laptop price in bd

ল্যাপটপ কেনার আগে কি কি জানতে হবে?

ল‍্যাপটপ আমাদের প্রত‍্যেকেরই পছন্দের একটি ডিভাইস। 

ল‍্যাপটপের ব‍্যবহারও এখন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ঘুম থেকে উঠা এরপর পুনরায় ঘুমোতে যাওয়া এর মধ‍্যে আমরা যেমন কম্পিউটার ছাড়া চলতে পারি না। 

ল‍্যাপটপ যেহেতু খুবই হালকা এবং সহজেই যে কোন জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। তাই এর চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

তাই অনেকেই কম দামে ল্যাপটপ সন্ধান করেন সে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন অনায়াসে কোন ঝামেলা ছাড়াই।    

কিন্তু ল‍্যাপটপ কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আর তা না হলে পরতে পারেন মহা বিপদে। কেননা যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ক্রয়ের পূর্বে তার সম্পর্কে সম‍্যক জ্ঞান রাখা অতীব জরুরি।

এছাড়াও ল‍্যাপটপ ক্রয়ের জন‍্যে আপনার আরও কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তাই নিয়েই সাজিয়েছি আমাদের আজকের লেখাটি, তাহলে দেরি না করে চলুন দেখে নেই ল‍্যাপটপ কেনার আগে কি কি বিষয়ে জোর না দিলেই নয়। 

ব্র্যান্ড 

মোবাইলের মতো ল‍্যাপটপের ব্র‍্যান্ডের অভাব নেই। আপনি একটু বাজার ঘুরলেই পেয়ে যাবেন নানান ব্র‍্যান্ডের ল‍্যাপটপ যেমন ডেল, এইচপি, লেনোভো, এসআর, স‍্যামসাং, এম এস আই ইত্যাদি। তবে গুণগত মানের দিক থেকে বাজারে এগিয়ে আছে ডেল এবং আসুস। আসুস বর্তমানে বাজারদর অনুযায়ী অ‍্যাপেল এর সাথে টেক্কা দেওয়ার মতো একটি সর্বোৎকৃষ্ট ল‍্যাপটপ।

তবে এর বাইরেও আপনি চাইলে লেনোভো কিনেতে পারেন। তবে যেটাই কিনুন না কেন প্রত‍্যেকটির দাম নির্ভর করবে কনফিগারেশনের উপর। 

সাইজ 

ল‍্যাপটপ কেনার আগে দ্বিতীয়ত যেই বিষয়টি নিয়ে আপনাকে সবার আগে ভাবতে হবে সেটি হচ্ছে এর সাইজ। আপনি কি ধরণের সাইজের ও মাপের ল‍্যাপটপ চাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করেই আপনাকে সামনে এগোতে হবে। মূলত একটি নোটবুক কেনার ক্ষেত্রেও আমাদের কিংবা আপনার কিছু বিষয় লক্ষ‍্য রাখা উচিত। প্রথমত নোটবুকের ওজন কেমন, এটি কতটা হালকা বা সরু। আবার নোটবুকের মধ‍্যেও নানা ধরণের ও নানা ডিজাইন রয়েছে। আপনার পছন্দমত ও বাজেটের সাথে মিলে এমন একটি নোটবুক বেছে নিতে পারেন বাজারের হাজারো অপশন থেকে। 

একটি ল‍্যাপটপ এর স্কিনের সাইজ মূলত ১১-১২ ইঞ্চির হয়ে থাকে এবং এর ওজন ১.১-১.৫ কেজি। তবে আজকাল ১৩-১৪ ইঞ্চির একদম ফ্ল‍্যাট এবং একদম থিন ল‍্যাপটপ ই সকলের নজর কাড়ে সবার আগে। এর ওজনও খুব একটা বেশি নয় ১.৮ কেজির নিচে হয়ে থাকে। তবে এই ধরণের ল‍্যাপটপ অফিস কিংবা কর্পোরেট জায়গার জন‍্যে অনেকটাই মানানসই। বাড়িতে ব‍্যবহারের জন‍্যে আপনি নিয়ে আসতে পারেন ২.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি ওজনের, বড় ডিসপ্লে বিশিষ্ট ল‍্যাপটপ যা মূলত ১৭-১৮ ইঞ্চির হয়ে থাকে। 

ডিসপ্লে কোয়ালিটি 

ল‍্যাপটপ কেনার আগে আপনার পরবর্তী যেই জিনিসটি সম্পর্কে অবশ‍্যই ধারণা থাকতে হবে সেটি হচ্ছে ডিসপ্লে কোয়ালিটি। কেননা এর উপরেই নির্ভর করছে আপনার কাজের আউটপুট। ভালো মানের ডিসপ্লে কোয়ালিটির ল‍্যাপটপ ব‍্যবহার না করলে চোখের সমস‍্যায় ও ভুগতে হতে পারে। তবে ল‍্যাপটপের ক্ষেত্রে সবার আগে আমার পরামর্শ থাকবে ১০৮০পি অর্থাৎ ফুল এইচডি ডিসপ্লে 

নিতে । এই রেজুলেশনের ডিসপ্লে বাসা কিংবা অফিস সকল ধরণের কাজের জন্যই আদর্শ। 

আপনার বাজেট স্বল্পতার জন‍্যে যদি কোন কারণে ফুল এইচডি স্ক্রিন নিতে না পারেন তাহলে অব্যশই অন্তত এইচডি অর্থাৎ ৭২০পি স্ক্রিনের ল্যাপটপ নেওয়ার চেষ্টা করেন। অবশ‍্য কম বাজেটের ল্যাপটপগুলোতে সাধারণত ৭২০পি ডিসপ্লে থাকে। এগুলো আপনার চোখের জন‍্যেও ভালো। 

জেনারেশন 

ল‍্যাপটপ কেনার আগে জেনারেশন সম্পর্কে ধারণা থাকাটাও অতীব জরুরি। মূলত জেনারেশনের বাংলা অর্থ হলো প্রজন্ম। আর এই জেনারেশন দ্বারা মূলত ল‍্যাপটপটি কোন প্রজন্মের সেটি বুঝানো হয়ে থাকে। আর তাই ল‍্যাপটপ কেনার সময় সেলস এক্সিকিউট কে জিজ্ঞেস করুন এটি কত জেনারেশনের। অবশ‍্যই টেনথ জেনারেশন এর আপডেটের ল‍্যাপটপ ছাড়া অন‍্য কোন কিছু কখনোই ক্রয় করা উচিত নয়। বাজারে আপনি ফোর্থ থেকে টেনথ জেনারেশনের ল‍্যাপটপ পাবেন। কিছু কিছু ল‍্যাপটপে সেভেনথ ও লেখা থাকে। তবে আপনার জন‍্যে সতর্কমূলক বাণী হিসেবে বলবো টেনথ জেনারেশন ছাড়া বা সেভেনথ জেনারেশনের নিচে কখনোই ল‍্যাপটপ কেনা উচিৎ নয়। 

গ্রাফিক্স চিপ

একটি হাইইন্ডের ল‍্যাপটপে মূলত এক ধরণের বিল্ড ইন গ্রাফিক্স সংযুক্ত করাই থাকে। তবে আপনার যদি হাই এন্ডের গেমস খেলার ইচ্ছে থাকে বা বড় ধরণের গ্রাফিক্সের কাজ, এছাড়াও ভিডিও এডিটিং করার প্রয়োজন থাকে তাহলে অবশ‍্যই আপনার প্রয়োজন হবে একটি গ্রাফিক্স চিপ। 

তবে আপনাকে জানিয়ে রাখা ভালো যে ল্যাপটপের কিছু পার্টস পরিবর্তন করা গেলেও গ্রাফিক্স কার্ড একই পরিবর্তন করা সম্ভব না। তাই ল‍্যাপটপের জন‍্যে যদি আপনি একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড/এক্সটর্নাল গ্রাফিক্স কার্ড চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু সময় নিয়েই কিনতে হবে। এর কারণ মূলত ল্যাপটপ গুলো ম্যানুফেকচারিং এর সময় গ্রাফিক্স চিপ সহ/ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তৈরি হয়ে থাকে।

তবে আনন্দের ব‍্যাপার হচ্ছে এখানেও আপনি ডেস্কটপের মতো এনভিডিয়া এবং এএমডি সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড নিতে পারবেন। এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড এর মধ‍্যে আপনি চাইলে জিটিএক্স বা আরটিএক্স সিরিজের কার্ডগুলোও বেছে নিতে পারেন।

আর জিটিএক্স সিরিজের মধ্যে জিটিএক্স ১০৫০ থেকে -জিটিএক্স ১৬৬০ পর্যন্ত পাবেন। এবং আরটিএক্স সিরিজের মধ্যে আরটিএক্স ২০৫০ থেকে শুরু করে আরটিএক্স ২০৮০ পর্যন্ত। তবে আরটিএক্স যাই হোক,  জিটিএক্সের তুলনায় আরটিএক্স সিরিজের ল্যাপটপগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই হয়ে থাকে। 

হার্ডড্রাইভ ও র‍্যাম 

ল‍্যাপটপ কেনার আগে আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন আর সেটি হচ্ছে ল‍্যাপটপের হার্ডড্রাইভ ও র‍্যাম। ল‍্যাপটপ কেনার সময় অবশ‍্যই হার্ডড্রাইভ এর ব‍্যাপারটা ভালোভাবে দেখা উচিত যাতে আপনি আপনায প্রয়োজনীয় ফাইল সংরক্ষণের সুযোগ পান। আর না হলে আপনাকে ফাইল সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেসের অভাবে ভুগতে হবে। অন্তত চেষ্টা চেষ্টা করবেন ২ টেরাবাইটের হার্ডড্রাইভ নিতে। যদি তা নিতে একেবারেই না পারেন তাহলে কমপক্ষে ১ টেরাবাইটের হার্ডড্রাইভ নিবেন।

 আর এতেই আপনি একটি ভালো মানের স্টোরেজ পাবেন। তবে বাজেট একটু বেশি হলে ল‍্যাপটপে এসএসডি স্টোরেজ লাগিয়ে নিতে পারেন। এসএসডি স্টোরেজ আপনার ল‍্যাপটপকে প্রচলিত হার্ডডিস্কগুলোর মতো স্লো করে দিবে না।একটি ২৫০জিবি এসএসডি স্টোরেজের দাভ পড়বে ৫-৮ হাজার টাকা এবং ১ টিবি হার্ডডিস্ক পড়বে ৩-৩৫০০ টাকা। 

এরপরের যেই বিষয়টি আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে সেটি হচ্ছে ল‍্যাপটপের র‍্যাম। আপনি যদি ল‍্যাপটপে একটি স্মুথ পারফরম্যান্স পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ৪ জিবি অথবা তার থেকে বেশি র‌্যামের ল্যাপটপ কিনতে হবে।

আর যদি আপনি হাই ইন্ডের গেইমস বা ভিডিও এডিটং এর মতো কাজগুলো করার চিন্তা মাথায় রাখেন তাহলে আপনার ৮ জিবি বা ১৬ জিবি র‌্যামের প্রয়োজন পরবে। র‌্যামের কেনার আগে ডিডিআর (Double Data Rate) এবং বাস স্পিড এর দিকে  অবশ‍্যই খেয়াল রাখতে হবে।

ব‍্যাটারি 

ল‍্যাপটপের ব‍্যাটারি হচ্ছে একটি ল‍্যাপটপের মূল হোতা। কেননা এর মাধ‍্যমেই আপনার ডিভাইসটির পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র বাড়িতে ব‍্যবহারের জন‍্যে ল‍্যাপটপ কিনতে চাইলে আপনাকে এই বিষয়টি নিয়ে বেশি ভাবতে হবেনা।কিন্তু বাইরে ব‍্যবহারের জন‍্যে কিনতে চাইলে ৭-৮ ঘন্টা ব‍্যাকআপ দিতে পারে এমন ধরণের ল‍্যাপটপ বেছে নিন। 

আর অবশ‍্য ই ল‍্যাপটপ কেনার সময় ব‍্যাটারিতে থাকা রেটিং দেখতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই চেষ্টা করবেন ৪৪Wh-৫০Wh এর ব‍্যাটারি সম্বলিত ল‍্যাপটপগুলো কেনার। এগুলোর মধ‍্যে থাকা বিল্ড ইন ম‍্যাকানিজম আপনাকে বেস্ট পারফরম্যান্সটাই দিয়ে থাকবে। আর হ‍্যা মাথায় রাখবেন ল‍্যাপটপের ব‍্যাটারি যতো বড় হবে আপনার জন‍্যে ঠিক ততই ভালো হবে।

পরিশেষে 

কখনোই পুরনো ল‍্যাপটপ কেনার কথা মাথাতেই আনবেন না। কেননা একে এ ধরণের ল‍্যাপটপ ব‍্যবহৃত অন‍্যদিকে এর সঠিক কনফিগারেশন সম্পর্কে আপনাকে ক্রেতা অবহিত নাও করতে পারেন। আর তাই বাজার ঘুরে বুঝে শুনে সাধারণ বাজেটের মধ‍্যে নতুন ল‍্যাপটপ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর হ‍্যা উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও ল‍্যাপটপের টাচস্ক্রিন, ওজন ও নকশা এবং ওয়‍্যারলেস কানেকশন দেখে নেওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ। 

ওয়ারল‍্যাস কানেকশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখবেন ল‍্যাপটপটিতে ব্লুটুথ 4.0 আছে কিনা। এবং টাচস্ক্রিন এর ক্ষেত্রে অবশ‍্যই আপনাকে উইন্ডোজ ৮ ইন্টারফেজের টাইল ও জেশ্চার বেছে নিতে হবে। এই ধরণের ইন্টারফেজ আপনার ল‍্যাপটপের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে। এইতো এবার উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে সেরে ফেলুন আপনার পছন্দসই একটি ল‍্যাপটপ কেনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *