মুসলিম জীবনের আনন্দ উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়। অথচ থার্টি ফার্স্ট নাইট এ যা হয় তার বেশির ভাগ ইসলাম সমর্থন করে না।
তাহলে এই Thirty first night এক জন মুসলমান হিসেবে আপনি কি করবেন? চলুন এই বিষয়ে কিছু আলোচনা জেনে নেই।
ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতকে থার্টিফার্স্ট নাইট বলা হয়। বর্ষবরণের নামে এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের যে কত আয়োজন তার কোনো শেষ নেই।
অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, আজ মুসলমানরাও এ আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি, পটকাবাজি, গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানী,
যেনা- ব্যভিচারসহ কত কিছুইনা হচ্ছে এ রাতে।
বরং এটা একটি অপসংস্কৃতি। থার্টি ফার্স্ট নাইট বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ এবং অশ্লীলতার মহাপ্লাবন। এটি সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি। একজন ঈমানদার মুসলমান ও
রুচিশীল-সচেতন মানুষ কিভাবে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও বেহায়াপনাকে সমর্থন করে তা বোধগম্য নয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাক যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সুরা আলে-ইমরান: ১৩১)
থার্টিফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস
প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন।
প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো।
পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে
২০০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। (সূত্র: ইন্টারনেট)
থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন কি ইসলাম সমর্থিত?
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা: এ রাত্রিকে কেন্দ্র করে চলে অশালীন ও বেহায়াপনার মহোৎসব। যুবতীরা আঁটসাঁট, অশালীন ও অর্ধ নগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা করে।
অথচ এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ওইসব নারী যারা হবে পোষাক পরিহিতা কিন্তু প্রায় নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। (সহিহ মুসলিম: ২১২৮)
বিজাতীয় সাদৃশ্য: থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পূর্ণরূপে বিজাতীয় সংস্কৃতি। এ রাত্রিতে বলে ও ম্যাসেজের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো, আতশবাজি, পটকাবাজি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, ট্যাটো বা উল্কা অংকন, ডিজে পার্টি ও কনসার্ট, নেশা সেবনসহ বিজাতীয় সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্য রাখে। ইসলাম এটি কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (আহমদ, আবু দাউদ-৩৫১২, মিশকাতঃ ৪৩৪৭)
যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারী সমাজ নষ্ট করার নীল নকশা: যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারী সমাজকে নষ্ট করার জন্যই থার্টি ফার্স্ট নাইট বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে।
২০০০ সালের ৩১ শে ২৫ মিনিটে গুলশানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক শ্লীলতাহানি করে ও তার শরীরের বেশীর ভাগ কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।
আর ২০০১ সালের শাওন আখতার বাধনের ক্ষত-বিক্ষত দেহ কে না দেখেছেন? আরও কত বাধন। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় থার্টি ফার্স্ট নাইট একটি যৌন উৎসব। যা তাদের জন্য অসম্মান জনক।
অথচ, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। (সুরা বনী-ইসরাইল: ৩২)
অন্যত্র আছে, (হে নবী!) আপনি (মুমিনদের) বলে দিন: আমার পালনকর্তা সব ধরনের অশ্লীল বিষয়গুলো হারাম করেছেন। (সুরা আরাফ ৩৩)
আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। (সুরা আত-তাহরীম: ৬)
সুতরাং আসুন আমরা নিজের ও নিজের পরিবারকে এই অসামাজিক ও ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে দূরে রাখি।