নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন মহাকবি কায়কোবাদ। এখানে তাঁর শেষ জীবনের চাকরিস্থল পোস্ট অফিসটি রয়েছে পথের ধারে যা কবিস্মৃতি হিসেবে রক্ষিত। ইছামতি নদীর তীরে মহাকবির এ জন্মস্থানটি ঘুরে দেখা যায় অনায়াসেই। নবাবগঞ্জের মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রয়েছে কলাকোপা। কলাপোকায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের বহু প্রসাদবাড়ি-যা এখন জরাজীর্ণ তবে এগুলো স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। এর পাশ দিয়ে রয়ে গেছে শান্ত,স্নিগ্ধএক নদী-ইছামতি। কিছু দুর পরেই রয়েছে গান্ধী মাঠ। সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজি এই মাঠে এসেছিলেন। তারপর থেকেই এ মাঠের নাম গান্ধী মাঠ। এ জায়গা থেকে মাইল খানেক সামনে রয়েছে একটি প্রাচীন বাড়ি। ইট থেকে চুন, সুরকি খসে ধ্বংসের প্রহর গুণলেও এখনও বাড়িটি তার জৌলুস জানান দিচ্ছে সগর্বে। এ বাড়ির ৮৫ বছরের হরেন্দ্র কুমার সাহার কাছ থেকে জানা গেছে এর নাম এন হাউজ। তাঁর দাদার বাবা হরনাথ সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে প্রায় আড়াইশো বছর আগে এ বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এ বাড়ির সামনের অংশ অতিথিশালা, রয়েছে ছোট একটি খোলা জায়গা। আর এন হাউসের সামনে ইছামতির তীরে ঘেঁষে তাঁর ছিল লবণের ব্যবসা। লিভারপুল থেকে লবণ আমদানি করতেন তিনি। সে ব্যবসার গদিঘর ছিল এ বাড়িটি।
এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে রয়েছে আরেকটি প্রাচীন ভবন। বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে কলাকোপা কলেজের ছাত্রবাস হিসেবে। তারপর রয়েছে জগবন্ধু সাহা হাউস। এ বাড়ির বাসিন্দা কললারাণীর কাছ থেকে জানা যায় তার দাদা শ্বশুর জগবন্ধু সাহা তৈরি করেছিলেন এ বাড়িটি। এর নির্মাণশৈলী খুবই আকর্ষণীয়।
এরপর আঁকা বাঁকা রাস্তা পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ে গাছ-গাছালিতে ঢেকে থাকা একটি বাড়ি যা কিংবদন্তীর নায়ক ষোলশ-সপ্তদশ শতকের খেলারাম দাতার বাড়র-যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রচলিত রয়েছে তিন্ িগরীব দুঃখীদের খুব সাহায্য করতেন। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথছিল ইছামতির পাড়ে, দোতলা এ বাড়ির নিচতলায় এখনও সুড়ঙ্গ পথটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিচতলায বেশ কিছু কোঠা থাকলেও এখন তার প্রায় সবই ঢেকে আছে আবর্জনা আর মাটিতে। আর দোতলায় রয়েছে চারপাশে চার কোণে চারটি করে বাংলা ঘরের আকৃতিতে এক কক্ষবিশিষ্ট আটটি ঘর। মাঝে রয়েছে মঠ-আকৃতির আরেকটি ঘর। জানা যায় এ ঘরে অনেক মূল্যবান মূর্তি ও ধনসম্পদ ছিল। তবে এ বাড়িটি একেবারেই ধ্বংসের পথে। এখানে রয়েছেÑচমৎকার রাজবাড়ি। এ বাড়িটির নাম ‘ব্রজ চমৎকার রাজবাড়ি। এ বাড়িটির নাম ‘ব্রজ নিবেতন’। তবে এ বাড়ির বর্তমান নাম ‘খন্দকার কটেজ’।
প্রকৃতির রানী কলাপোকা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ঢাকার সিনেমা নির্মাতারা প্রায়ই এখানে আসেন। বিখ্যাত ‘পালঙ্ক’ ছবিটির বেশির ভাগ শুটিং এই কলাকোপাতেই হয়েছে। শুধু সৌন্দর্যই নয় নবাবগঞ্জের প্রতিটি এলাকার জনসাধারণের আদর আপ্যায়নও পর্যটকদের করে মুগ্ধ, বিমুগ্ধ। ড. আশরাফ সিদ্দিকরি ভাষায মনে হয় আমিও নবাবগঞ্জের সন্তান। সেখানকার মানুষের আদর-আপ্যায়ন-আন্তরিকতা সব অঞ্চলের সেরা।’
কলাকোপার পরেই রয়েছে বাংলাদেশেরসর্ববৃহৎ খ্রিস্টান পল্লী-গোললা, বন্দুরা, হাসনাবাদ, তুইতাইল, নয়নশ্রী প্রভৃতি। ছিমছাম গ্রামগুলি শিক্ষা, সংস্কৃতিতে যেন এক অন্য জগৎ। পর্যটকদের ভাষায় এগুলো যেন জাপানী পল্লী।’ অধিকাংশই চাকরি করেন মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা এবং খ্রিস্টান আধ্যুষিত গোলার্ধে। বান্দুরা, গোললা এবং হাসনাবাদে রয়েছে খ্রিস্টানদের চতৎকার চার্চ।
নবাবগঞ্জ থানার বান্দুরায় রয়েছে জপমালা রানীর গীর্জা। খ্রিস্টানদের এ উপাসনালয়টি সর্বপ্রথম নির্মিত হয় ১৯৭৭ সালে। পরে ১৯৮৮ ও ২০০২ সালে দু’বার এর সংস্কার করা হয়। গীর্জার পাশেই রয়েছে খ্রিস্টানদের একটি কবরস্থান এবং সেন্ট উফ্রেটিজ কনভেন্ট নামে সিস্টারদের একটি থাকার জায়গা। বড়দিন, ইস্টার সানডেতে এখানে বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। ঢাকার খুব কাছেই রয়েছে এসব দর্শনীয় স্থান। সহজেই ঘুরে আসো যায় এখান থেকে। ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। পৌঁছতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মত। গুলিস্তান থেকে গঙ্গা, যমুনা, শিশির ও নবাবগঞ্জ পরিবহনের বাস চলাচল করে এই রুটে, ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা।