সেবারু

হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার

হার্টের সমস্যার লক্ষণ বর্তমান সময়ে সবার জানা আবশ্যক। প্রায়ই শোনা যায় অমুক স্ট্রোক করেছে, অবস্থা খারাপ। আসলে আমাদের বেশীরভাগ
রোগগুলো হয় অসচেতনতার অভাবে। সবাই জানি যে সচেতনতা হচ্ছে নিরাপত্তার জননী।আমরা যদি একটু সচেতন হই যে হার্ট অ্যাটাক কেন হয়।
কিভাবে হয়। হার্ট অ্যাটাকের কারন কি। হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা কি। হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে করনীয় কি।
তাহলে আগে থেকেই আমরা অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারি।আমরা নিম্নের কিছু বিষয় তথা হার্টের সমস্যার লক্ষন ও
প্রতিকার জানা থাকলে আমাদের নিজকে, পরিবার বা আশেপাশের সবাইকে সাহায্য করতে পারব।



হার্ট অ্যাটাক কি? হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হয়?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক না থকে অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া। আমাদের হার্টের উপরের অংশে থাকে ধমনী।
এ ধমনির মাধ্যমেই হার্ট পুষ্টি এবং অক্সিজেন পায়। কিন্তু যখন করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে একটা লেয়ার পড়ে যায়।
তাতে করে রক্ত জমাট হয়ে রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। তখন উক্ত রক্তনালীর মাধ্যমে হার্টের যে অংশটুকু পুষ্টি এবং অক্সিজেন পেত।
সেই মাংসপেশিতে নানা রকম পরিবর্তন ও সমস্যা দেখা দেয়। বুকে ব্যাথা শুরু করে এমনকি মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।
আস্তে আস্তে শরীর আর সাড়া দেয় না এটকেই আমরা হার্ট অ্যাটাক বলি। মূলত রক্তনালী থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ধমনী না পেলেই হার্ট অ্যাটাক হয়।


হার্ট অ্যাটাকের কারন বা হার্টের সমস্যার কারন


আপনার উচ্চ রক্তচাপ যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে সেখান থেকে রক্তনালি ব্লক তথা হার্ট অ্যাটাকের কারন হতে পারে। বিশেষ করে যারা ধূমপান করে এবং যাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে নেই। যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে এবং বেশী বেশী তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার খায়। যাদের কোলেস্টেরল উচ্চ মাত্রায় বেড়ে যায়। শরীরের প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত থাকাও হার্ট অ্যাটাকের কারন। যদি তাদের হার্টের সমস্যার লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারনা থাকে ও তা মেনে চলে তাহলে অনেক ঝুকি কমে যাবে।



হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ


আমরা অনেকেই মনে করি হার্ট অ্যাটাক হলে বুকের বাম দিকে ব্যাথা হবে। অনেক সময় সে ব্যাথা নাও হতে পারে।
শুধু বুকে ব্যথা না হয়ে শরীরের অন্য কোনও অঙ্গেও ব্যাথা অনুভব হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো ভালো
ভাবে জানা থাকলে অনেকটাই ঝুকিহিন থাকা যায়।
হার্ট অ্যাটাকের প্রায় কিছুদিন আগে থেকেই শরীর দুর্বল এবং ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়। কোনও কারণ ছাড়াই শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। অল্পতে হাঁপিয়ে উঠে এবং ঘন ঘন শ্বাস নেয়ার সমস্যা  দেখা দেয়।
হটাত করে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া। যখন হার্ট ব্লক হয় তখন রক্ত সঞ্চালনের জন্য হৃদপিণ্ডের অনেক বেশি পরিশ্রম হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের
ফলে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং শরীরে অশান্তি সৃষ্টি হয়। আর এই ঘাম স্বাভাবিক ঘামের মত নয় এটা সাধারণত অনেক ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।

বুকে ব্যাথা না হয়ে বুকে চাপ ধরা, বুকে পিঠে মোচড় মারা ও অস্বস্তিকর অনুভূত হয় এবং বুক ভারি ভাব অনুভব হওয়াটা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষন।
শরীরের অন্যান্য বিশেষ কিছু অঙ্গে ব্যথা অনুভব হওয়াও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। পেটের উপরের অংশ, কাঁধ, পিঠ, গলা, দাঁত ও চোয়াল এবং
বাম বাহুতে হুট করে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া বা চাপ অনুভব অথবা আড়ষ্টতা অনুভব করাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।


হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা কি?

হটাত কারও হার্ট অ্যাটাক হলে আশেপাশের লোকজন হৈ হুল্লোড় করে রুগীকে আরও নার্ভাস করে দেয়। এটা না করাই ভালো।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা একজন রুগীকে ৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই জেনে নিন কী করবেন হার্ট অ্যাটাক হলে?

  • রুগী যেন ঘাবড়ে না যায় সেজন্য তাঁকে মানসিক সাপোর্ট দিন তাঁকে রিলেক্স অবস্থায় নিয়ে আস্তে হবে।
  • রক্ত চাপ কমাতে তাঁকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিন। তাঁর জিহ্বা খেয়াল করুন তাঁকে হা করে শ্বাস নিতে দিন
  • রুগির শরীরে শ্বাসপ্রশ্বাস, শরীরে পালস নিয়মিত লক্ষ রাখুন। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হলে তাঁর মুখে মুখ লাগিয়ে তাঁকে শ্বাস নিতে সাহায্য করুন।
    শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাত পা হালকা গসে ঘসে মেসেজের মত করতে থাকুন।
  • আশেপাশে এসপিরিন জাতীয় কিছু ব্যবস্থা থাকলে তা তাঁকে চিবিয়ে খেতে দিন এতে অনেকটা উপকার সাবে।
    রুগী তাঁর নিজে থেকে হাত তুলতে পারে কিনা খেয়াল করুন।
  • কোনোভাবেই যেন অজ্ঞান না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অগত্যা অজ্ঞান হয়ে গেলে।
    তাঁর বুকের উপর আপনার একহাতের তর্জনীর উপর আরেক হাতের তালু একসাথে রেখে চাপ দিন।

হার্টের পরীক্ষা কিভাবে করা যায়?


আপনার হার্ট কতটা ভালো আছে তা ঘরোয়া একটা পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সহজেই পরীক্ষা করে নিতে পারেন। প্রথমে মেঝেতে বা মাটিতে পা
দুটি সামনে দিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ুন। পায়ের আঙ্গুলগুলি যেন ভাজ না হয় এবং দুটো পা যেন ভাজ না হয়ে সমান্তরাল জোড়া অবস্থায় থাকে।
এরপর পা দুটি টানটান করে রাখা অবস্থায় হাত দিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলি ছোঁয়ার চেস্টা করুন। যদি পায়ের আঙ্গুলগুলি ছুঁতে পারেন অথবা
ছুঁতে গিয়ে বুকের বাম দিকে কোনও ব্যাথা অনুভব না হয়। তাহলে ধরে নেন আপনার হার্ট দিব্যি ভালো আছে।



হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে করনীয়
হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে আমরা নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারি।


স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করা। অর্থাৎ প্রচুর পরিমানে ফল, শাকসবজি, শস্য ও আঁশ জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া।

ধূমপান ও তামাক বর্জন: ধূমপান শুধু ক্যানসারের ই কারন নয় হৃদ্রোগের কারণ। সিগারেটের ধোঁয়া হৃদ্যন্ত্র ও রক্তনালিকে সংকীর্ণ করে দেয়। ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য ছেড়ে দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০/৫৫ শতাংশ কমানো যায়।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা:

নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিৎ। বিশেষ করে ৩০ ঊর্ধ্ব বয়স থেকে তা বেশী বেশী পরীক্ষা করানো দরকার। যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান তারা কখনও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা বাদ বা ডোজ পরিবর্তন করবেন না। কারন উচ্চ রক্তচাপের কোনো আগাম সতর্ক সংকেত নেই।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করা। আমাদের অনেকেরই শারীরিক পরিশ্রম নেই ফলে ওজন বাড়তে থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম এর অভ্যাস করতে হবে। অন্তত দৈনিক ৩০ মিনিট মাঝারি গতিতে হাটতে হবে। এতে ভালো ব্যায়াম হবে। নিয়মিত ব্যায়াম হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় ও শরীরের ওজনও নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে। ব্যায়াম ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমায় এবং আমাদেরকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • সবসময়য় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখা। কোলেস্টেরল বরাবরই আপনার রক্তনালির ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আমাদের শরীরে কিছু কোলেস্টেরল
    সরাসরি খাবার থেকে আসে তাই চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার কম খাবেন। বয়স ৪০ বছর অতিক্রম করলে নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করবেন।
  • ওজনকে স্বাভাবিক রাখা। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের কোমরের মাপ ৪০ ইঞ্চির বেশি এবং নারীদের ৩৫ ইঞ্চির বেশি হলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
    ওজন মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ কমাতে পারলেই ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তে শর্করা কমে আসে। ওজন কমলে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলও কমে।

হার্টের সমস্যার শেষ কথা

পরিশেষে আমরা আমাদের নিজেকে ও পরিবারে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি থেকে আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো। উপরোক্ত বিষয়াদি ছারাও আমরা স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে পারি। কাচা লবণ না খাওয়া এবং বেশী বেশী ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। প্রয়োজনে খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম। সবসময়য় প্রসান্তি ও মানসিক চাপমুক্ত থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে পারি।


আপনি যদি আপনি যদি হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও জানতে চান তাহলে গুগলে নিচের ওয়ার্ড গুলো দিয়ে সার্চ করুন-
কিওয়ার্ড: আপনি যদি হার্টের সমস্যার লক্ষন ও প্রতিকার, হার্ট অ্যাটাক কি ও কিভাবে হয়?, হার্ট অ্যাটাকের কার্‌ন, হার্টের পরীক্ষা কিভাবে করা যায়?
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষন, হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা, হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতে করনীয়



প্রিয় পাঠক, প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখুন, খুব দ্রুত উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
সংকলনে: আবু জাফর রাজু, মেডিকেল ভিসা কনসালটেন্ট ( ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর)।
আলাপন: +8801711981051 (সকলা ১০ টা-রাত ১০ টা)
সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে: ৮ জুন ২০২১
বিজ্ঞপ্তি: লেখাটি হুবহু কপি না করার জন্য অনুরোধ করছি। তবে এই পোস্টের লিংক প্রদান করলে বৈধ হবে।



Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *