বর্তমান সময়ে পড়াশোনার পপুলার সাবজেক্ট হল বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এ সাবজেক্টে পড়াশোনা করে বেকার আছে এমন শিক্ষার্থী খুজে পাওয়াই দুস্কর। বাংলাদেশে বিসিএসসহ অনেক সরকারী চাকুরীর বিজ্ঞাপনে বিবিএ ও এমবিএ উল্লেখ করে দেওয়া হয়।
প্রাইভেট চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রায় সকল কম্পানিতেই এ সাবজেক্ট এর চাহিদা প্রচুর। তাই প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন) ও এমবিএ ( মাস্টার্স অব বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন) হলো ব্যবসায় শিক্ষার ডিগ্রি।
বিবিএ চার বছর মেয়াদী সন্মান ডিগ্র বা Bachelor of Business Administration (BBA). আর এমবিএ হল এক থেকে দেড় বছর ব্যাপী স্নাতকোত্তর বা Master of Business Administration (MBA)।
ব্যাচেলর অব বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন (বিবিএ) কি?
ব্যবসায় শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের প্রথম সোপান হলো বিবিএ বা Bachelor of Business Administration (BBA).
এখানে বেশ কিছু মেজর সাবজেক্ট আছে যেমন, মার্কেটিং, ব্যাংকিং ফিন্যান্স, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, HRM, MIS ইত্যাদি।
বিবিএ ডিগ্রির সংজ্ঞা ইংরেজিতে দিতে গেলে এভাবে দেয়া যায়, The degree is conferred upon a student after four years of full-time study (120 credit hours) in one or more areas of business concentrations. The BBA program usually includes general business courses and advanced courses for specific concentrations.
এমবিএ ভর্তি হবেন কোথায়?
দেশে ব্যবসায় প্রশাসনে অধ্যয়নের জন্য পাইওনিয়র প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ।
তবে আইবিএতে ভর্তি পরীক্ষা একটু ব্যতিক্রম। ইংরেজি, গণিত ও জ্যামিতিতে ভাল দখল থাকলে এখানে চান্স পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী, খুলনা ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ’র অনুরূপ স্বতন্ত্র এমবিএ পড়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে এক্ষেত্রেও আইবিএ স্টাইলেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়।
কোথায় বিবিএ এমবিএ ভর্তি হবেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সকল প্রষ্ঠিানে এ সাবজেক্ট পড়ানো হয়।
ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সম্প্রতি এই কোর্স চালু হয়েছে।
তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ এমবিএ ভর্তি হওয়া যায়
কিকি পড়ানো হয় বিবিএ এমবিএ তে?
ব্যাচেলর অব বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন এর কারিকুলাম এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে ব্যবসায় প্রাক্টিক্যালভাবে শিখতে পারে।
পাশাপাশি বিজ্ঞান, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞান প্রদান করা হয়।
বিবিএ তে বিভিন্ন বিষয়ে প্রধান (Major) বিষয় রয়েছে। সেগুলো হলো :
১. মার্কেটিং
২. হিসাব বিজ্ঞান
৩. ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
৪. ব্যবস্থাপনা
৫. হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা
৬. ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিসটেম প্রভতি
এছাড়াও বিদেশে Bachelor of Science in Business Administration (BSBA) নামে বিবিএ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন বিষয় রেটিং
বর্তমানে বিষয় রেটিং করা হয় চাকরি বাজারের চাহিদা দেখে। আপনি একটি জাতীয় দৈনিক হাতে নিয়ে বসলে দেখতে পাবেন কোন বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি চাকরি বিজ্ঞাপন দিয়েছে সেই অনুসারে আপনিনিজেই বিষয় রেটিং করতেপারবেন। (এটা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে)। বর্তমান রেটিং-
১. মার্কেটিং
২. ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
৩. হিসাব বিজ্ঞান
৪. ব্যবস্থাপনা
৫. হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা
৬. ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিসটেম প্রভতি
দেশে-বিদেশে বিবিএ এমবিএ ভর্তি প্রক্রিয়া:
দেশে অবস্থিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের অধিকারী হতে হয়। ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক অথবা বিজ্ঞান বিভাগের যে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারে।
কেবলমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। যে সকল শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিবিএ ভর্তির সুােগ পায় না তাদের জন্য বেসরারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সুযোগ করে দিয়েছে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করার।
কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার খরচ অত্যন্ত বেশি। তবে কোন শিক্ষার্থীর যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার খরচ চালানো সামর্থ থাকে তবে সে ইচ্ছা করলে সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে বিদেশ থেকে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে।
এক্ষেত্রে দেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বর্তমানে দেশে অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম এ বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে।
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস বিষয়ে ভর্তি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুন-
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ তথ্য…
- কানাডায় স্কলারশিপ ও ভর্তি…
- মালয়েশিয়ায় স্কলারশিপ ও ভর্তি…
সিএ/আইসিএমএ কি? ও পড়াশোনার সুযোগ:
একজন শিক্ষার্থী বিবিএ অথবা এমবিএ শেষ করার পর ইচ্ছে করলে প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জনের জন্য সিএ/আইসিএমএ তে পড়াশুনা করতে পারে।
তবে এসএসসি ও এইচএসসিতে এ+ থাকলে সরাসরি সিএ কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্যের জন্য কাওরান বাজারস্থ সিএ ভবনে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আইসিএমএ পড়ার জন্য বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে যোগাযোগ করতে হবে নীলক্ষেতে অবস্থিত আইসিএমএ ভবনে অথবা www.icmab.org.bd ওয়েব সাইটে অথবা ঢাকার বাইরে অবস্থিত শাখা অফিসগুলোতে।
এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি
এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর একজন শিক্ষার্থী আরও উচ্চতর ডিগ্রির জন্য গবেষণামূলক কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে তিনটি ধাপ রয়েছে।
সেগুলো হলো-এমফিল, পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি। এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর সর্বপ্রথম দুই বছর মেয়াদী এমফিল কোর্সের জন্য ভর্তি হয়। অবশ্য সরাসরি তিন বছর মেয়াদী পিএইচডি প্রোগ্রামেও ভর্তি হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পযৃায়ে কমপক্ষে দুই বছরের শিক্ষকতাসহ আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশনা থাকতে হবে। উল্লেখ্য এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে নিয়মিত (মাসিক/বাৎসরিক)বৃত্তি/অর্থ প্রদান করা হয় কোন কোন ক্ষেত্রে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর একজন গবেষক হওয়ার ইচ্ছে করলে দেশের বাইরে পোস্ট ডক্টরাল গবেষনা করতে পারেন। কেননা আমাদের দেশে পোস্ট ডক্টরাল গবেষনার ব্যবস্থা নেই।
স্কলারশীপ লাভের উপায়
বর্তমানে বিবিএ বা এমবিএ অধ্যয়নকালে দেশে তেমন কোন স্কলারশীপের ব্যবস্থা না থাকলেও বিবিএ অথবা এমবিএতে ভাল রেজাল্ট করতে পারলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রচুর স্কলারশীপ পাওয়া যায়। তবে আইবিএতে অধ্যয়নকালে কিছু স্কলারশীপের ব্যবস্থা আছে।
সেগুলো হলো প্রফেসর এম শফিউল্লাহ স্কলারশীপ (যারা ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পায় তাদের জন্য), নাজির আহমেদ মেমোরিয়াল স্কলারশীপ, প্রফেসর আলিমুর রহমান স্কলারশিপ, রোটারী ক্লাব। DDBL, ICB, BAT, National Cash Register, Young-one, নূরুল হুদা মেমোরিয়াল, সামসুল আরম মেমোরিয়াল, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন স্কলারশীপ।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবিএতে প্রথম বর্ষের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে কিছু ছাত্রকে দ্বিতীয় বর্ষ হতে মেধা বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
বিদেশে বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশন পড়াশোনা
দেশের বাইরে অধ্যয়ন করার জন্য যে সমস্ত স্কলারশীপ পাওয়া যায় সেগুলো হলো-মনবুশো স্কলারশিপ (জাপান), কমনওয়েলথ স্কলারশীপ, ওয়াল্ড ব্যাংক স্কলারশীপ,
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্কলারশীপ প্রভৃতি।
বিবিএ/এমবিএ পর্যায়ে ইংল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশেই স্কলারশীপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যাওয়া যায়।
ইন্টারনেট সার্চ করলে এসব বৃত্তির তথ্য সহজেই উদঘাটন করা সম্ভব। তবে দেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসসমূহে খোঁজ নিলে স্কলারশীপের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়্
বিবিএ সাবজেক্ট চাকুরি
বাংলাদেশ কিংবা বিদেশে বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করলে বেশ দ্রুত চাকুরি পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে প্রাইভেট অর্গানাইজেশনে বিবিএ/এমবিএ’র চাহিদা আকাশচুম্বী। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী, প্রবেশনারী অপিসার, এক্সিকিউটিভসহ অফিসার পদে ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধায় নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার মত মহান পেশায চাকুরির সুযোগ রয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে ভাল ফলাফলের অধিকারী হতে হবে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানী, টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানী, গার্মেন্টস এ চাকুরী পাওয়া যায়।
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আকর্ষণীয় বেতনে উচ্চ পদে চাকুরির সুযোগ রয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি বিবিএ সাবজেক্ট রিভিউ বিষয়ক উপরের লেখাটি আপনার উপকারে আসবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরও কোন জানার থাকলে দয়া করে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারলে খুশি হব। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
যোগাযোগঃ সেবারু,২/৪ ব্লক-জি,লালমাটিয়া,ঢাকা-১২০৭,বাংলাদেশ।০১৭১১-৯৮১০৫১,০১৮৯৭৯৮৪৪২০,০১৮৯৭৯৮৪৪২১।