নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম খরচে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায় নেদারল্যান্ডে। এছাড়াও প্রতিবছর সরকারি, বেসরকারিভাবে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী প্রচুর শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয় দেশটিতে। আর ডাচ সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তরিকতায় অনন্য। মেধাবী শিক্ষার্থীদের তাঁদের দেশে কর্মসংস্থান এবং এমনকি নাগরিকত্ব দিয়েও ধরে রাখতে চায়। তাছাড়া গবেষনা কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ উন্নত জীবনমান এসব কিছুই দেশটিতে আসতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের চৌম্বকের মতো আকর্ষন করে। তাই তো নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই বাইরের দেশগুলো থেকে আসে। 

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে ইউরোপের গেটওয়ে খ্যাত নেদারল্যান্ডে। আপনিও যদি এই অনেকের একজন হতে চান তবে আজকের এই ভিডিওটি আপনারই জন্য। আজকের এই ভিডিওতে  নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, টিউশন ফি, আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কি কি ডকুমেন্টস দরকার, কিভাবে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যাবে এই সব বিষয় নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে শুরু করা যাক – 

ডাচ ডিগ্রীসমূহ

ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টোরাল সহ প্রায় সকল ধরণের প্রোগ্রামেই নেদারল্যান্ডে যাবার সুযোগ রয়েছে। নেদারল্যান্ডেও উচ্চশিক্ষার কোর্সগুলোতে অন্যান্য দেশগুলোর কোর্সের মতই একই সময় লাগে। ব্যাচেলর ডিগ্রী (BA, BSC, BEng) এর জন্য সাধারণত তিন থেকে চার বছরের মতো সময় লাগে। মাস্টার্স ডিগ্রী (MA, MSC, MEng) এর জন্য সময় লাগে দেড় থেকে দুই বছরের মতো। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সময় লাগে চার থেকে পাঁচ বছরের মতো। ব্যাচেলর কোর্সগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাচ ভাষায় পড়ানো হয়। তবে ভয়ের কোনো কারণ নাই, ব্যাচেলর লেভেলেও ইংরেজি মাধ্যমের কিছু কোর্সও কিন্তু আছে। আবার এদিক দিয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর ক্ষেত্রে ভাষা হিসেবে ইংরেজির ব্যবহার যথেষ্ট। 

একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যাচেলর, মাস্টার্স পর্যায়ে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক ফাউন্ডেশন কোর্স অফার করে থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার পছন্দের প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য উত্তীর্ণ না হন, সেক্ষেত্রে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে  আপনি স্বীকৃত শর্তাধীন চিঠি প্রদান করতে পারবেন অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়ে মূল প্রোগ্রামে ভর্তি হবার জন্য। অতঃপর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি প্রস্তুতিমূলক কোর্স অনুসরণ করার জন্য একাডেমিক সর্বোচ্চ ছয় মাস বা এক বছরের জন্য নেদারল্যান্ডে আসতে পারবেন এবং পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে মূল প্রোগ্রামে স্থায়ীভাবে পড়ার জন্য আপনার অফার লেটারটি নিশ্চিত করতে পারবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স নির্বাচন

QS World University Rankings 2019 এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সেরা ৩৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৩ টি। তম্মধ্যে ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয় আবার সেরা ১৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবস্থান করছে। Delft University of Technology (TU Delft), University of Amsterdam, Eindhoven University of Technology, Leiden University, Utrecht University, University of Groningen এর মতো সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহ আরো প্রায় ৭০ টির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে নেদারল্যান্ডে, যেগুলোতে আপনি ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়াশোনা করতে পারবেন। আর Natural Sciences degrees, Computer Science degrees, Engineering degrees, Social Science degrees, Business degrees সহ প্রায় সব ধরনের ডিগ্রীতেই নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তাই প্রথমে আপনার পছন্দের কোর্স টি বাছাই করুন। অতঃপর ঐ কোর্স এর জন্য সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাছাই করে তাঁদের ওয়েবসাইট ঘাটুন। 

টিউশন ফি

নেদারল্যান্ডে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ইউরোপীয়ান অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম ব্যায়বহুলই বলা চলে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইউ) এর অন্তর্গত ২৭ টি দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর গড়ে ১৮০০ থেকে ৪০০০ ইউরো এর মতো ব্যয় হয় টিউশন ফি বাবদ। আর এছাড়া বাকি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাবদ প্রতিবছর গড়ে ব্যয় করতে হয় ৬,০০০ থেকে ২০,০০০ ইউরো। সাধারণত ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে টিউশন ফি বছরে ৬,০০০ থেকে ১৫,০০০ ইউরো এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি বছরে ৮,০০০ থেকে ২০,০০০ ইউরো হয়ে থাকে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবীমা, আবাসন ব্যয়, যাতায়াত খরচ বাবদ মোটামুটি ভাল পরিমাণ খরচই পড়বে। বিশেষ করে আমাদের মতো বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য এই খরচটা আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার সাপেক্ষে বেশিই মনে হবে।  তাই সর্বোপরি চেষ্টা করতে হবে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে একটি স্কলারশিপ যোগাড় করার। তবে পোস্ট ডক্টরাল প্রোগ্রামে টিউশন ফি প্রদান করতে হয় না। বরং পোস্ট ডক্ট্ররাল প্রোগ্রামে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ ইউরো বেতন হিসেবেও পাওয়া যায়।

স্কলারশিপ ও ফান্ডিং

বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নেদারল্যান্ডে সরকারি, বেসরকারি উভয় ধরনের স্কলারশিপই চালু রয়েছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজস্বভাবে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু স্কলারশিপের ব্যবস্থা চালু রাখে। এসব স্কলারশিপের কোনোটি ফুল ফান্ডিং এর হয়ে থাকে। অর্থাৎ টিউশন ফি সহ সমস্ত যাবতীয় খরচ ব্যতীত বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। আবার কোনোটি পার্শিয়াল ফান্ডিং এর স্কলারশিপ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পড়ালেখার খরচের একটা নির্দিষ্ট অংশ তাঁরা বহন করে। Holland Scholarships, Orange Knowledge Programme, Erasmus Mundus Scholarships in Netherlands এর মতো সরকারি কিছু স্কলারশিপ প্রতি বছরই প্রদান করে থাকে নেদারল্যান্ড সরকার। এছাড়াও Leiden University Excellence Scholarships, University of Maastricht High Potential Scholarships, Radboud University Scholarship Programme, Utrecht University Excellence Scholarships, Eric Bleumink Scholarships at University of Groningen, TU Delft Excellence Scholarships, Amsterdam Merit Scholarships (Netherlands), University of Twente Scholarships, VU University Amsterdam Fellowship Programme এর মতো খ্যাতনামা কিছু স্কলারশিপ বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রদান করে থাকে। 

এছাড়াও আপনি এসিস্টেন্টশিপ ম্যানেজ করেও ফান্ডিং বা গ্রান্ট নিয়ে পাড়ি জমাতে পারেন নেদারল্যান্ডে। এক্ষেত্রে রিসার্চ এসিস্টেন্ট কিংবা টিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কোনো প্রফেসরের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকবনে। তবে এ ফান্ডিং মূলত মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেই পাওয়া সম্ভব, ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এসিস্টেন্টশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে এজন্য প্রফেসরের সাথে আগেই যোগাযোগ করতে হবে। কারণ ফান্ড টা মূলত প্রফেসরই দিয়ে থাকে। তাই ভর্তির আবেদনের মাস ছয়েক পূর্বে কিংবা তাঁরও আগে থেকে এসিস্টেন্টশিপ এর জন্য নতুন শিক্ষার্থী নিবে এবং আপনার গবেষনা ক্ষেত্রের সাথে মিলে এমন প্রফেসর খুঁজে বের করে ই-মেইল এর মাধ্যমে তাঁর কাছে আপনার আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন প্রফেসরদের ওয়েবসাইট, ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট, ফান্ডিং এজেন্সির সাইটগুলো একটু ঘাটাঘাটি করলেই দেখবেন আপনার আগ্রহের সাথে মিলে এমন প্রফেসর পেয়ে যাবেন।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা 

ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতীয় ভাবে একটি সেন্ট্রাল সিস্টেমের আওতায় নিয়ন্ত্রিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়ালেখার মানও যেমন প্রায় একই, তেমনি শিক্ষার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় একই বলা চলে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বা যোগ্যতা কাছাকাছিই চাওয়া হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা তারতম্য হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে- 

  • অন্যান্য দেশের মতো নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যাল্যগুলোতেও ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তি হবার জন্য আপনার এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ভাল গ্রেড থাকতে হবে। আর  মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আপনার ভালো সিজিপিএ থাকতে হবে। আর স্কলারশিপের জন্য ভালো সিজিপিএ থাকা আশীর্বাদস্বরূপ।
  • নেদারল্যান্ডে আপনি যদি মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য যেতে চান, আর আপনার যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত  জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত থাকে, তবে তা আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে আপনার সিজিপিএ তুলনামূলক কম হলেও এই প্যারামিটারটি অনেকাংশে সহযোগীতা করবে।
  • আপনি যদি ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য নেদারল্যান্ডে যেতে চান, তবে আপনাকে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট হিসেবে IELTS বা TOEFL দিতে হবে। এক্ষেত্রে IELTS এ আপনার ন্যুন্যতম স্কোর ৬.৫ থাকতে হবে। আর  TOEFL দিলে Paper Based TOEFL এর ক্ষেত্রে ৫৫০ এর মতো মার্ক্স থাকা লাগবে এবং Computer Based TOEFL এর ক্ষেত্রে ২১৩ এর মতো মার্ক্স থাকলেই চলবে। আর যদি ডাচ মাধ্যমে নেদারল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য যান, তবে আপনাকে Dutch NT2 Course পাশ করতে হবে। 
  • নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে অনেক বিশ্ববিদ্যালইয়েই GRE বা GMAT পরীক্ষা আবশ্যক হিসেবে উল্লেখ করে দেয়। এক্ষেত্রে GRE স্কোর সাধারণত ৩১০ থেকে ৩৩০ চাওয়া হয়। আর GMAT এর ক্ষেত্রে স্কোর ৬০০ থাকা লাগে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বা কোর্স এর ক্ষেত্রে  GRE বা GMAT এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। 
  • এছাড়াও আরো যেসব জিনিষের প্রয়োজন হবেঃ ব্যাচেলর থিসিস বা ইন্টার্নশীপ রিপোর্ট, আপনার পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের দুইজন  শিক্ষক কতৃক প্রদত্ত দুইটি Letter of Recommendation (LOR), Statement of Purpose (SOP), একাডেমিক বিভিন্ন কাগজপত্রের স্ক্যানকপি। 
  • Remember: নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে, উল্লেখ্য যোগ্যতাগুলো থাকলেই চলবে। অতিরিক্ত বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবে একটি ব্যাপার বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার যেন শিক্ষাজীবনের কোনো ক্ষেত্রে তৃতীয় বিভাগ না থাকে।  

আবেদনের সময়কাল ও অন্যান্য

নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে দুই বার আবেদন এর সময়কাল থাকে। অর্থাৎ বছরে আপনি দুইটি সেশনে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে বছরের শুরুর দিকে সামার সেশন (Summer Session) ও বছরের শেষে উইন্টার সেশনে (Winter Session) এ আবেদন করতে পারবেন। ফেব্রুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত সামার সেশন (Summer Session) ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উইন্টার সেশন (Winter Session) হিসেবে গণ্য হয়। আর আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি সেন্ট্রালাইজড এডমিশন সিস্টেমে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের জন্য অনেকক্ষেত্রে আবেদন ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে এই ফি এর পরিমাণ ৪০ থেকে ১০০ ইউরো পর্যন্তও হয়ে থাকে। আর আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো স্ক্যান করে অনলাইনে আপলোড করার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষ বিষয়ে আরও পড়ুন

ভিসার জন্য আবেদনের নিয়মাবলী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আপনার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর আপনার পরবর্তী কাজ হবে ভিসার জন্য আবেদন করা। ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ড এম্ব্যাসি এর দ্বারস্থ হতে হবে। এম্ব্যাসি থেকে এসব কাগজপত্র নেদারল্যান্ড ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এবং কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে আপনার কাছে ভিসা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সবই তো জানলেন, কিন্তু ভিসা আবেদনের জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন জানেন তো? বেশ, আমি আপনাকে সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি আপনার ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র দরকার।

  • ভিসা আবেদন ফর্ম টি প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত অফার লেটার, পূর্ববর্তী একাডেমিক কাগজপত্র যেমন সার্টিফিকেট, মার্কশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি সত্যায়িত করে আবেদন ফর্মটির সাথে যোগ করে দিবেন। 
  • সদ্য তোলা আপনার স্পষ্ট পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্ট এর ফটোকপি (এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, পাসপোর্ট যেন দশ বছরের পুরানো না হয়), জম্ম সনদ, ভোটার আইডি কার্ড, পুলিশ ক্লিয়ারান্স, হেলথ ইন্স্যুরেন্স, মেডিক্যাল রিপোর্ট, নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট সহ সিভি, এসওপি, রেফারেন্স লেটার, মোটিভেশনাল লেটার, IELTS/TOEFL বা যদি GRE/GMAT দিয়ে থাকেন সেগুলোর সার্টিফিকেট। 
  • ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট, ব্যাংক সলভেন্সি পেপার, ইনকাম ট্যাক্স পেপার, ফিক্সড জামানত সহ স্পন্সর কর্তৃক হলফনামা অর্থাৎ এফিড্যাভিট এর কাগজপত্র ইত্যাদি সহ অতিরিক্ত আরো কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করে দেওয়া লাগতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে ১০,০০০ ইউরো ট্রান্সফারও করা লাগে। তবে নেদারল্যান্ডের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানো লাগে নাহ।

কাজের সুবিধা ও স্থায়ী বসবাস

নেদারল্যান্ডে স্টুডেন্ট থাকাকালীন অবস্থায় আপনি সপ্তাহে ১৬ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি পাবেন। আর আপনার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর, নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ আপনাকে এক বছরের ভিসা দিবে চাকুরী খোঁজার জন্য। আর স্থায়ী বসবাস বা Permanent Residency (PR) এর ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসে ৫ বছর বসবাসের পর আপনি স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই ৫ বছরের মধ্যে একটানা ৬ মাস বা তার বেশি সময় আপনি নেদারল্যান্ডসের বাইরে থাকলে আবেদনে বিবেচিত হবেন নাহ। আর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন যদি একাধারে ৮ বছর নেদারল্যান্ডে থাকেন।


Student Visa পেতে চান? কোন চিন্তা নেই, সেবারু ডটকম আছে আপনার পাশে।
আমাদের কাছ থেকে কল পেতে এখানে ক্লিক করে গুগল ফরম পুরন করুন- রেজিস্ট্রেশন ফরম
ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্ন করতে বা আমাদের লাইভ দেখতে জয়েন করুন- https://fb.com/groups/studentvisahelpline
নিয়মিত ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন: ইউটিউব চ্যানেল
Mobile: +8801711981051 / What’s app (10 am-9pm)। এই সময়ের মধ্যে কল করুন প্লিজ।

পরিশেষে, 

আপনি কি জানেন নেদারল্যান্ড সেনজেনভুক্ত দেশ? মূলত ইউরোপের ২৭ টি দেশ ভিসা পলিসির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি অবলম্বন করে থাকে। অর্থাৎ এক ভিসায় এই ২৭ টি দেশে আপনি যাতায়াত করতে পারবেন। এই ভিসাকে মূলত সেনজেন ভিসা বলা হয়। তার মানে বুঝতেই পারছেন, আপনার নেদারল্যান্ডের ভিসা দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন লন্ডন, প্যারিস কিংবা বার্লিন শহরে। তাই এত এত সুযোগ সুবিধা হাতছাড়া করতে না চাইলে আজই উদ্যম নিয়ে লেগে পড়ুন নেদারল্যান্ডে স্কলারশিপ যোগাড় করতে। আর আপনার মনে নেদারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে কিংবা পরামর্শ প্রয়োজন হলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *