সেবারু

অভাব দূর করার আমল: কুরআন ও সহীহ হাদিস এর দুআ

কুরআন ও হাদিসের আলোকে দারিদ্রতা ও অভাব দূর করার চমৎকার কিছু সহজ আমল নিয়ে আজকে কথা বলব।
এই আমল সমূহ যা প্রতিদিন পাঠ করার মাধ্যমে পাহাড় সমান অভাব থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
তবে যে কোন দুআ করুন না কেন তার মধ্যে অবশ্যই আন্তরিকতা থাকতে হবে। অনেক লোকের সাথে কথা বলছেন কিংবা চা খাচ্ছেন আর
অভাব দূর হওয়ার দোয়া পাঠ করে যাচ্ছেন এমনটি না করাই ভালো। আপনি যখন আল্লাহর কাছে অভাবের কথা বলবেন আল্লাহ যেন আকুতি মিনতি দেখেই অভাব দূর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাই হোক দারিদ্রতা থেকে মুক্তির আমলসমূহ নিচে আলোচনা করা হল।
আমল গুলো ভালো ভাবে পালন করলে আপনার দারিদ্রতা চিরতরে বিদায় নেবে ইনশাআল্লাহ।

অভাব থেকে মুক্তির জন্য যে দুআটি বার বার পড়বেন

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি, ওয়াজজিল্লাতি, ওয়া আউজুবিকা মিন আন আজলিমা আও উজলিমা।”
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দরিদ্রতা থেকে। এবং আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মানী (জিললতি) থেকে। এবং আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাচ্ছি কাউকে জুলুম করা থেকে অথবা কারো দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।’

দলিল : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং : ১৫৪৪)

আরও পড়ুন: কোরআনে রোগ মুক্তির ৬টি সেরা দুআ

দারিদ্রতা থেকে মুক্তির আরও একটি চমৎকার দোয়া

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা
মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিত)

অভাব থেকে মুক্তির আরও একটি হাদিস

প্রিয় পাঠক, আপনি সত্যিই যদি অভাব দূর করতে চান তবে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করুন।
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা”।

অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

সাবধান! কখনও বলবেন না। ভাই, আমার অভাব দূর করে দেন

হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর অভাব দূর করতে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়, তার অভাব মোচন করা হয় না।
পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে অভাব মোচনের জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় অনিতবিলম্বে আল্লাহ
তাকে তারাতারি বা ধীর গতিতে রিজিক দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদ আহমদ)

সুতরাং অভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য ধৈর্যহার হবেন না। ধীরে ধীরে হলেও আল্লাহ আপনার অভাব মোচন করবেন।

অভাব মোচনে আরেকটি কাজ করুন

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক
সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দারিদ্র মোচনে কোরআনের এই দোয়াটি বার বার পড়ুন

‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলাইনা মাইদাতাম মিনাস্সামায়ি তাকুনু লানা ঈদাল্লি আউয়্যালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ ’(সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদেরকে রিজিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।’(সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

অনলাইনে আরও পড়তে থাকুন কিভাবে অভাব দূর হয়?

নিচের বাক্য গুলো দিয়ে গুগলে সার্চ করুন, আরও অনেক তথ্য পাবেন । তবে সাবধান! তথ্য যেন সঠিক হয়।
বাক্য সমূহ: অভাব দূর করার আমল, রিজিক বাড়ানোর আমল, রিজিক লাভের দোয়া, উপার্জন বৃদ্ধির দোয়া, টাকা পয়সা বৃদ্ধির আমল, সম্পদ বৃদ্ধির দোয়া, আয় উন্নতির দোয়া, আয় রোজগার বৃদ্ধির দোয়া, সম্মান বৃদ্ধির দোয়া, আর্থিক উন্নতির দোয়া, বেকারত্ব দূর করার আমল, টাকা পাওয়ার দোয়া, গায়েবী ধন পাওয়ার দোয়া, দারিদ্র্য দূর করার দোয়া, দারিদ্রতা দূর করার আমল, টাকা পয়সা বৃদ্ধির আমল, যে আমলে অভাব দূর হয়, আয় রোজগার বৃদ্ধির দোয়া, পাহাড় সমান ঋণ মুক্তির দোয়া, ঋণ থেকে মুক্তির টোটকা, ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি, ঋণ থেকে মুক্তির উপায় কি, সুদ থেকে মুক্তির উপায়, ঋণ থেকে মুক্তি লাভের আমল, ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি, দারিদ্রতা থেকে মুক্তির দোয়া।

আরও পড়ুন: শুক্রবারের আমল ও জুমআর দিনের ফজিলত

আশা করা যায় উপরে বর্ণিত আমল গুলো সঠিক ভাবে বিশ্বাসের সাথে পালন করলে ইনশাআল্লাহ অভাব দূর হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার জীবনের প্রতি পদক্ষেপে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার মাধ্যমে অভাবমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।

কোন পরামর্শ বা প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন বা খুব প্রয়োজনে মোবাইল করতে পারেন।
লেখক: আবু জাফর রাজু, পিএইচডি. গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগ: ফেসবুক- আবু জাফর রাজু

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *