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন কর্মকান্ড করার চেষ্টা করুন। এবং সম্ভবপর হলে পাবলিকেশন বের করুন, প্রোগ্রামিং দক্ষতা অর্জন করুন।আপনার সিজিপিএ যদি কম থাকে তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু ভালো জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত থাকলে তা বেশ ভালো কাজে দিবে স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে।
অস্ট্রেলিয়া ভিসার জন্য আবেদনের নিয়মাবলী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনার স্কলারশিপের জন্য পূর্ণকালীন মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি আবেদন যদি মঞ্জুর হয়ে যায়, তৎপরবর্তীতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিসা পেতে হলে আপনাকে অস্ট্রেলিয়ান এম্বেসী এর দ্বারস্থ হতে হবে। আর এই অস্ট্রেলিয়ান এম্ব্যাসি ঢাকার গুলশানে অবস্থিত। সেখানে আপনাকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত অফার লেটার ও CoE (Confirmation of Enrollment) সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হবে ভিসার জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অফার লেটার ও CoE (Confirmation of Enrollment) বাদে আর কি কি কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ভিসার আবেদনের জন্য? বেশ, তবে জেনে নেওয়া যাক, ভিসার জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন ও কি নিয়মাবলী পালন করে আবেদন করতে হবেঃ
- প্রথমেই অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন ফর্ম টি প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সত্যায়িত অফার লেটার ও CoE (Confirmation of Enrollment) যোগ করার প্রয়োজন হবে।
- সার্টিফিকেট, মার্কশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট সহ একাডেমিক সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করার দরকার হবে। আর এই প্রত্যেকটি কাগজপত্রই যেন সত্যায়িত হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
- অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন ফর্মের সাথে আপনার সদ্য তোলা স্পষ্ট পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি দিবেন। আর পাসপোর্ট এর ফটোকপিও সাথে জমা দেওয়া লাগবে।
- আয়ের উৎস হিসেবে ছয় মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট, ব্যাংক সলভেন্সি পেপার, ইনকাম ট্যাক্স পেপার, ফিক্সড জামানত সহ স্পন্সর কর্তৃক হলফনামা অর্থাৎ এফিড্যাভিট এর কাগজপত্র ইত্যাদি সংযুক্ত করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্পন্সরকে এক বছরের খরচ বাবদ সাদারণত ১৯,৮৩০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেখাতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষ এই খরচ বেশি-কম হয়ে থাকে।
- সিভি, এসওপি, রেফারেন্স লেটার, মোটিভেশনাল লেটার সহ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট এর জন্য দেওয়া আইইএলটিএস বা টোফেল এর সার্টিফিকেট এর কাগজপত্র দেখাতে হবে।
- এছাড়াও পুলিশ ক্লিয়ারান্স, হেলথ ইন্স্যুরেন্স, মেডিক্যাল রিপোর্ট, সর্বশেষ যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট সহ ক্ষেত্র বিশেষ আরো অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার প্রদত্ত এসব কাগজপত্রগুলো এম্ব্যসি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। অতঃপর সেখান থেকে সব প্রক্রিয়া শেষে মাস তিনেকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাঠানো হবে, যদি কাগজপত্র সংক্রান্ত কোনো জটিলতা না থাকে।
আবেদনের সময়কাল
অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিদেশী শিক্ষার্থীদের দুইটি সেশনে ভর্তি নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ভিসা সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং জুলাই মাসে সেশন দুটি শুরু হয়। মূলত আবেদনের পর আপনি উত্তীর্ণ হলে, আপনার কাছে অফার লেটার পাঠানো হবে। অফার লেটার পাওয়ার পর টিউশন ফি সহ বিভিন্ন নির্দেশাবলি পালনের মাধ্যমে কনফারমেশন অফ এনরোলমেন্ট পাবেন, তারপর ভিসার জন্য আবেদন করবেন। আর এক্ষেত্রে ক্লাস শুরুর দুই মাস পূর্বেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। তাই আবেদনের শেষ তারিখ কবে সেটির দিকে খেয়াল রাখবেন, আর ক্লাস কবে শুরু হবে তা জানবেন।
কিছু প্রশ্ন?
আপনাদের মনে আরো কিছু প্রশ্ন আসতে পারে যে, অস্ট্রেলিয়ায় সপ্তাহে কত ঘণ্টা পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ রয়েছে? হ্যাঁ, আছে। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ
অস্ট্রেলিয়া স্টুডেন্ট ভিসা শর্ত অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সেমিস্টার চলাকালীন সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। তবে ক্ষেত্রবিশেষ এই সময়ের তারতম্য হয়ে থাকে। আর ভ্যাকেশন টাইমে শিক্ষার্থীরা নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশী লাইসেন্স দিয়ে শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় গাড়ি চালাতে পারবেন। এতে ঘণ্টায় গড়ে ২২-২৮ ডলার আয় করা সম্ভব। এছাড়া সুপারশপ, পেট্রলপাম্প, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ তো আছেই। অস্ট্রেলিয়ায় যারা পড়তে যান ভিসা অনুসারে সপ্তাহে গড়ে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ থাকে। বিভিন্ন সময় পার্ট টাইম জব হিসেবে কাজের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে শুধু মনে রাখা জরুরি শিক্ষার্থী হিসেবে যেন ভিসার শর্ত ও নিয়মকানুন ঠিক রাখতে হবে, কোনো অবস্থায় তা অমান্য করা যাবে না। এর মূল কারণ হলো- ভিসার শর্ত ও নিয়মকানুন বা আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও ভিসা বাতিলের মতো শাস্তির মুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
অস্ট্রেলিয়ায় খরচ ও জীবনযাত্রার মান
অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আবাসন ব্যবস্থা ও জীবন-যাপন খরচ । এটা নিয়ে সঠিক ধারণা আগেই নিতে হবে। আবাসন ও দৈনন্দিন খরচ বাবদ প্রতি মাসে কত টাকা খরচ হতে পারে তা নিয়েও আমরা জানবো। এসব খরচ বাবদ প্রতি মাসে ১৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের কাছাকাছি ব্যয় হতে পারে। তবে শহরভেদে এই খরচের পরিমাণ কিছুটা কমবেশি হতে পারে। বিদেশে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া দারুণ। চিকিৎসাসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা অনেক ভালো। নান্দনিক পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে এখানে। টাইমস হায়ার এডুকেশন ও কিউএস র্যাঙ্কিং অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ একশটির মধ্যে রয়েছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হলো অস্ট্রেলিয়া। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশের শিক্ষার্থীর কাছেও অস্ট্রেলিয়া জনপ্রিয়। তবে জীবনযাত্রার মান অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতোই অনেকটা ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে স্কলারশিপ নিয়ে গেলে খরচ অনেকটা কমে আসে। এছাড়াও এখানে সব ধরণের নাগরিক সুবিধা একদম হাতের নাগালেই। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়।
পড়াশোনার সুবিধা ও পরিবেশ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পড়াশোনার সিলেবাস গবেষণাকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের পিএইচডি ছাড়াও মাস্টার্সে গবেষণাবিষয়ক বিভিন্ন কাজ করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ের সাথে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি ও গবেষণাবিষয়ে সম্পৃক্ততা থাকে। এজন্য ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক এ দুই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় অন্য অনেক দেশের তুলনায় পড়াশোনার মান উন্নত। শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ ও সম্ভাবনা অনেক। এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ বেশি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গুরুত্ব দেয়া হয়। বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও সামাজিক দক্ষতা অর্জনে শিক্ষকেরা সহায়তা করেন। শুধুমাত্র বইনির্ভর পড়াশোনা না করে আলোচনা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাসওয়ার্কের মাধ্যমে মেধা যাচাই করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়তে এ ধরনের কারিকুলাম অনন্য ভূমিকা রাখে।
পড়ালেখা শেষে অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির সুযোগ
অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ নির্ভর করে কোন বিষয়ে পড়ছেন বা কী নিয়ে গবেষণা করছেন তার ওপর। এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল ও নিয়মিত গবেষণায় যুক্ত থাকলে সহজেই চাকরির সুযোগ হয়। শহরে ভেদে বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ বেশি থাকে। পিএইচডি গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করা যায়। এটার সুবিধা হলো- শিক্ষার্থীরা পড়া শেষে সহজেই কাজে যুক্ত হতে পারেন। পিএইচডি করার পরে যারা আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণার অবদান রাখছেন, তাদের জন্য গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম নামের একটা সুযোগ রয়েছে। অনেক গবেষক ও শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের সুযোগ পান।
পরিশেষে
আশা করছি, অস্ট্রেলিয়া ভিসা, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে আপনাদের মনে উদীত যাবতীয় প্রশ্নের সমাধান দিতে পেরেছি। এছাড়াও যদি অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা বিষয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে তা এক্ষুণি কমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। আর উচ্চশিক্ষাবিষয়ক আরো গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যাদি পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
যোগাযোগঃ সেবারু,২/৪ ব্লক-জি,লালমাটিয়া,ঢাকা-১২০৭,বাংলাদেশ।০১৭১১-৯৮১০৫১,০১৮৯৭৯৮৪৪২০,০১৮৯৭৯৮৪৪২১।