চা পাতার ব্যবসা

চা পাতার ব্যবসা আইডিয়া : প্রতিদিন ২০০০ টাকা আয়ের উপায়

চা পাতার ব্যবসা করে প্রতিদিন ২০০০ টাকা আয় করা সম্ভব। বিনিয়োগ মাত্র ১২০০০ টাকা। কি আবাক হলেন? তাহল চলুন দেখিয়ে দেই প্রতি দিন ২০০০ টাকা চা পাতা বিক্রি করে কিভাবে আয় করবেন। এই লেখাটিতে আপনি পাবেন কোন এলাকায় কোন চা পাতা চলে?
চা পাতা কত প্রকার হয়? কোন চা পাতার দাম কত? চা পাতার পাইকারী বাজার কোথায়? ইত্যাদি নানা বিষয়।
সর্বপরি চায়ের গুণাগুনের উপর ভিত্তি করে চা পাতার সকল তথ্যই পাবেন এই লেখায়।

প্রতিদিন ২০০০ টাকা আয় করুন চা পাতা বিক্রি করে !

এই আলোচনাটি একটু কঠিন হবে। মনোযোগ না থাকালে পরে প্যারাটি পড়ুন। শুরুতে আপনার এলাকায় যে সকল চায়ের দোকান আছে প্রতিদিন একবার করে দোকান গুলি পরিদর্শন করুন। এবং এর একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এই শিরোনামে, “চা পাতার ব্যবসা ২০২১”
যেখানে চা দোকানদারের নাম, দোকানের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখুন। আপনি ৫০ টি দোকানে প্রতিদিন একবার করে ১৫ দিন নিয়মিত যান। দেখবেন কমপক্ষে ৩০ টি দোকান আপনার চা পাতা কেনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা যদি অন্য চা পাতার তুলনায় আমাদের সরবরাহকৃত চা কম মূল্যে পায় তবে অবশ্যই কেনার জন্য আগ্রহ দেখাবে। আর প্রতিদিন ১০০ দোকানে যদি আপনি ৫০০ গ্রাম করে চা পাতা বিক্রি করেন, তবে আপনার বিক্রয় হবে দৈনিক ৫০ কেজি । প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা লাভ হলে ৫০ কেজিতে লাভ হয় ২০০০ টাকা । আর প্রতি মাসে লাভ হবে ৬০০০০ টাকা। এভাবেই ২০০০ টাকা থেকে আস্তে আস্তে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চায়ের ব্যবসা থেকে আয় করা সম্ভব।

আরও পড়ুন:

গ্রামে বসে চা পাতার ব্যবসা করার উপায়:

চা পাতার ব্যবসা মূলত সহজ এবং কম পুঁজির জন্য এ সময়ের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। কারণ চা পাতার ব্যবসায়িক চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বর্তমানে একটি লাভজনক ব্যবসা হল চা পাতা।  এক গবেষণায় দেখা যায় গড়ে প্রতিদিন একজন মানুষ  ১২ কাপ চা পান করে।
তাতে প্রতিদিন মোট ২১৬০০০০০০০ কোটি কাপ চা খাওয়া হয় এই বাংলাদেশে। এর জন্য শহর কিংবা ধনী এলাকর দরকার পড়ে না।
গ্রাম কিংবা শহর সকল জাংগায় চা পাতার ব্যবসা করে প্রচুর ইনকামের সুযোগ আছে।

পাইকারী ক্রয় করবেন কিভাবে?

আপনার এলাকায় চা পাতার ব্যবসা করার জন্য ডিলারের কাছ থেকে পাইকারি দাম বস্তা আকারে বা প্রতি প্যাকেট হিসেবে কিনুন। বড় বড় অনের চা কম্পানি চা পাতার পাইকারি বাজারের মূল্য  অনুযায়ী ক্ষুত্র উদ্যক্তার কাছে চা পাতা বিক্রি করছে। যাতে করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যক্তাদের চা পাতার ব্যবসা করা সহজ হয়। গ্রাম বাংলার মানুষ ক্ত বেকারত্বের অভিশাপ  মুক্ত হয়ে জীবন গড়ার উপায় হিসাবে চা পাতার ব্যবসা কে বেছে নেয়ার সুযোগ পায়।

চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে অকশনে চা পাতা কিনতে পারেন

চট্টগ্রাম বিভাগে ও সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গলে চা পাতার অকশন হয়। বাংলাদেশ চা বোর্ড কতৃক এই অকশন ডাকা হয়, আপনি সেখান থেকে চা পাতা ক্রয় করতে পারেন। সে জন্য অবশ্যই আপনাকে চা বোর্ড হতে বিটার লাইসেন্স করে নিতে হবে। তারপর বৈধ ভাবে আপনি চা পাতা ক্রয় করতে পারবেন।

চা পাতার প্রকারভেদ:

চা পাতা অনেক প্রকারের হয়। এ গুলো মূলত এর সাইজ বা আকার অনুসারে পার্থক্য হয়। বিওপি, পিডিএফ, সিডি, ডাস্ট, জিবিওপি ইত্যাদি। এর মধ্যে জিবিওপিটি বেশি চলে। জিবিওপি চায়ের বৈশিষ্ট হলো: চায়ের কেটলিতে একটু বেশি সময় নিয়ে লিকার ছাড়ে। এবং ৩-৫ ঘন্টা লিকার দিয়ে থাকে। চায়ের জগতে জিবিওপি চা বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলে চলে।
এতো গেলো গুনাগুনের ভিত্তিতে পাথর্ক্য। এবার আসি বাজারে কত রকমের প্যাকেটে চা পাতা বিক্রি হয়। বিভিন্ন চা কম্পানি নিজ নিজ নামে চা পাতা ব্যান্ডিং করে যেমন, ইস্পাহানী, কোয়ালিটি, তাজা, সকাল-সন্ধা ইত্যাদি।

চা পাতার সাইজ বা গ্রেড

চা পাতার সাইজ মোটা থেকে চিকন বা পাউডার হয়। এগুলো নির্ভর করে কোন অঞ্চলে কোন গ্রেডের বা সাইজের চা পাতা চলে তার উপর।চা পাতার সাইজগুলো নিচে দেওয়া হল।

  • বিওপি-BOP
  • জিবিওপি- GBOP
  • ওএফ-OF
  • পিএফ-PF
  • পিডি-PD
  • আরডি-RD
  • ডাস্ট-DUST
  • সিডি/ডাস্ট-CD/DUST

চা পাতার লাইসেন্স পাবেন কোথায়?

চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। এই লাইসেন্স প্রদান করে বাংলাদেশ টি বোর্ড।

খুচরা এবং পাইকারি দামে চা পাতা ক্রয় করেন এবং বিক্রি করেন। তাহলে আপনাকে খুচরা এবং পাইকারি লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। এই লাইসেন্স নিতে গেলে আপনাকে বাংলাদেশ টি বোর্ড কে দুই হাজার পাঁচশত টাকা ফি প্রদান করে নিতে হবে।

যদি অকশনে বিট করেন তাহলে আপনাকে বিটার লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। বিটার লাইসেন্স গ্রহণ করার জন্য আপনার ফি গুণতে হবে দশ হাজার টাকা এবং আপনাকে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন এর সদস্য হতে হবে। এর সদস্য ফি এক লক্ষ চুয়ান্ন হাজার টাকা মাত্র।

অতপর আপনাকে ব্লান্ডার লাইসেন্স নিতে হবে। ব্লেন্ডার লাইসেন্স প্রদান করা হয় তাদের পাতা প্যাকেটজাত করে এই লাইসেন্সের ফি হচ্ছে বিশ হাজার টাকা মাত্র। যদি ব্রোকার্স লাইসেন্স গ্রহন করেন তাহলে আপনাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে গ্রহন করতে হবে।

চা পাতার ডিলারশিপ ব্যবসা

ডিলারশীপ চা পাতা নিয়ে আপনি আপনার এলাকায় খুচরা বিক্রি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কোন কোম্পানির কাছ থেকে চা পাতার ডিলার নিতে হবে। টি ব্যবসা দিয়ে যে শুরু করবেন তা না। সাথে আরও কিছু আইটেম নিয়ে মাঠে নামলো অনেক ভাল হয়। আপনি ডিলারশীপ ব্যবসা শুরু করলে অবশ্যই আপনাকে প্যাকেট করা চা পাতা নিতে হবে। বাংলাদেশে শত শত চা পাতার ডিলারশীপ কোম্পানি আছে। তবে অবশ্যই আপনি বিএসটিআই সার্টিফিকেট দেওয়া কোম্পানির কাছ থেকে চা পাতা কিনে বিজনেস করবেন। আর তা না হলে ‍পুলিশের হাতে ধরা খেতে পারেন।

ডিলার হওয়া বা পাইকারী ক্রয়ের নিয়ম:

  • পাইকারী ক্রয়ের জন্য সর্বনিম্ন ৫০ কেজি চা পাতা বুকিং দিন। তবে স্যাম্পল হিসেবে ২০ কেজি নেওয়ার সুযোগ আছে।
  • অথাবা ডিলার হতে চাইলে ডিলারশিপের বা চুক্তি করতে চাইলে চা পাতার ব্যবসা ও ডিলার চুক্তি নমুনা দেখুন ।
  • প্রতিটি চা পাতার প্যাকেটের সাইজঃ ৫০০গ্রাম।
  • ডেলিভারি: এসএপরিবহন/সুন্দরবন/অন্যান্য কুরিয়ার থেকে কন্ডিশনে মাল নিতে পারবেন।
  • আমাদের ব্রান্ডের নাম: সকাল সন্ধা, স্বর্ণলী,পাতা কুঁড়ি, ধান সিড়ি, নতুন কঁড়ি ও নতুন কঁড়ি।
  • খোলা চা পাতা বস্তা আকারেও কিনতে পারবেন। প্রতি বস্তা ৫৫ কেজির হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ২ টাকা কমে পাবেন।
  • বিস্তারিত মূল জানতে উপরের তালিকা দেখুন। দয়া করে দামা দামী করবেন না।

চা পাতার পাইকারী ও ডিলার মূল্য তালিকা

চা পাতার নামসাইজ প্রতি কেজির মূল্য
স্বর্ণলী পিএফ ক্যাটাগরি ২৮০ টাকা
পাতা কুঁড়িপিএফ ক্যাটাগরি ২৭০ টাকা
ধান সিড়িডাস্ট ৩১০ টাকা
নতুন কঁড়িপিএফ ক্যাটাগরি ২৯০ টাকা
সকাল সন্ধা যে কোন ক্যাটাগরি ২২০ টাকা
মূল্য পরিবর্তনশীল

গ্রিন টি এর ব্যবসা:

আমরা যে চা পাতার কথা উপরে বল্লাম সেটি মূলত ব্লাক টি। কিন্তু এখন কথা বলব গ্রিন টি নিয়ে। কারণ গ্রিন টির উপকারিতা ব্লাক টি এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রথম আলো সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও ডাক্তাররা গ্রিন টি খেতে বলেন। তাই বর্তমানে এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। আমরা আপনাকে প্রতি কেজি গ্রিন টি ১০০০ টাকায় দেবো। আপনি এটি ১৫০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু প্যাকেট করে বিক্রি করতে হবে। অথবা আমাদের প্যাকেটে বাজারজাত করতে পারবেন। নিচে কিছু নমুনা দেওয়া হল:

চা পাতার ব্যবসা না করে অন্য ব্যবসা খুজছেন?

হ্যাঁ সত্যি বলছি! চা পাতার ব্যবসায় কিছু সমস্যা রয়েছে। আর সেটি হল বাকী দেওয়া। আপনি যদি চায়ের দোকানে বাকি না দেন, তাহলে বিক্রি খুবই কম হবে। আর যদি বাকি দেন তাহলে ধরে নিতে হবে কিছু টাকা আর জীবনেও ফেরৎ পাবেন না। আপনার চা পাতা ঠিকই বিক্রি করবে, কিন্তু বলবে ভাই, আপনার পাতিটা ভালো ছিল না। টাকাটা পরে নিয়েন। আরও কিছু চা পাতা দিয়ে যান। এভাবে বাকি বাড়তেই থাকবে। সুতারং চলুন আমি আপনাকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার ধারণা দিচ্ছি ।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা

পরিশেষে বলা যায় চা পাতার ব্যবসা করা তাদের জন্যই ভালো যাদের মার্কেটিং এর অভিজ্ঞতা আছে। লেগে থাকার সাহস আছে।
সেই সাথে সকলের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার যোগ্যতা আছে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *