মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৭ এপ্রিল। এই দিনে বাঙালী জাতি এক নতুন যুগের সূচনা রচনা করেছে।
প্রথম জাতীয় সরকার গঠিত হয় বাংলায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। আর তারই ফলে আজ বাংলায় পালন করা হয় মুজিবনগর দিবস
১৭ এপ্রিল। চলুন জেনে নেই এই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল এর ঘটনা ক্রম।

কিভাবে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে সরকার গঠিত হয়?

১৯৭০ সাল, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের নেতৃত্বে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে তাদের এই জয়কে অস্বীকার করে দেয় পশ্চিম পাকিস্তান সরকার প্রধান।
আর বাংলার এই জয়কে দাবিয়ে রাখতে তারা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দেয়। এই নিয়ে বাঙ্গালীর মনে শুরু হয়
অসন্তোষ। আর পাকিস্তানি শাসকরাও বুঝতে পারে বাংলার জনগনকে আর তারা দমিয়ে রাখতে পারবে না।

যার ফলস্রুতিতে তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে নিরাপরাধ ও নিরস্ত্র বাংলার মানুষের উপর চালায় নির্মম অত্যাচার।
নির্বাচিত বাংলার প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটকে রাখে পাকিস্তানি কারাগারে। তারা কৌশলে বাংলাকে ধ্বংস
করতে চেয়েছিল। তবে তাদের দূরভিসন্ধি টের পেয়ে ২৬ মার্চ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা দেন বাংলাদেশের
স্বাধীনতা। জেলে বসেই তিনি নির্দেশ দেন বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। আর তার সুরক্ষায় যেন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে।

আর তার ফলে ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে বৈদ্যনাত তলায় গঠিত হয় মুজিব সরকার। আর ১৭ এপ্রিল হয় শপথ গ্রহন
অনুষ্ঠান। যাতে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ গ্রহন করেন।

কারা ছিলেন ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারে?

১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে বর্তমানে মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনে অংশ গ্রহন করেন নির্বাচিত প্রতিনিধি দল।
এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করা হয়। তার অনুপস্থিতে উপ- রাষ্ট্রপতি করা হয় সৈয়দ নজরুল
ইসলামকে। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী, এম. মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, ও এম. কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র,
ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রী হিসেবে ঘোষনা করা হয়।

এই সরকারের অধীনে ছিল ১২ টি মন্ত্রনালয়। সেগুলো হলঃ

(১) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
(২) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
(৩) অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
(৪) মন্ত্রিসভা সচিবালয়
(৫) সাধারণ প্রশাসন বিভাগ
(৬) স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়
(৭) তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়
(৮) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
(৯) ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়
(১০) সংসদ বিষয়ক বিভাগ
(১১) কৃষি বিভাগ
(১২) প্রকৌশল বিভাগ

মুজিবনগর সরকার কিভাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতায় ভূমিকা পালন করে?

সরকার গঠনের পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এই মুজিবনগর সরকার জনগনকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য একত্রিত করে। তাদের
আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্তক্ষয়ি স্বাধীনতার সংগ্রামে। আর তাদের যোগ্য নেতৃত্বের ফলেই ৩০
লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে পেলাম আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ। যাতে ৯ মাস দীর্ঘ এই সংগ্রামে সাহস ও দিক নির্দেশনা দেয়
মুজিবনগরের গঠিত সরকার প্রতিনিধিরা। আর তাই ১৬ ডিসেম্বর আসে আমাদের কাংক্ষিত সেই বিজয়।

মুজিব সরকারের এই দিনের গঠিত সরকারের জন্যই আমরা পেলাম আজকের এই মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ। আর তাই এই দিনকে
স্মরণীয় করে রাখতেই মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল পালিত হয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আজকের ২০২২ এর ১৩ এপ্রিল
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালইয় ৩৭ এর ধারায় মুজিবনগরে ১৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।

আশাকরি আপনারা ইতিহাসের এই স্মরনীয় দিনটি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। আর মুজিবনগরকে কেন
আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাও বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের এই নিয়ে কোন মন্ত্যব থাকলে কমেন্ট বক্সে
আমাদের জানাবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *