পযর্টন কেন্দ্র

ঢাকার পর্যটন কেন্দ্র সমূহ

ঢাকা : বাংলাদেশের রাজধানী। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
অবস্থান : ভৌগলিক দিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে, দেশের প্রায় মর্ধবর্তী স্থানে অবস্থিত।
আয়তন : ৮১৫.৮৫ বর্গ কিলোমিটার।
লোকসংখ্যা : ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ লোকের বাস।
যাতায়াত : আকাশ, রেল, বাস, ট্যাক্সি এবং নদীপথে যাতায়াত করা যায়।
প্রধান ভাষা : বাংলা। ইংরেজীরও চল আছে ঢাকায়।

বেড়ানোর উপযুক্ত সময় : সারা বছর, তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। মে-জুন গরম ও আদ্রতা, আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি ও পানিতে ভ্রমণের অযোগ্য।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা। সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির শহরঢাকা। প্রচলিত আছে ঢাকা নগরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ঢাকের বাদ্য ভালবাসতেন, তাই এর নাম হয়েছে ঢক্কা বা ঢাকা। ঢাকাকে কেন্দ্র করেই এক সময় আবর্তিত হয়েছে বাংলা এবং পরবর্তীকালে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের ইতিহাস। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে সুবেদার ইসলাম খাঁ ১৬১০ সালে বাংলার পরাক্রমশালী জমিদার ও রাজাদের দমানোর জন্য রাজধানী স্থাপন করেন ঢাকায়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুষারে এ শহরের নতুন নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীর নগর। অবশেষে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পরে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে নতুন করে আবার রাজধানীর মর্যাদা ফিরে পায় ঢাকা। মোঘল আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত ঘটনাবলীর সাক্ষী আজকের মহানগরী ঢাকা একই সাথে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনার নগরী।

বিশ্ববিখ্যাত মসলিন রপ্তানি হতো ঢাকা থেকেই। ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে মোঘল শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা। এ সময় ঢাকা ছিল এক সমৃদ্ধিশালী নরগী। কবির ভাষায় এটি ছিল ‘প্রাচ্যের শহরগুলোর রানী’।

ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। কেউবা বলেন রিকশার শহর ঢাকা।  ঢাকার আকাশে যে বাতাস বয়- সে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ঢাকার সৃষ্টি বাঙালি কৃষ্টি। সাহিত্য প্রিয় বাঙালি-আড্ডাও তার রক্তে মিশে। তার আড্ডায় স্থান পায় সিনেমা, নাটক, সাহিত্য, সাংস্কৃতি ও রাজনীতি থেকে ক্রিকেট খেলা পর্যন্ত। কর্মে বিমুখতা, শ্রমে অসন্তোষ শিল্প ও বাণিজ্যে সঙ্কট বাড়িয়েছে। আবার অভাব যাতনা হেলায় ভুলে ঝাঁপিয়েও পড়ে পরহিতার্থে ঢাকা। তবে ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ সমস্যা আছে যানবাহনের, রাস্তাঘাটের। ঢাকার বাতাসও যেন দুষিত। ফুটপাত উধাও। রাস্তা জুড়ে পসরা সাজিয়েছেন দোকানি। গাড়িও থমকে দাঁড়ায় ফাঁক-ফোঁকর পেলে। মডার্ন সিটি হলেও ঢাকার রাস্তায় জনসাধারণ প্রতি মুহূর্তেই শংকিত থাকেন ছিনতাইকারীর ভয়ে। নিরাপত্তার ও বেশ অভাব বোধ করেন। ঢাকা বর্ষাকালে অনেক সময় অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে নৌকাও চলে। ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ১২ মাসই নৌকা যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে।

লোড শেডিং অর্থাৎ পাওয়ার কাট আজ কিছুটা প্রশমিত হলেও সে যেন আর এক বিড়ম্বনা ঢাকার। তবুও ঢাকা অদর্শনে বাংলাদেশ দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রস্থল ঢাকা। পর্যটক আকর্ষণও ঢাকা শহেরর অকল্পনীয়, আয়োজনের ত্রুটি নেই তার। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে ঢাকার।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সারা ডাকা নগরীই সেজে ওঠে উৎসবের সাজে। বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখেও আলোর সাজ পরে সারা শহর। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে ডাকাও সেজে ওঠে আলোক মালায়। মুসলিম উৎসব ঈদ ও মহররমও জাঁকালো উৎসব ঢাকা নগরীতে। ২১শে ফেব্রুয়ারি- ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী ‘ঢাকা বই মেলা’ মাতোয়ারা করে তোলে ঢাকাকে।

রসনার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই ঢাকা। ঢাকার মিষ্টি তার আর এক কৃষ্টি। এখানকার রসগোল্লা, রসোমালাই, গোলাপজাম, সন্দেশ আজও রসনা মেটায়। জামদানী ও তাঁত শিল্পেও ঢাকা অদ্বিতীয়। মিরপুরে রযেছে জামদানী পল্লী। বিখ্যাত ঢাকাই জামদানী শাড়ী শোভা পাচ্ছে শহরের নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বিপনী বিতানগুলোতে। টাঙ্গাইল শাড়ী কুটির, তাঁত সম্ভার, পলক, ঝলক ও নোলকসহ বেশ কিছু দোকান তাঁত বস্ত্রের সম্ভার নিয়ে বিপনী খুলেছে ঢাকার মন্ত্রীপাড়া সারা বেইলী রোড জুড়ে। তবে শুক্রবার বন্ধ তাকে বেইলী রোড। এদের এ পর্যটক আকর্ষণ অনস্বীকার্য। পর্যটকদের উচিত হবে ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী, রাজশাহীর সিল্ক, হস্তশিল্পের নানান সম্ভার বাংলাদেশ ভ্রমণের স্মারকরূপে সঙ্গী করা।

ঢাকার ঐতিহ্যশালী নিউমার্কেট কেনাকাটায় আজও অনন্য। কার্পেট থেকে হ্যান্ডিক্রাফটস সবই মেলে, তবুও যেন মান ও দামে সাবধানতা পালনীয়। সোমবার অর্ধদিবস এবং মঙ্গলবার পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে নিউ মার্কেট। ঢাকার নতুন আকর্ষণ এশিয়ার বৃহত্তম শপিং মহল পান্থপথের ‘বসুন্ধরা সিটি মল’। এখানে রয়েছে দেশের সর্বাধুনিক সিনেমা হল, স্টার সিনেপ্লেক্স। এটি বুধবার পূর্ণদিবস এবং বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে।

উত্তরার মাসকট প্লাজা, ধানম-ির মেট্রো শপিং মল ও রাপা প্লাজা, হাতির পুলের ইস্টার্ণ প্লাজা, কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মীনাবাজার প্রভৃতি অভিজাত মার্কেটগুলো ইতোমধ্যেই ঢাকা ভ্রমণকারীদের কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠেছে। ইস্টার্ণ প্লাজা শনিবার অর্ধদিবস এবং রবিবার পূর্ণদিবস, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি সোমবার পূর্ণ দিবস এবং রাপা প্লাজা বন্ধ থাকে শনিবার। দেশী পণ্যের পাশাপাশি বিদেশী পন্যের নানান সম্ভার মেলে নিউ মার্কেটসহ অভিজাত এই মার্কেটগুলোতে। আড়ং একটি বিশিষ্ট হ্যান্ডিক্রাফট এর নাম। এই সপটি ঢাকার বাইরেও আছে।

এছাড়া সোনা ও রূপার তৈরি সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায় নওয়াবপুরের শাখারী বাজার। খোনে সরু সরু গলির ভেতর সারি সারি দোকানে স্বর্ণ শিল্পীরা আলো-আধাঁরির  ভেতর থেকে ুটিয়ে তোলেন অপরূপ সব গহনা। এখানে আরও পাওয়া যায় চমৎকার ডিজাইনের শাখা, মিউজিক্যাল ইনস্ট্রমেন্ট, মূর্তি, খেলনা, পোশাক ইত্যাদি। তবে স্বর্ণের মার্কেট হিসাবে বায়তুল মার্কেটের নাম বিশেষ পরিচিত।

ঢাকায় ভালো কিংবা বিদেশী জিনিস কম টাকায় পাওয়া যায় এমন মার্কেটও রয়েছে। যেমন-গুলিস্তান হকার্স মার্কেট-গুলিস্তান, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, মৌচাক মার্কেট-মৌচাক, মারিবাগ মার্কেট-মালিবাগ, পলওয়েল মার্কেট-নয়াপল্টন, রাজধানী মার্কেট-টিকাটুলী, নিউমার্কেট এলাকায় ধানম-ি হকার্স মার্কেট, নীলক্ষেত হকার্স মার্কেট-এখানে দেশী-বিদেশী বই ও ম্যাগাজিন পাওয়া যায় খুব সস্তায়।

পর্যটকদের সম্পাদক হিসাবে পরিচিত মানচিত্র তা গ্রাফোসম্যান নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে তৈরি করে যাচ্ছে। এই মানচিত্র ফুটপাত থেকে সোনারগাঁও হোটেলের বুক স্টলে পাওয়া যায়। কোন পর্যটক যদি আরও বিশেষ ধরণের বিশেষ মানচিত্র চান তারা ৩/৩ সি পুরানা পল্টন, দ্বিতীয় তলায় যোগাযোগ করুন।

এছাড়াও রয়েছে ফুটপাথ-বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের ফুটপাথ, গুলিস্তান হকার্স মার্কেটের ফুটপাথ, গাউছিয়া, নীলক্ষেত ও নিউমার্কেটের ফুটপাথ, সদরঘাট মার্কেটের ফুটপাথ, ওয়াইজ ঘাট মর্কেটের ফুটপাথ, মোহাম্মদপুর মার্কেটের ফুটপাথ প্রভৃতি।

বাংলাদেশের সেরা শহর ঢাকা। আজকের ঢাকা গড়েও উঠেছে দুটি ভাগে। ওল্ড ঢাকা-সঙ্কীর্ণ গলিপথে ঘিঞ্জি শহর। মুগল আমরে তৈরি ‘পুরানো ঢাকা’ নামে সমধিক খ্যাত। নতুন ঢাকা নতুন করে রূপ নিচ্ছে নিত্য নতুন সাজে। ঢাকার বৈচিত্র্য তার চোখ ধাঁধানো, চমক লাগানো আকাশচুম্বী অট্টালিকা। ঢাকার রাজপথগুলিও খুচবই মসৃণ। যানবাহন ব্যবস্থা অতীব সুন্দর। মসৃন পথঘাট, আধুন্কি বাড়ি-ঘর, অফিস-কাছারি সবেরই যেন মাদকতা। এক কথায় ঢাকা তিলোত্তমা নগরী। সিটি অব জয়! এর আকাশে বাতাসে ভেসে ওঠে সারা বিশ্বের হৃৎস্পন্দন। ঢাকা সার্বজনীন শহর। পরকে আপন করে অতি সহজেই ঢাকা। এর আতিথেয়তাও আন্তরিক ও আকর্ষণীয়। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিনিধি এসেছেন শহরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *