বিদেশ যেতে প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে এই লেখাটি ভালোভাবে পড়ুন। তা না হলে বিপদ থেকে রক্ষায় হবে যাবে খুব কঠিন।
কারণ বিভিন্নভাবে যেমন, বিকাশে প্রতারণা, ফেসবুকে প্রতারণা, ইউটিউব এর মাধ্যমে অনলাইন প্রতারণা প্রতারণা চলছে অহরহ।
তাই সাবধান হোন এখনই।পরে পস্তানোর চেয়ে আগেই একটু কষ্ট করে সময় নিয়ে মনোযোগের সাথে নিচের লেখাটি পড়ুন।
বিদেশ যাওয়া সম্পর্কে আপনার ভাবনে কেমন হবে?
অনেকে ভাবেন বিদেশে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। কাজেই বিদেশে যাওয়ার আগে সময় নিয়ে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রথমেই ভাবতে হবে আপনি কোন কাজ জানেন। এরপর ভাবুন কোন দেশে যাবেন। কতো খরচ হবে। খরচের এই টাকা কোথা থেকে আসবে।
ভাবুন যেই কাজে যাচ্ছেন, তাতে বেতন কতো পাবেন? সব খরচ বাদ দিয়ে আপনার কতো অবশিষ্ঠ থাকবে? কত বছরে আপনি খরচের টাকা তুলতে পারবেন।
এসব চিন্তা ভাবনা করে তবেই বিদেশে যাবার সিদ্ধান্ত নিন।
কেন দেশে যাবেন? আগে ভাবুন
বাংলাদেশ থেকে চাকুরি নিয়ে যারা বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেরও বেশি গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৮১ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২৬ লাখই গেছেন সৌদি আরবে। ২২ লাখ গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সাত লাখ, কুয়েতে পাঁচ লাখ, ওমানে ছয় লাখ, সিঙ্গাপুরে পৌনে চার লাখ, বাহারাইনে আড়াই লাখ ও লিবিয়ায় প্রায় এক লাখ কর্মী গেছেন। এগুলোই মূলত বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার। এর বাইরে মরিশাস, লেবানন, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনেই এবং ব্রিটেন, ইতালি, গ্রিস, রুমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কিছু মানুষ যাচ্ছেন। এই দেশগুলোকে বলা হয় শ্রম গ্রহণকারী দেশ।
এবার আপনি কোন দেশে যাবেন ভেবে নিন। তবে একটি প্রশ্ন সব সময় মনে থেকেই যায়? আপনি কিভাবে আগে থেকে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত এবং সঠিক ও বাস্তব তথ্য গুলো জানতে পারবেন? কারন দেশে বিভিন্ন এজেন্ট বা দালাল চক্র সবসময় মিথ্যা ভরসা দিয়ে থাকে।
বিদেশে কাজের ভিসা সম্পর্কে কোথায় ভালো তথ্য পাবেন?
নিউ ইস্কাটন রোডের বায়রা ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল (৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড) ও
দৈনিক পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে বিদেশে নিয়োগের খবরাখবর জানা যাবে। এবং আমিওপারি সাইতে চোখ রাখলেও জানতে পারবেন।
আগে জেনে নিন কীভাবে চাকুরি পাবেন? খরচ কত?
বিদেশে কাজের ভিসার সাথে বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত সেগুলো হলো, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), সরকারি একমাত্র জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল এবং বেসরকারি প্রায় এক হাজার রিক্রটিং এজেন্সি যাদের প্রত্যেকের একটি করে লাইসেন্স নম্বর আছে। এর বাইরে আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আপনাকে বিদেশে নিতে সহায়তা করতে পারে।
বিএমইটির পরিচালন নূরুল ইসলাম জানান, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা বা অন্যান্য সার্বিক সহযোগিতার জন্য মাঝখানের দালাল এড়িয়ে সরাসরি বৈধ কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আর বিদেশ যেতে আগ্রহীরা আমাদের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে পারেন।
এমনকি তারা মোবাইলেও বিদেশে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করতে পারেন।
ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রতারণার ফাঁদ!
ইউরোপে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনা নিত্যদিনের। মনে রাখবেন, বিদেশে যাওয়ার যে নিয়ম ইউরোপে চাকুরি নিয়ে যাওয়ার নিয়মও তাই। ইউরোপের মধ্যে গ্রিস, ইতালি, রুমানিয়া, ব্রিটেন এই দেশগুলোতে অনেকেই চাকুরি নিয়ে যান। ইতালিতে বৈধভাবে কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে ২০০২ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যাচ্ছেন রুমানিয়ায়। তবে এক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই দালালরা আপনাকে অবৈধপথে ইউরোপে ঢোকানোর চেষ্টা করবে। ভুলেও এই ফাঁদে পা দেবেন না।
কত বছর বয়স হলে বিদেশ যেতে পারবেন?
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কোনো নারী চাকুরি নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না। তবে গৃহকর্মী ও পোষাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২৫ হতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার জন্য সার্বিক সহায়তা দেয় সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল। আর মাত্র দশটি রিক্রটিং এজেন্সির বিদেশে নারীদের পাঠানোর অনুমতি আছে। কাজেই এই রিক্রটিং এজেন্সির বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা দালাল এড়িয়ে চলুন।
ওয়ার্ক পারমিট ও চাকরির চুক্তিটি পড়ুন
বিদেশে যাওয়ার আগে ভালোভাবে চুক্তি এবং চুক্তির শর্ত জেনে যান। চুক্তি ছাড়াও আপনার ওয়ার্ক পারমিটটি ভালো করে দেখুন। ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতিপত্র মানে আপনি যেই দেশে যাচ্ছেন সেই দেশে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের শ্রম অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়। মনে রাখবেন বিমানবনদরে কোনো ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয় না।
আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, সৌদি আরবে খাদ্যসহ দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের বেতন খাবারসহ ৬০০ রিয়াল ও খাবারছাড়া ৭৫০ রিয়াল, সংযুক্ত আরব অমিরাতে খাদ্যসহ দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের বেতন খাবারসহ ৬০০ দিরঅহাম ও খাবারছাড়া ৭৫০ দিরহাম, কুয়েতে খাবারসহ ৪৭ কুয়েতি দিনার, খাবারছাড়া ৬০ কুয়েতি দিনার। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে নুন্যতম বেতন ২০০ মার্কিন ডলার। এই বেতনের কমে কোথাও চাকুরি করতে যাবেন না। তবে ইউরোপের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একটু ভিন্ন।
ভিসা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত:
ভিসা হচ্ছে শ্রম গ্রহণকারী দেশের ইমিগ্রেশন থেকে সেদেশে যাওয়ার অনুমতি। ভিসা ছাড়া কোনো দেশে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায় না। চাকুরি নিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে পাসপোর্টে অবশ্যই ‘এমপ্লয়মেন্ট ভিসা’ থাকতে হবে। ভিসা ছাড়া কেউ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিমানবন্দরেই আটক হতে পারেন। রিক্রটিং এজেন্সি ও আত্মীয় স্বজন যার মাধ্যমেই ভিসা সংগ্রহ করুন না কেন তা বৈধ কিনা যাচাই করে দেখুন। ভিসা যাচাইয়ের জন্য অভিবাসনে ইচ্ছুক ব্যাক্তি বাংলাদেশে অবস্থতি সে দেশের দূতাবাস কিংবা বিএমইটিতে খোঁজ নিতে পারেন।
আপনি অনলাইনে বিভিন্ন দেশের ভিসা যাচাই করে নিতে পারবেন। বিএমইটির ডাটাবেজ নাম লেখানো: বিদেশগামী প্রত্যেক কর্মীকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে নাম লেখাতে হয়। এজন্য নির্ধারত আবেদনপত্র, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপারেশেন থেকে দেওয়া নাগরিক সদনপত্র লাগে। ডাটাবেজে নাম লেখানোর পর ঢাকা জেলার জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে। এখন স্মার্ট কার্ড ছাড়া বিদেশে যাওয়া যায় না।
মেডিকেল সনদ কি কেন লাগে?
বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মেডিকেলের সনদ নিতে হয়। দূতাবাস নির্ধারিত ক্লিনিকের মাধ্যমে তা করতে হয়।
সাধারণ শারিরীরক যোগ্যতা, রক্ত পরীক্ষা এসব বিষয় দেখা হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায়।
বিদেশ যাওয়ার জন্য অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
উপরের লেখাটি যদি ফলো করেন। এবং সে নিয়মে বিদেশে ওয়ার্কপারমিট ভিসা বা কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান, তবে অনলাইন প্রতারণা হোক বা বিকাশে প্রতারণা হোক
আশা করা যায় আপনি বেঁচে যাবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।